ঘুমানোর আগে ছোট তিন সূরা পড়তেন রাসূল (সা.), জেনে নিন ফজিলত
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২০ AM
সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে ঘুমানোর আগে মানুষের মন সবচেয়ে দুর্বল থাকে। অনেকের দুশ্চিন্তা আর অজানা আশঙ্কাসহ বিভিন্ন বিষয় মনে ভিড় করে। ঠিক সেই মুহূর্তেই রাসূলুল্লাহ (সা:) আমাদের জন্য রেখে গেছেন এক অসাধারণ আমল—ছোট্ট তিন সূরা, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস। এই সূরাগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে দোয়া, সুরক্ষা আর প্রশান্তির ঢাল। রাসূল (সা:) ঘুমানোর আগে নিজের দু’হাতে ফুঁ দিয়ে এসব সূরা পাঠ করতেন এবং পুরো শরীর মুছে নিতেন—যেন আল্লাহর রহমতের ছায়ায় নিরাপদে রাত কাটাতে পারেন।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। তারপর উভয় হাতে ফুঁক দিতেন এবং সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়তেন। তারপর দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)
এই তিন সূরার ফজিলত:
সূরা ইখলাস: সূরাটি পবিত্র কুরআনের ১১২ নম্বর সূরা। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। টিকা ৬, আয়াত ৪ এবং ১ রুকু রয়েছে সূরাটিতে। আয়িশাহ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তিকে ’কুল হুআল্লাহু আহাদ’ পড়তে শুনলেন। সে বার বার তা মুখে উচ্চারণ করছিল। পরদিন সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে এ ব্যাপারে বললেন। যেন ঐ ব্যক্তি তাকে কম মনে করলেন। তখন রাসূল (সা:) বললেন, সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন। এ সূরাহ হচ্ছে সমগ্র কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান (সহিহ বুখারি, ৫০১৩; সহিহ মুসলিম, ৮১১)
মুহাম্মাদ ইবনে মারযূক আল-বাসরী (রহঃ) আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন দুই’শ বার ’কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ পড়বে তার পঞ্চাশ বছরের গুনাহ্ বিলীন করে দেওয়া হবে। তবে তার ওপর ঋণ থেকে থাকলে তা ছাড়া। (মিশকাত ২১৫৮),
এই সনদেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বললেন, কেউ যখন বিছানায় শুইতে ইচ্ছা করবে সে যেন তার ডান পার্শ্বে শোয়ার পর একশ’ বার কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ সূরাটি পাঠ করে। কিয়ামতের দিন মহান পরওয়াদিগার তাকে বলবেন, হে আমার বন্দা। তুমি তোমার ডান পাশ দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ কর (সুনান তিরমিজি, হাদিস ২৮৯৮ [সহিহ])
সূরা ফালাক: এটি পবিত্র কুরানের ১১৩ নম্বর সূরা। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। যাদু, হিংসা ও সব ধরনের অশুভ থেকে নিরাপত্তা। রাসুল (সা:) ফালাক–নাসকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়ার সর্বোত্তম দোয়া বলেছেন (সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৭১৪)। যখন রাসুল (সা:)–এর ওপর যাদুর প্রভাব পড়েছিল, তখন আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা:) এর ওপর সূরা ফালাক ও সূরা নাস নাযিল করেন; তিনি এগুলো পাঠ করে সুস্থ হন (সহিহ বুখারি, হাদিস ৩২৬৮)।
সূরা নাস: এ সূরাটি পবিত্র কুরআনের একটি ফজিলতপূর্ণ সূরা। সূরাটি কুরআনের ১১৪তম ও সর্বশেষ সূরা। এই সুরা মদিনায় অবতীর্ণ। এর আয়াত সংখ্যা ৬, রুকু ১।
হাদিস শরিফে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তা পড়ার গুরুত্ব এসেছে। এক বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা সূরা ইখলাস ও এই দুই সূরা পড়বে সে সকল বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৯০৩)
শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে সর্বোত্তম প্রতিকার পাওয়া যায় এই সূরার আমল করলে।
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, প্রতি রাতে নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিছানায় যাওয়ার আগে সূরাহ ইখ্লাস, সূরাহ ফালাক ও সূরাহ নাস পাঠ করে দু’হাত একত্র করে হাতে ফুঁ দিয়ে যতদূর সম্ভব সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে আরম্ভ করে তাঁর দেহের সম্মুখ ভাগের ওপর হাত বুলাতেন এবং তিনবার এরূপ করতেন। (সহিহ বুখারি, ৫০১৭)