বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়ায় যাদের সহপাঠী হতে পারিনি, ক্যাডার হয়ে তাদের সহকর্মী বানালাম

জাফর আহাম্মদ
জাফর আহাম্মদ  © টিডিসি ফটো

৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী জাফর আহাম্মদ। মধ্যবিত্ত পরিবারে তার বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপ থেকে চট্টগ্রামে এসে শুরু করেন তার জীবনযুদ্ধ। কর্মজীবনে পেয়েছেন একাধিক সরকারি চাকরি। শেষে হয়েছেন বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারও।

জাফরের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার হামিদুল্লাহ গ্রামে। তার বাবার নাম জাকের হোসেন। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। জাফর তার প্রাথমিক গামছাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবং মাধ্যমিক সুখচর মফিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পাস করেন। পরবর্তীতে দ্বীপ ছেড়ে চলে আসেন চট্টগ্রাম শহরে এবং উচ্চমাধ্যমিকের জন্য ভর্তি হন সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তি হন।

তিনি ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে ২১তম হয়েছেন। স্নাতক ৩য় বর্ষে এসে সিদ্ধান্ত নেন বিসিএস দেওয়ার। তিনি বলেন, উচ্চ মাধ্যমিক অবধি আমি বিজ্ঞাম বিভাগের ছাত্র ছিলাম। সবার মত আমারও মেডিকেল কিংবা বুয়েট লক্ষ্য ছিল। কিন্তু গ্রাম থেকে হঠাৎ শহরের কলেজে এসে সঠিক গাইডলাইনের অভাবে উচ্চমাধ্যমিকে ৪.৯০ পাওয়া, বুয়েট মেডিকেলে চান্স না পাওয়া—এসব আমার ভেতরে চাপা ক্ষোভ হিসেব কাজ করতো। স্নাতক ৩য় বর্ষে এসে বিসিএস দেব বলে সিদ্ধান্ত নিই। আমার আব্বুর স্বপ্ন ছিল আমি ডাক্তার হব। সেটা পূরণ করতে পারিনি। পরবর্তীতে বাবা সব ভুলে গিয়ে বিসিএস দিতে অনুপ্রেরণা দিলেন। আলহামদুলিল্লাহ আব্বুর এই স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি।

ছোটবেলা থেকে ভালো ছাত্র হিসেবেই পরিচিত ছিলেন জাফর। মেধাগুণে পেয়েছেন সরকারি-বেসরকারি একাধিক স্কলারশিপ। তাই তার উপর সবার আশাও অনেক বেশি ছিল। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং ভর্তি পরীক্ষায় তিনি সবার সে আশা মেটাতে পারেননি। জানান, তখন থেকেই একপ্রকার জেদ কাজ করত তার মধ্যে। তিনি বলেন, তৃতীয় বর্ষে অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি এক প্রকার জেদ নিয়েই আমি আমার হারানো অতীত ফিরে পাওয়ার জন্য একাগ্রচিত্তে বিসিএস প্রস্তুতি নিতে শুরু করি।

তিনি বলেন, সাথে আব্বুর স্বপ্ন পূরণের বাসনা তো ছিলই। একটু আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করায় আমি বিষয়গুলোতে গুছিয়ে প্রস্তুতি নিতে পেরেছিলাম। আগে শুরু করায় অ্যাকাডেমিক এবং চাকরির পড়া ব্যালেন্স করতেও আমার কষ্ট হয়নি। আমার বিসিএস যাত্রার শুরু থেকে শেষ অবধি যদি আমি এক লাইনে বলি, তাহলে বলব ‘বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সময় আমি যাদের সহপাঠী হতে পারিনি, আমার অদম্য ইচ্ছা, পরিশ্রম এবং সবার দোয়ায় এখন তাদের সহকর্মী বানাতে চলেছি।’

বিসিএস সফলতায় নিজের অনুভূতি নিয়ে জাফর আহাম্মদ বলেন, অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। রেজাল্টের পুরোদিন অস্থিরতায় কাটিয়ে সন্ধ্যার আগে ফলাফলের পিডিএফে নিজের রেজিস্ট্রেশন নম্বর যখন দেখেছিলাম, তখন আমার পুরো শরীর কাঁপছিল। যে স্বপ্ন এতদিন দেখেছিলাম, সে স্বপ্ন বাস্তবে ধরা দিয়েছে— এটা ভাবতেই অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল।

বাবা-মা, ছোট ভাইয়ের অনুপ্রেরণা ও দোয়া-পরিশ্রম করতে সাহস জুগিয়েছিল জাফর আহাম্মদকে। তিনি বলেন, তিনজন মানুষ আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আমার বাবা আমার সেই ছোটবেলা থেকে পড়াশোনা সচেতন মানুষ। নিজে বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি। কিন্তু আমাকে যেকোনো ভাবেই হোক তিনি পড়াশোনা করাবেন, এরকম লক্ষ্য ছিল তার। আর আমার মা বিসিএস পরীক্ষা কী সেটা বুঝেন না। কিন্তু জানেন উনার ছেলে কোনো একটা পরীক্ষার জন্য মন প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছে। আর সেই চেষ্টায় সফল হওয়ার জন্য সবসময়ই তিনি দোয়া করতেন, সাহস দিতেন। আমার ছোট ভাই সবসময়ই আমার প্রস্তুতি, পরীক্ষা এসবের খবর নিয়েছে। এই তিনজন মানুষের অনুপ্রেরণা ও দোয়া আমাকে পরিশ্রম করতে সাহস জুগিয়েছে।

বিসিএসের দীর্ঘ যাত্রায় পরিশ্রমের সাথে সাথে অনেক ধৈর্যেরও প্রয়োজন আছে। নতুনদের উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, আপনি আগে লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। সত্যিকার অর্থেই আপনি বিসিএস দেবেন কিনা, সে লক্ষ্য স্থির করুন। কিন্তু ভেঙে পড়া যাবে না। নিজের লক্ষ্যে অটুট থেকে পরিশ্রম চালিয়ে যেতে হবে। পড়াশোনায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। একদিন ৮-১০ ঘণ্টা পড়ে আরেকদিন মোটেও পড়লেন না, এরকম না করে প্রতিদিন অল্প অল্প করে হলেও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে পড়তে হবে।

প্রশাসন ক্যাডার ছিল জাফরের প্রথম চয়েজ। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এই ক্যাডারে অনেক সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি একদম মাঠ পর্যায়ে মানুষের জন্য কাজ করা যায়। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করে দেশের এবং দেশের মানুষের সেবা করে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে একটু হলেও অবদান রাখা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence