জেনে নিন ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষার ভিসা আবেদন পদ্ধতি

বিদেশে উচ্চশিক্ষা
বিদেশে উচ্চশিক্ষা  © সংগৃহীত

পশ্চিম ইউরোপের শিল্প-সাহিত্য-ঐতিহ্যসমৃদ্ধ এবং বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো জাতি-রাষ্ট্রের একটি হলো ফ্রান্স। ফ্রান্সের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি এবং শিক্ষা ব্যবস্থা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক সমৃদ্ধ। উন্নত জীবনযাত্রা, শক্তিশালী অর্থনীতি ও মানসম্মত সময়োপযোগী শিক্ষার পরিবেশ থাকায় বর্তমানে অনেকেই ফ্রান্সে পাড়ি জমাচ্ছে। এদের মধ্যে কেউ উচ্চশিক্ষার জন্য, কেউ কাজের জন্য আবার কেউবা ভ্রমণের জন্য। আজ আমরা ফ্রান্সের ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানবো। বাংলাদেশ থেকে ফ্রান্সের ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে বেশকিছু ধাপ পার করতে হয়। আর প্রয়োজন হয় বিভিন্ন ধরনের নথিপত্রের।

(১) ভিসার ধরন নির্ধারণ
আপনি কোন ক্যাটাগরির ভিসার জন্য আবেদন করতে চান প্রথমেই সেটি নির্বাচন করতে হবে। 

* স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটির অফার লেটার থাকতে হবে। ভিসার জন্য প্রথমে এম্বাসীতে ই-মেইল করে  অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। সকল কাগজপত্র সহকারে এম্বাসীতে উপস্থিত হলে ওই দিনই দ্বিতীয়বারের জন্য আরেকটি এপন্টমেন্ট দেওয়া হবে। ভিসার সকল কাগজপত্র জমা দেবার পর আপনাকে কমপক্ষে তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে ভিসা পাবার জন্য।

* কাজের জন্য ফ্রান্স দুই রকমের ভিসা দিয়ে থাকে। স্বল্পমেয়াদি ভিসা যেটির মেয়াদ থাকে নব্বই দিনের কম সময়ের জন্য। দীর্ঘমেয়াদী ভিসার মেয়াদ থাকে এক বছরের বেশি সময়। 

* টুরিস্ট ভিসার ক্ষেত্রে ফ্রান্সের জন্য শেঞ্জেন ভিজিট ভিসা (শর্ট স্টে) পর্যটন, ব্যবসা, বা পরিবার ও বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য প্রদান করে থাকে। এজন্য আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং সময়কাল অনুযায়ী, আপনি কোন ধরনের ভিসার জন্য আবেদন করবেন তা নির্ধারণ করে নিতে হবে। 

(২) আবেদন ফর্ম পূরণ
আপনার নির্বাচিত ভিসার ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভিসার জন্য আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে। ভিসা আবেদন করতে এবং বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন

(৩) প্রয়োজনীয় নথিপত্র  
ক্যাটাগরি অনুযায়ী আপনাকে নথিপত্র সংগ্রহ করতে হবে। 

* স্টুডেন্ট ভিসার জন্য

* পাসপোর্ট।  (অবশ্যই ৬ মাসের অধিক মেয়াদ থাকতে হবে)।
* জন্ম নিবন্ধনের কপি ।
* জীবনবৃত্তান্ত।  
* সকল একাডেমিক ডকুমেন্টস।
* ইউনিভার্সিটির অফার লেটার। 
* আইইএলটিএস/টোয়েফল এবং ফ্রেঞ্চ ভাষায় দক্ষতার সনদ
* অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম ও পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি। 
* ফ্লাইট বুকিং টিকেট (এটা করতে কোনো টাকা লাগে না, শুধু বুকিং দিবেন)। 
* ভিসা অ্যাপ্লিকেশান ফি বা স্কলারশিপ লেটার (যদি পেয়ে থাকেন। স্কলারশিপ প্রাপ্তদের ফি লাগে না)।
* হেলথ ইনস্যুরেন্স (যতদিন এর কোর্স ততদিনের করতে হবে)।
* ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সল্ভেন্সি (যিনি আপনার সকল খরচ বহন করবেন তার অর্থাৎ স্পন্সরের)। 
* হাউজিং সার্টিফিকেট/ ডকুমেন্ট (যদি ফ্রান্সে কোন আত্মীয়ের বাসাকে হাউজিং এর জন্য দেন তাহলে ঐ শহরের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সত্যায়িত উনার/উনাদের বাসার সকল কন্ট্রাক্ট পেপার দেখাতে হবে)। 
* স্পন্সরের জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট কপি, যা দ্বারা আপনার সঙ্গে তার সম্পর্ক কি টিউশন ফি পরিশোধের কপি/প্রমাণপত্র। 
* ট্রেনিং সার্টিফিকেট।  (প্রয়োজন সাপেক্ষে )
* কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট। (প্রয়োজন সাপেক্ষে )

কাজের ভিসার জন্য 
* এক বছর মেয়াদী ডিজিটাল পাসপোর্ট ।
*  ৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ।
*  ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট ।
*  আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ।
*  আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধনের কপি।
*  আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি।
*  চেয়ারম্যান কর্তৃক সনদপত্র ।
*  ফ্রান্স ভিসা আবেদন ফি।
*  ফ্রান্স ভিসা আবেদন ফরম ।
*  স্কিল সার্টিফিকেট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
*  কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণ।

উচ্চশিক্ষার জন্য কোন দেশগুলো সবচেয়ে ভালো স্কলারশিপ দেয়? - Quora

টুরিস্ট ভিসার জন্য

* পাসপোর্ট: আপনার পাসপোর্টটি ভিসার আবেদন জমা দেওয়ার তারিখ থেকে কমপক্ষে তিন মাস পর পর্যন্ত বৈধ হতে হবে এবং এতে অন্তত দুটি খালি পৃষ্ঠা থাকতে হবে।
*  আবেদন ফর্ম: সম্পূর্ণ পূরণ করা এবং স্বাক্ষর করা শেঞ্জেন ভিসা আবেদন ফর্ম।
*  সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি (বায়োমেট্রিক ফটো)।
*  ফ্লাইট বুকিং: ফ্রান্সে আসা-যাওয়ার নিশ্চিত ফ্লাইট টিকেট।
*  হোটেল রিজার্ভেশন: ফ্রান্সে থাকার সময়কালীন হোটেল বুকিং বা থাকার ব্যবস্থা।
*  বীমা: ভ্রমণ স্বাস্থ্য বীমা, যা শেঞ্জেন অঞ্চলে আপনার পুরো থাকার সময়কালের জন্য অন্তত ৩০,০০০ ইউরো পর্যন্ত কভার করবে।
* আর্থিক ক্ষমতার প্রমাণ: আপনার ভ্রমণ এবং ফ্রান্সে থাকার সময়কালের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের প্রমাণ। এটি ব্যাংক স্টেটমেন্ট, চাকরির সার্টিফিকেট, বা স্পন্সরশীপ লেটার হতে পারে।
*  কাভার লেটার: আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং বিস্তারিত বিবরণ সহ একটি চিঠি।
*  ভিসা ফি: নির্ধারিত ভিসা ফি জমা দেওয়া। 

(৪) ভিসা আবেদন জমা
বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত ফ্রান্সের দূতাবাসে গিয়ে ভিসা আবেদন জমা দিতে হবে। ফ্রান্সের দূতাবাসের ঠিকানা 

রোড-১০৮, হাউজ-১৮, গুলশান, ঢাকা-১২১২।
ফোনঃ +৮৮০-২-৮৮১৩৮১১-৪
ওয়েবসাইটঃ ‍www.ambafrance-bd.org

খোলা–বন্ধের সময়সূচী:
দূতাবাসটি শুক্রবার ও শনিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯.০০-বিকাল-৫.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
আর ভিসা বিভাগ রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮:৩০ টা থেকে ১০:৩০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

৫. বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান
দূতাবাসে ভিসা আবেদন জমা দেওয়ার সময়ই আপনাকে বায়োমেট্রিক তথ্য (ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ছবি) প্রদান করতে হবে। 

৬. সাক্ষাৎকার
আপনাকে ভিসা অনুমোদন দেওয়ার আগে একটি সাক্ষাৎকার দিতে হতে পারে। এক্ষেত্রে একজন ভিসা অফিসার আপনাকে ফ্রান্সে ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করবে।

৭.  ভিসা প্রসেসিং 
সাধারণত ১৪ থেকে ২১ কার্যদিবসের মধ্যেই ফ্রান্সের ভিসা আবেদনের ফলাফল জানিয়ে দেওয়া হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরোও  বেশি সময় লাগতে পারে। 

৮ পাসপোর্ট সংগ্রহ
আপনার ভিসা অনুমোদিত হলে বা রিজেক্টেড হলে তা মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে এবং পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে বলা হবে। আপনাকে  ফ্রান্সের দূতাবাস থেকে এটি সংগ্রহ করতে হবে। 

উল্লেখ্য, সময় সময় আবেদনের প্রক্রিয়া পরিবর্তন হয়ে থাকে। সঠিক এবং আপডেটেড তথ্যের জন্য ফ্রান্সের দূতাবাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে খোঁজ রাখতে হবে আপনাকে।

ওয়েবসাইট লিংক 

খরচ কেমন 
ফ্রান্সে যেতে কত টাকা লাগবে সেটা নির্ভর করে ভিসা ক্যাটাগরি, ভিসার মেয়াদের উপর। সাধারণত ফ্রান্স স্টুডেন্ট ভিসা, ভ্রমণ ভিসা, কাজের ভিসা এবং টুরিস্ট ভিসা প্রদান করে থাকে।  ফ্রান্স ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে গেলে  খরচ পড়বে প্রায় সর্বনিম্ন ৪ লক্ষ টাকা। তবে স্টুডেন্ট এবং টুরিস্ট ভিসায় গেলে খরচ আরো কম হয়ে থাকে। টুরিস্ট ভিসায় আনুমানিক খরচ প্রায় ৩ লক্ষ টাকা এবং  স্টুডেন্ট ভিসায় আনুমানিক প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা প্রয়োজন হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence