অন্ধত্বকে জয় করে জ্ঞানের আলো ছড়াতে চান স্বাধীন
- জোবায়ের আহমেদ, জাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:৪২ PM , আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৩ PM
কেউ চোখ থাকতেও অন্ধ। আবার কেউ অন্ধ হয়েও চেতনার আলোয় আলোকিত। মাত্র ছয় মাস বয়সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় হঠাৎই দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। চিরদিনের জন্য নিভে যায় পৃথিবীর আলো, থমকে যায় জীবন। তবু অদম্য ইচ্ছা শক্তি দিয়ে জয় করতে চান অন্ধত্বকে। হতে চান শিক্ষক। নিজে অন্ধকারে থেকেও জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে চান অন্যকে। তাই সকল প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে ছুটে চলেছেন খুলনার ফুলতলার স্বাধীন হোসেন। প্রমাণ করতে চান অন্ধরা বোঝা নয়; বরং সম্পদ।
নিজের স্বপ্নকে পূরণ করতে গত রবিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্বাধীন হোসেন। তার ইচ্ছা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হওয়ার।
পারিবারিক দৈন্যদশা, নানা-প্রতিবন্ধকতার পরও লেখাপড়ায় সফল হয়ে স্বাধীন একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চান। তার বাবার নাম বাবুল হোসেন ও মায়ের নাম ফাতেমা বেগম। স্বাধীনের পরিবার খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণ ভবানীপুর গ্রামে বসবাস করে। তার মা গৃহিণী এবং বাবা গ্রামে সাইকেল মেরামতের কাজ করেন। দুই ভাই-বোনের পরিবারে স্বাধীন ছোট।
খুলনার গোয়ালখালি পিএইচটিসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও নড়াইল আশার আলো কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন স্বাধীন। নিউমোনিয়ার ভুল চিকিৎসায় দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর থেকেই অন্ধত্বের সঙ্গে লড়াই করে পড়াশোনা করে আসছেন তিনি। তবে জীবনে পরনির্ভরশীলতা তার কখনোই পছন্দ না। অদম্য ইচ্ছা শক্তি দিয়ে নিকষ অন্ধকারের মধ্যেই আলো জ্বালাতে চান নিজেই। এই ইচ্ছা শক্তির বলে অংশগ্রহণ করেছেন স্কুল ও কলেজ জীবনের সকল প্রতিযোগিতা ও পাবলিক পরীক্ষায়। পেয়েছেন সাফল্যও। এখন তার চোখে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন।
স্বাধীন জানায় এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ পার করে এ পর্যন্ত আসতে হয়েছে তার। তবুও কখনো হাল ছাড়েনি সে।
স্বাধীন বলেন, ‘শৈশবকালে জীবনের এ বিপর্যয়ের পর থেকেই আমার জীবন থমকে গিয়েছিল। তারপর থেকে সমাজে চলতে নানা বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে নিজেকে আমি কখনও সমাজের কটু কথার চোখ রাঙ্গানিতে পিছিয়ে পড়তে দেইনি’।
স্বাধীন জানায়, দৃষ্টিশক্তি হারাবার পর থেকেই তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। আর এই অন্ধকারকে জয় করার জন্য তার মধ্যে চেপে বসে এক জেদ। তখন থেকেই পণ করেন নিজে অন্ধকারে থেকেও শিক্ষক হয়ে অন্যের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়াবেন।
স্বাধীন বলেন, ‘শিক্ষাজীবন শেষ করে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই। ইচ্ছে আছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়ার। জাহাঙ্গীরনগর ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর গুচ্ছতে পরীক্ষা দিবো। আমার আত্মবিশ্বাস আছে, আমি আমার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পরবো। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’
ভর্তি পরীক্ষা দিতে স্বাধীনের প্রয়োজন ছিল শ্রুতিলেখকের। শ্রুতিলেখক সহ তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া-আসার ব্যবস্থা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে গড়ে ওঠা সংগঠন ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ)।
সংগঠনটির সভাপতি সজীব চৌধুরী আবিদ বলেন, প্রতিবছরই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ভর্তিচ্ছুদের সর্বোচ্চ সহায়তার জন্য আমরা হেল্প ডেস্কের ব্যবস্থা করে থাকি। এবারও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাদের মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়েছে। আমরা তাদের সকল প্রকার সহযোগিতা করেছি। তারাও আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন শিক্ষার্থীর জন্য পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট সহ একাডেমিক সকল কাজে সহায়তা করে থাকি।