উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডায় যেতে যা জানা প্রয়োজন

উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডা
উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডা  © সংগৃহীত

কানাডা অনেকটাই অভিবাসীদের ওপর নির্ভরশীল। তাই পড়াশোনার শেষে সেখানে রয়েছে বেশ ভালো চাকরির সুযোগ।উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে আরেকটি পছন্দের গন্তব্য কানাডা। প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী স্কলারশিপ নিয়ে বা নিজস্ব অর্থায়নে কানাডায় পড়তে যাচ্ছে।তাই কানাডার উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে জানতে অনেকে বেশ আগ্রহী। আসুন জেনে নিই সেরকম কিছু তথ্য-

কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক করার সুযোগ: বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থীই স্নাতক করতে কানাডা যাচ্ছেন।এ-লেভেল বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করেই আবেদন করা সম্ভব। তবে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে সঠিক তথ্য নিয়ে আবেদন করা উচিত।

কানাডায় পড়াশোনার ধরন: কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা মূলত দুই ধরনের শিক্ষার জন্য আসেন—গবেষণাভিত্তিক ও কোর্স-বিষয়ক পড়ালেখা। কোর্সভিত্তিক পড়ালেখায় বৃত্তির সুযোগ বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নেই বললেই চলে। কিছু কিছু কোর্স আছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা কো-অপ করতে পারেন। কো-অপ এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত কোনো কর্মক্ষেত্রে কিছুদিনের জন্য কাজ করে অর্থ উপার্জন করা যায়। এই পদ্ধতির সুবিধা হলো ডিগ্রির পাশাপাশি কাজের অভিজ্ঞতাও হয়ে যায়। তবে এ সুযোগ তুলনামূলক কম। অন্যদিকে গবেষণাভিত্তিক প্রোগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এনট্রান্স স্কলারশিপ, ফরেন স্টুডেন্ট স্কলারশিপসহ নানা সুযোগ থাকে। কোনো সুযোগ না পেলেও গবেষণা সহকারী বা শিক্ষকদের সহকারী হিসেবে কিছু সুবিধা পাওয়া যায়।

স্কলারশিপের সুযোগ: একাডেমিক ফলাফল ও গবেষণার অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ততা এবং আইইএলটিএসের স্কোরের ভিত্তিতে সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শিক্ষার্থীরা নানা তহবিল পেয়ে থাকেন। তবে স্কলারশিপের সুযোগ মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করে। এছাড়া কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ আছে। অন্টারিও প্রদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা অন্টারিও গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ প্রোগ্রাম নামের বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারছেন। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই অন্টারিও প্রদেশেরই কোনো না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে। এছাড়াও কুইবেক প্রভিন্সিয়াল গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ, অন্টারিও ট্রিলিয়াম স্কলারশিপসহ নানা বৃত্তি শিক্ষার্থীদের জন্য চালু আছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা শাস্ত্রী ইন্দো-কানাডিয়ান ইনস্টিটিউট, কানাডিয়ান কমনওয়েলথ স্কলারশিপ ও ফেলোশিপ প্ল্যানেও আবেদন করতে পারেন।

স্কলারশিপের জন্য যোগ্যতা: কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ন ভিন্ন সরকারি স্কলারশিপের সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। এসব স্কলারশিপের ক্ষেত্রে আবেদনের যোগ্যতাও ভিন্ন ভিন্ন। তবে যে স্কলারশিপের জন্যই আবেদন করুন না কেন, বাংলাদেশে আপনি কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েছেন, ফলাফল কেমন, এগুলো বিবেচনা করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে যুক্ততা, গবেষণায় সংশ্লিষ্টতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়-ভেদে ভিন্ন ভিন্ন আইইএলটিএস স্কোরকে ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই আইইএলটিএসে অন্তত ৬.৫ স্কোর চায়।

আরও পড়ুন: উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যেতে যেসব বিষয় জানা প্রয়োজন

আইইএলটিএস স্কোরের গুরুত্ব: কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে আইইএলটিএস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডায় যাওয়ার কথা ভাবছেন, তাদের আগে থেকেই আইইএলটিএসের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। শুধু বৃত্তি বা ভর্তির জন্য নয়, ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রেও এটির গুরুত্ব আছে। যারা উচ্চশিক্ষার জন্য না গিয়ে অভিবাসনের জন্য কানাডায় যেতে চান, তাদেরও আইইএলটিএসের জেনারেল স্কোর উপস্থাপন করতে হয়।

কানাডায় জীবনযাত্রার ব্যয়: কানাডায় প্রদেশভেদে কিংবা পরিবেশভেদে জীবনযাত্রার ব্যয় ভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয় ডরমিটরিতে থাকলে এক রকম খরচ, আবার আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে রুম ভাগ করে থাকলে খরচ আরেক রকম। অন্টারিও প্রদেশের অটোয়া শহরে একজন শিক্ষার্থী ১২০০-১৩০০ কানাডিয়ান ডলারে খুব ভালোভাবে চলতে পারে। একই সময়ে নিউ ব্রান্সউইকের ফ্রেডরিকটনে এই খরচ হয়তো ১০০০-১১০০ ডলার। আবার টরন্টো বা ভ্যাঙ্কুভারে ১৯০০-২০০০ ডলার খরচ হয়ে যায়।

স্কলারশিপ ছাড়া পড়ার খরচ: বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ভেদে টিউশন ফি আলাদা। স্নাতক প্রোগ্রামে প্রতি সেমিস্টারে খরচ পড়বে ১০ থেকে ১২ হাজার কানাডিয়ান ডলার (৭ লাখ ৩০ হাজার থেকে ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রায়)। মাস্টার্স প্রোগ্রামেও প্রতি সেমিস্টারে খরচ প্রায় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার কানাডিয়ান ডলার। সেই হিসেবে বৃত্তি ছাড়া পড়তে পূর্ণকালীন স্নাতকে খরচ ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ কানাডিয়ান ডলারের কাছাকাছি। বৃত্তি ছাড়া স্নাতকোত্তরে পড়তে প্রায় ৩০ হাজার কানাডিয়ান ডলার খরচ হতে পারে।

দক্ষতা বিকাশের কোর্স করার সুযোগ: কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ কিংবা প্রতিষ্ঠান পেশাদার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স পরিচালনা করে। শিক্ষার্থী কিংবা চাকরিজীবীরা খুব সহজেই এসব কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে টেকনিক্যাল কোর্স করার সুযোগ অনেক বেশি। ডিপ্লোমা প্রোগ্রাম বা প্রফেশনাল কোর্স হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ অন্যান্য দেশের তুলনায় কানাডায় বেশি।

পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করার সুযোগ: আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজের সুযোগ আছে। স্টুডেন্ট ভিসায় শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ পান। সেই হিসেবে মাসে প্রায় দেড় হাজার কানাডিয়ান ডলার আয়ের সুযোগ আছে। মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল—এই সময়ে কর্মঘণ্টার সীমাবদ্ধতা থাকে না। তখন আরও বেশি কাজ করা যায়।

কানাডায় পড়ালেখা করে সে দেশে চাকরির সুযোগ: কানাডা অনেকটাই অভিবাসীদের ওপর নির্ভরশীল। তাই অভিবাসীরা এখন প্রচুর কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। দক্ষতা, রেজাল্ট, সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তি দক্ষতা অনুযায়ী মূল্যায়ন করে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়। সাধারণত পড়াশোনা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে কাজ পাওয়া যায়। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বছরে বিভিন্ন সময় চাকরির মেলা বা প্লেসমেন্টের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এ ছাড়া বিভিন্ন বিভাগ থেকে নিয়মিত জব-প্লেসমেন্ট করা হয়। কানাডার বিভিন্ন সরকারি সংস্থা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ দিচ্ছে। প্রযুক্তি-প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোয়ও সুযোগ আছে। অ্যাকাউন্টিং, প্রকৌশল, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, আইটিসহ গবেষণা-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করা যায়।


সর্বশেষ সংবাদ