জাতীয়করণ থেকে বাদ ২৫ মডেল বিদ্যালয়, বৈষম্যের অভিযোগ

শিক্ষা মন্ত্রণালয়
শিক্ষা মন্ত্রণালয়  © ফাইল ছবি

উপজেলা পর্যায়ে গঠিত দেশের সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন ৩১৫টি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৫টি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা সদরের নিকটবর্তী ও ফলাফলে শ্রেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও এসব প্রতিষ্ঠানকে সরকারিকরণের আওতায় আনা হয়নি। এতে এক ধরনের বৈষম্য তৈরির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় শিক্ষক, অভিভাবক ও সচেতন মহল অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে উপজেলা পর্যায়ে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকা উপজেলাগুলোর জন্য একটি করে মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্ধারণ করা হয়। এসব বিদ্যালয়ে চারতলা ভবন, উন্নত আসবাবপত্র, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার ল্যাব, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমসহ আধুনিক শিক্ষার যাবতীয় সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। এসএসসি, জেএসসি ও পিইসি পরীক্ষাও এসব বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ফলাফলেও প্রতিষ্ঠানগুলো উপজেলায় সেরা অবস্থানে রয়েছে।

কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ কর্তৃক পছন্দের ভিত্তিতে অযোগ্য বিদ্যালয়গুলোকে সরকারিকরণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ঘুষ, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে প্রকৃতপক্ষে যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো বঞ্চিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, বিগত সরকারের আমলে অনেক বিষয় রাজনৈতিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যার কারণে অনেক বিদ্যালয়ের যোগ্যতা না থাকলেও তাদের জাতীয়করণের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই ২৫টি প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক বিবেচনায় বাদ পড়তে পারেন। বিষয়টি তাদের নজরে সেভাবে আনা হয়নি। যার কারণে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (মাধ্যমিক-২) মো. হেলালুজ্জামান সরকার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘মডেল বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণ নিয়ে নতুন কোনো তথ্য নেই। ২৫টি বিদ্যালয় কেন তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, তাদের যোগ্যতায় কোনো ঘাটতি রয়েছে কি-না সে বিষয়গুলো দেখতে হবে। এরপর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’

প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলছেন, মডেল প্রকল্পভুক্ত হয়ে সব ধরনের সরকারি বিনিয়োগ তারা পেয়েছেন। পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলেও মডেল বিদ্যালগুলো শ্রেষ্ঠ। তারপরও জাতীয়করণ থেকে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ যাওয়া ২৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনেকগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে প্রতিষ্ঠিত। জাতীয়করণের জন্য তালিকাভুক্ত হলেও অজানা কারণে প্রজ্ঞাপন থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম বাদ পড়েছে।

তারা বলছেন, এসব বিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। অথচ সরকারিকরণের তালিকা তৈরির সময় এসব বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। বর্তমান সরকারের শিক্ষাবান্ধব অবস্থান ও আন্তর্জাতিক মানে শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তরের অঙ্গীকারের প্রেক্ষিতে বঞ্চিত এই ২৫টি বিদ্যালয়কে দ্রুত জাতীয়করণ করা সময়ের দাবি বলে মনে করছেন শিক্ষক সমাজ ও অভিভাবকরা। শিক্ষা ক্ষেত্রে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা ও বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হলে জাতীয়করণ প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মানদণ্ড অনুসরণ করা আবশ্যক।

‘জাতীয়করণ বঞ্চিত মডেল প্রতিষ্ঠান’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আলমগীর হোসেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নতুন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারিকরণ হলেও জাতীয়করণ বঞ্চিত মডেল প্রতিষ্ঠান গুলোর দিকে সরকারের কোন মনোযোগ নেই। মডেল বিদ্যালয়গুলোর ফলাফল ভালো, শিক্ষার মান, অবকাঠামো সব দিক থেকেই এগিয়ে রয়েছে। রাজনীতির বলি হয়েছি আমরা। অন্তর্বর্তী সরকার সব বৈষম্য দূর করে মডেল বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণের উদ্যোগ নেবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি। 

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি মুন্সীগঞ্জের লৌহজং মডেল পাইলট বিদ্যালয়ে চাকরি করি। প্রতিষ্ঠানটি পাল বংশীয় জমিদার কর্তৃক ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্বীকৃতি প্রাপ্ত। ১৪১ বছর প্রতিষ্ঠানের বয়স। উপজেলা পর্যায়ের প্রথম ছিল। প্রতিষ্ঠানটি সরকারি হয়নি কেবলমাত্র রাজনৈতিক কারণে। শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার তা সত্ত্বেও  উপজেলা পর্যায়ের সেরা মডেল প্রতিষ্ঠান গুলোকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে জাতীয়করণ হতে বঞ্চিত করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার, যা আমাদেরকে চরমভাবে ব্যথিত করে।

জাতীয়করণবঞ্চিত ২৫টি মডেল বিদ্যালয় হলো— শরীয়তপুরের ড্যামুডা আলহাজ্ব ইমাম উদ্দিন মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর হাফেজ আব্দুর রাজ্জাক পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, নরসিংদীর পলাশ থানা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী কলেজিয়েট মডেল স্কুল, মানিকগঞ্জের ঘিওর মডেল পাইলট হাই স্কুল, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট কে.সি. পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ, গাইবান্ধার বুড়াইল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ, শেরপুরের নকলা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, শেরপুরের আব্দুল হাকিম স্মৃতি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, বরিশালের বাকেরগঞ্জ জীবন সিং ইউনিয়ন মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থানা মডেল পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পটুয়াখালীর দুমকি আপতুননেছা খাতুন মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মেহেরপুরের গাংনী পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রাজাপুর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার কুমার খালি এম এন মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়,  বাগেরহাটের পেরিখালি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়,  খুলনার বটিয়াঘাটা হেড কোয়ার্টারস পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নওগাঁর জাহাঙ্গীরপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, সিরাজগঞ্জের ধানগরা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, নাটোরের লালপুর শ্রী সুন্দরী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, নওগাঁর মান্দা শ্যামচাঁদ মডেল উচ্চ বিদ্যালয় এবং চাঁদপুরের নিজমেহার মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ