সাইকেলে সারাদেশ ঘুরে ঢাবি ছাত্রের নজর এখন দক্ষিণ এশিয়ায়

সাইকেল হাতে মো. জহির উদ্দিন‌
সাইকেল হাতে মো. জহির উদ্দিন‌  © টিডিসি ফটো

মো. জহির উদ্দিন‌। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফিন্যান্স বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী। জহির সাইকেল নিয়েই ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলাদেশের ৬৪ জেলা। তার এই যাত্রা ঢাকা জেলা থেকে শুরু হয়ে কক্সবাজার ভ্রমণের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। পুরো দেশ ঘুরতে তার সময় লেগে যায় প্রায় দুই বছর।

ধৈর্য, পরিশ্রম ও প্রবল ইচ্ছার সমন্বয় ঘটিয়ে এ কঠিন কাজটি সহজ করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জহির উদ্দিন‌। তিনি সারাদেশ সাইকেলে ঘুরে ভবিষ্যতে এ সাইকেলেই পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ভ্রমণ ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এরজন্য ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: সাইকেল চালিয়ে সব জেলায় ঘুরলেন ঢাবি ছাত্র আশিক

জহির ভ্রমণ থেকে নতুন কিছু শেখার চেষ্ঠা করেন। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি দেশ ভ্রমণের গল্প বলেছেন। তিনি বলেন, আমি পড়াশোনার পাশাপাশি শখ হিসেবে সাইক্লিং করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর থেকেই ইচ্ছা ছিলো বাংলাদেশটা ঘুরে দেখার, তবে সাইক্লিং করে ঘুরবো তা কখনোও কল্পনা করতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, মূলত, করোনাকালীন সময়ের মাঝামাঝি সময়ে বিরক্তিবোধ থেকেই সাইক্লিং শুরু করেছিলাম। প্রথমে ঢাকা, তারপর নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারিপুর, ফরিদপুর এবং এরপর মানিকগঞ্জ, এভাবেই সাইকেল ভ্রমণের যাত্রা শুরু করি। তারপরই আমার এই নেশাটা পেয়ে বসে। মূলত, পরিবেশের দূষণ না করেও যে ভ্রমণ করা যায় এটাই ছিলো আমার সাইক্লিং এর উদ্দেশ্য। তখন আমার স্লোগান ছিল যে, ‘সাইক্লিং করি, কার্বন নিঃসরণ কমাই’।

আরও পড়ুন: মেয়েদের সাইকেল চালানোর প্রশিক্ষণ দেবে ডাকসু

সাইক্লিং করে দেশ ঘুরার উৎসাহের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার কলেজে থাকতেই ইচ্ছা ছিলো বাংলাদেশকে ঘুরে দেখার। বলতে গেলে উৎসাহটা নিজ থেকেই তৈরি হয়। তবে আমি মাঝেমধ্যে নিউজ পেপারে দেখতাম যে অনেকে বাংলাদেশ ঘুরেছে। কেউ গাড়িতে করে, কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ সাইকেলে করে আবার কেউ বাইকে। ওইসব নিউজ থেকেও অনুপ্রাণিত হতাম।

তিনি বলেন, আমি মূলত ধাপে ধাপে সাইক্লিং করেছি। আর পুরো বাংলাদেশ ঘুরে দেখতে আমার প্রায় দুই বছরের মত সময় লেগেছে। আমি বলবো এই দুই বছর এখন পর্যন্ত কাটানো আমার জীবনের অন্যতম সেরা সময়। বাংলাদেশের নদী, মানুষের ভাষা, খাবার আর এক এক এলাকার নিজস্ব সংস্কৃতি আমার প্রেরণার উৎস ছিলো। ঐতিহাসিক স্থাপনা যেমন ষাট গম্বুজ মসজিদ, সোনা মসজিদ, তাজহাট জমিদার বাড়ি, কান্তজিউ মন্দির, পানাম সিটি, বরেন্দ্র জাদুঘর এই রকম অনেক কিছু যার সম্পর্কে আমি বইয়ে পড়তাম তা নিজ চোখে দেখার সুযোগ হয়েছে।

বাংলার রূপে মুগ্ধ হয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রকৃতি আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছে। সিলেটের চা বাগান, হামহাম ঝর্ণা, ভাটি অঞ্চলের কৃষকদের ধান চাষ, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত, সীমান্ত পাড়ের মানুষের প্রান্তিক জীবন, উপজাতীয় সংস্কৃতি মুগ্ধতার মাত্রা আরো বাড়িয়েছে।

ভ্রমণকালে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার ব্যাপারে জহির বলেন, অনেক সময় এমনও হয়েছে যে আমি রাতে ঘুমিয়েছি এক জেলায় সারাদিন ঘুরলাম আরেক জেলায় আবার পরের রাতে ঘুমিয়েছি অন্য আরেক জেলায়। এটা আমার কাছে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ছিলো। আমি মূলত বেশিরভাগ সময়ই আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী, জুনিয়র বা সিনিয়রের বাসায় থাকতাম। কিছু কিছু সময় সরকারি বাংলোতে ছিলাম আবার সীমান্তবর্তী এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় তাবুতে ছিলাম।

এ ঘোরাঘুরিতে পরিবারেরও সমর্থন পেয়েছেন জহির। তিনি বলেন, মূলত সাইক্লিং ট্যুরটা ব্যক্তিগত উদ্যোগেই আমার করা হয়েছে। টিউশন করে কিছু টাকা জমাতে পেরেছিলাম আর বাবার কাছ থেকে বাকিটা নিয়েছিলাম। তাছাড়াও আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা সবসময়ই মানসিকভাবে সার্পোট করেছে এবং অনুপ্রেরণা দিয়েছে। কেউ কেউ আবার এটাকে পাগলামি বলেও আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। তবে আমার পরিচিত বেশিরভাগ মানুষই আমাকে সাহস জুগিয়েছে।

আরও পড়ুন: স্কুলে যেতে সাইকেল পেল ৩০০ শিক্ষার্থী

সাইকেলে দেশ ভ্রমণে কোন রকম বাঁধা-প্রতিবন্ধকতা এসেছে কিনা তা জানতে চাইলে জহির বলেন, ওরকম কোনো প্রতিবন্ধকতা পাইনি। তবে বাংলাদেশের হাইওয়েগুলোকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছে আমার কাছে। আমি সাতক্ষীরাতে একবার দুর্ঘটনারও শিকার হই। একটা নসিমন সামনে থেকে আমাকে ওভারটেক করতে গেলে সাইকেলের হেন্ডেল নসিমনের বডিতে লাগার সাথে সাথে আমি পড়ে যাই। সৌভাগ্যবশত খুব একটা ব্যথা পাইনি।

সবশেষে সাইকেল ভ্রমণের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জহির আরও বলেন বলেন, আমার আপাতত সাইকেলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, নেপাল ও ভুটান যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আর ভবিষ্যতে যদি সুযোগ হয় সার্কভুক্ত সবগুলো দেশও সাইকেলে ঘোরার ইচ্ছা আছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence