জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

তিন বছরেও অধিগ্রহণ হয়নি নতুন ক্যাম্পাসের সম্পূর্ণ জমি

জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ
জবির দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ   © টিডিসি ফটো

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।

কিন্তু টাকা প্রাপ্তি পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সমাপ্ত হয়নি ভূমি অধিগ্রহণের কাজ। তিন বছরে বরাদ্দকৃত ২০০ একর জমির মধ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১৮৮.৬০ একর জমি। বাকি রয়েছে এখনো  ১১.৪০ একর জমি।

এদিকে সম্পূর্ণ অধিগ্রহণ না করেই শুরু করা হয়েছে ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ। কিন্তু সময়মত বাকি ১১.৪০ একর ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় অনেকটাই স্থবির হয়ে গেছে সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ বালু ভরাট, লেক খনন এমনকি মাস্টারপ্ল্যানের কাজ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অধিগ্রহণকৃত ভূমির দক্ষিণ-পূর্ব ও পশ্চিমাংশে চলছে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ। কিন্তু উত্তর ও দক্ষিণাংশের কোন দিক থেকে বাকি ১১.৪০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি প্রশাসন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১১.৪০ একর ভূমি অধিগ্রহণ একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগামী দুই তিন বছরেও এই ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারবে বলে মনে হয় না। ফলে পূর্ণাঙ্গ সীমানা প্রাচীর ও বালু ভরাট করে ক্যাম্পাস ভবন নির্মাণের উপযোগী করতে আরও বহুবছর লেগে যাবে।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর কেরানীগঞ্জেরতে ঘরিয়ায় ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন : ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। পরের বছর ২৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের নকশা দেখেন প্রধানমন্ত্রী।

এ প্রকল্পের আওতায় ছিল ভূমি অধিগ্রহণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, মাস্টারপ্ল্যান, বালু ভরাট, লেক খনন, অভ্যন্তরীণ ড্রেন ও সার্ফেস নির্মাণ ইত্যাদি। কাজের মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু কাজের মেয়াদ শুধু দফায় দফায় বাড়ানো হলেও বাস্তবে নেই কাজের কোন অগ্রগতি। কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ শিক্ষার্থীরা।

নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণে স্থবিরতার প্রসঙ্গে জবি শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সহসভাপতি সুমাইয়া সোমা জানান, ‘এই প্রকল্পটির মেয়াদ বারবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। অধিগ্রহণের নামে বিলম্ব করা কাজের গাফিলতি ছাড়া কিছুই নয়। প্রকল্পে যে পরিমাণ অনিয়ম, লুটপাটের ভাগ বাটোয়ারা হচ্ছে তাতে বোঝাই যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাস নির্মাণের পরিবর্তে পকেট ভারি করতে বেশি ব্যস্ত।’

আরও পড়ুন : জয়-লেখকের ‘অপকর্মের’ ফিরিস্তি আজই প্রধানমন্ত্রীকে দিচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতারা

বাকি ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী রেজিস্ট্রার (স্টেট) কামাল হোসেন সরকার জানান, ক্যাম্পাসের দক্ষিণ পাশে বাংলাদেশ রেলওয়ের এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিগ্রহণকৃত জমির মাঝে ৪২ শতাংশ জায়গা থেকে গেছে। এটা অধিগ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে এখানে বস্তি এলাকা হয়ে যাবে। এটা অধিগ্রহণের অনুমতি পেতে দেড় বছর ধরে ঘুরছি। তবে এটা অধিগ্রহণের অনুমোদন এখন পর্যন্ত পাইনি। আশা করি শীঘ্রই পেয়ে যাবো। এছাড়া আরও ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের চেষ্টা চলছে। এটা হয়ে গেলেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন ফিজিবিলিটি টেস্ট (সম্ভাবনা পরীক্ষা) করবে। তারপর অধিগ্রহণ করা যাবে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমেদ জানান, ‘সামান্য কিছু ভূমি অধিগ্রহণ করতে বাকি রয়েছে। এটার অধিগ্রহণও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শীঘ্রই তা সম্পন্ন হয়ে যাবে।’

জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক জানান, ‘রেললাইন ও মুজাহিদ নগরের পাশে বাকি জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে একটা ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি আছে। সেটা নেয়ার জন্য কথা চলছে। খুব দ্রুতই জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হবে। মাস্টারপ্ল্যানের প্রাথমিক একটা কপি আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছে। আমরা কিছু কারেকশন দিয়েছি। খুব শীঘ্রই আরেকটা মিটিং আছে। মাস্টারপ্ল্যান প্রায় প্রস্তুত।’


সর্বশেষ সংবাদ