আন্দোলনকারীদের হত্যায় ‘লেথাল ওয়েপন’ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাসিনা, কী এটা?

জুলাই আন্দোলনে গুলি করছে পুলিশ
জুলাই আন্দোলনে গুলি করছে পুলিশ  © সংগৃহীত

জুলাই  গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর লেথাল ওয়েপন বা প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার ও নির্বিচারে গুলি চালাতে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনটাই উঠে এসেছে তার একটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপে। ফাঁস হওয়া অডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করেছে বিবিসি আই। অডিওতে হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘তাদের ওপেন নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি, এখন লেথাল ওয়েপন ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে, সোজা গুলি করবে’।

শেখ হাসিনার দেওয়া নির্দেশে ‘লেথাল ওয়েপন’ শব্দটি সাধারণ মানুষের কাছে অপরিচিত। আসুন জেনে নেই ‘লেথাল ওয়েপন’ কী-

‘লেথাল ওয়েপন’ শব্দটি বলতে বুঝায় প্রাণঘাতী অস্ত্র। লেথাল ওয়েপন বলতে বোঝানো হয় এমন সব অস্ত্র, যা কারও শরীরে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে কিংবা তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে। এর মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র, ছুরি, বিস্ফোরক অন্তর্ভুক্ত। আইনি প্রেক্ষাপটে, সংজ্ঞাটি এখতিয়ার অনুসারে পরিবর্তিত হতে পারে, তবে সাধারণত মারাত্মক ক্ষতি করতে সক্ষম এমন যেকোনো কিছু লেথাল ওয়েপনের অন্তর্ভুক্ত থাকে।

লেথাল ও নন-লেথাল অস্ত্রের মধ্যে পার্থক্য অনেক। যেমন, রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস বা সাউন্ড গ্রেনেডকে সাধারণত নন-লেথাল বা অপ্রাণঘাতী অস্ত্র হিসেবে ধরা হয়। এসবের উদ্দেশ্য মানুষকে কাবু করা, ছত্রভঙ্গ করা বা সাময়িকভাবে অক্ষম করে রাখা। কিন্তু বাস্তবতা হলো—যখন এসব অস্ত্রের ব্যবহার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, বা তা খুব কাছ থেকে কিংবা ভুল স্থানে প্রয়োগ করা হয়, তখন সেগুলোও হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী।

লেথাল ওয়েপনের বা প্রাণঘাতী অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে, আগ্নেয়াস্ত্র যেমন-রাইফেল, শটগান, হ্যান্ডগান, মেশিনগান ইত্যাদি। এছাড়াও রয়েছে, ছোরা, সুইচব্লেড, ব্যালিস্টিক ছুরি, তরবারি। বিস্ফোরকের মধ্যে রয়েছে, বোমা, গ্রেনেড ইত্যাদি। এছাড়াও যেসব জিনিসপত্র গুরুতর আঘাত বা মৃত্যু ঘটাতে পারে, যেমন নির্দিষ্ট ধরণের রাসায়নিক পদার্থও লেথাল ওয়েপনের অন্তর্ভুক্ত।

লেথাল ও নন-লেথাল অস্ত্রের মধ্যে পার্থক্য
লেথাল ও নন-লেথাল অস্ত্রের মধ্যে পার্থক্য অনেক। যেমন, রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস বা সাউন্ড গ্রেনেডকে সাধারণত নন-লেথাল বা অপ্রাণঘাতী অস্ত্র হিসেবে ধরা হয়। এসবের উদ্দেশ্য মানুষকে কাবু করা, ছত্রভঙ্গ করা বা সাময়িকভাবে অক্ষম করে রাখা। কিন্তু বাস্তবতা হলো—যখন এসব অস্ত্রের ব্যবহার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, বা তা খুব কাছ থেকে কিংবা ভুল স্থানে প্রয়োগ করা হয়, তখন সেগুলোও হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী। বিশেষত চোখে রাবার বুলেট লাগলে অন্ধত্ব, কিংবা বুকে টিয়ার শেলের আঘাতে মৃত্যু—এমন নজির আগেও ছিল, এবারও দেখা যাচ্ছে।

৭.৬২ এমএম চায়নিজ রাইফেল হাতে পুলিশ/এপি

 

এদিকে শেখ হাসিনার লেথাল ওয়েপন ব্যবহার নিয়ে ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেন, ‘এই রেকর্ডিংগুলো শেখ হাসিনার ভূমিকা প্রমাণে গুরুত্বপূর্ণ। এটি পরিষ্কার, নির্ভরযোগ্য ও অন্যান্য তথ্য-প্রমাণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’ তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছেন।

বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টের ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬০ জন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ মুখপাত্র বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে কিছু সদস্য অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে জড়িয়ে পড়েছিল। এ ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত চলছে।’

শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে গত মাসে। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যার নির্দেশ, বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও উসকানির অভিযোগ আনা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার তার প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ জানালেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। আন্তর্জাতিক আইনজীবী ক্যাডম্যানের মতে, হাসিনার দেশে ফেরার সম্ভাবনা কম।


সর্বশেষ সংবাদ