নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল নয়, প্রশিক্ষণ-সংশোধন স্থগিত

নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল নয়, প্রশিক্ষণ-সংশোধন স্থগিত
নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল নয়, প্রশিক্ষণ-সংশোধন স্থগিত  © ফাইল ছবি

নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল নয় বরং এর অধীনে কর্মশালা, প্রশিক্ষণ, পরিমার্জন ও সংশোধন কাজ স্থগিত করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। শনিবার (১০ আগস্ট) এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের নামে গুজব ছড়াতে থাকে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) স্কিম শাখার পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলীর সাথে। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, আমরা এখনও এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। এটি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ‍সুযোগ নেই। তবে আমরা এখনও স্থগিতের কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি।

নতুন শিক্ষাক্রমে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় পাঠদান শুরু হয়েছিল চলতি বছরের প্রথমদিন। শুরুতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম এবং বাকি শ্রেণিগুলোতে ২০২৪ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে এই শিক্ষাক্রম চালুর লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের প্রচলিত শিক্ষায় আমূল পরিবর্তনের মূল কারিগর অর্থাৎ শিক্ষকরা যাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সঠিক ও প্রয়োজনীয় দক্ষতার সাথে পঠন-পাঠন সম্পন্ন করতে পারেন, সেজন্য শুরুতেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এতে শিক্ষাক্রম ও অন্যান্য কার্যক্রমের তদারকি করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। 

আরও পড়ুন: একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে নতুন শিক্ষাক্রমের বৈশ্বিক গুণ-মান অর্জন

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের শুরুতে চলতি বছরের গোড়ার দিকেই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শেষ করে দেশের মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের গুরুত্বপূর্ণ দুই প্রতিষ্ঠান মাউশি ও এনসিটিবি। সরকারের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের শুরুতে বদলে যাওয়া শিখন ও মূল্যায়ন কাঠামোয় শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ নেন দেশের মাধ্যমিক স্তরভিত্তিক শিক্ষালয়গুলোর দুই লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি শিক্ষক। নতুন শিক্ষাক্রমের এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম থেকে বিভিন্ন কারণে তখন বাদ পড়েছিলেন প্রায় এক লাখ ২০ হাজারের মতো শিক্ষাগুরু। অবশ্য নতুন উদ্যোগে প্রশিক্ষণ পাবেন বাদ পড়া শিক্ষকরা।

চলতি নতুন শিক্ষাক্রমটি প্রণয়ন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। আর মাধ্যমিকের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ দক্ষতা উন্নয়ন ও বাস্তবায়নের কাজটি করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এবারের নতুন শিক্ষাক্রমে জোর দেয়া হচ্ছে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন-পঠন ও মূল্যায়নকে। এতে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিদ্যমান পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হওয়ার কথা রয়েছে। 

এতে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রথাগত কোনো পরীক্ষা রাখা হয়নি। আর দুটিই থাকছে পরবর্তী শ্রেণিগুলোর মূল্যায়নের পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রমে। পাশাপাশি বাদ দেয়া হয়েছে এখনকার মতো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও। যা শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে নতুন শিক্ষাক্রমে।

আরও পড়ুন: ৪০৬ কোটি ব্যয়ে সোয়া ৪ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেবে মাউশি

এর আগে গত বছরের মে মাসে নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুমোদন দেয় সরকার। এরপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে পথরেখা দেয় এনসিটিবি। এতে বলা হয়, মাধ্যমিক স্তরে ৬৪ জেলায় প্রতি বিষয়ে তিনজন করে মূল প্রশিক্ষক বা মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করা হবে। তাঁরা আবার প্রতিটি উপজেলায় প্রতি বিষয়ে তিনজন করে শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেবেন।

২০২১ সালের মে মাসে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন এনে প্রণয়ন করা শিক্ষাক্রমের রূপরেখাটি অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিদ্যমান পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হবে। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না, পুরোটাই মূল্যায়ন হবে বছরব্যাপী চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। পরবর্তী শ্রেণিগুলোর মূল্যায়নের পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রম—দুটোই থাকছে।

নতুন নিয়মে এখনকার মতো করে হবে না এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে। প্রতি শিক্ষাবর্ষ শেষে বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষা হবে। এরপর এই দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।

আরও পড়ুন: নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পরিবর্তন হবে চাকরির প্রশ্ন, পরীক্ষাও: শিক্ষামন্ত্রী

এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমে রাখা হয়নি দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা। এক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক নাকি ব্যবসায় শিক্ষায় পড়বেন—তা ঠিক হবে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে গিয়ে। সেজন্য ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলকভাবে পড়ানো হবে ১০টি অভিন্ন বিষয়। চলমান শিক্ষা কাঠামোয় এখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন বিষয় পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার মতো বিভাগ নির্ধারণও বর্তমানে ঠিক হয় নবম শ্রেণিতে গিয়ে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণি ও ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য নির্ধারিত কিছুসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলকভাবে (পাইলটিং) চালু রয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণিতে তা পর্যায়ক্রমে চালুর সুযোগ রাখা হয়েছে ক্রমান্বয়ে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি; ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি; ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। এরপর উচ্চমাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।

তখন এনসিটিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বিগত বছরের শেষ দিকে এবং চলতি বছরের শুরুতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের কাজ শেষ করেছে মাউশি। যেহেতু নতুন শিক্ষাক্রমে শিখনভিত্তিক মূল্যায়ন এবং প্রথাগত ধারার বাইরে যাওয়া হয়েছে। ফলে সেখানে শিক্ষককে বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ দেয়া হয়েছে। সেজন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। শিক্ষকরা যাতে প্রশিক্ষণের বাইরে না থাকেন—সেজন্য নতুন করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং এতে বাদ পড়া সকল শিক্ষকদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ