প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আইনে কি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ?

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে  © ফাইল ছবি

আগে থেকেই নিজস্ব ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি করার সুযোগ দেয় না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সম্প্রতি ছাত্রলীগ ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি ঘোষণা করার পর শুরু হয়েছে নানা আলোচনা সমালোচনা। এ নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উদ্বেগ প্রকাশ করায় ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান জানাতে মরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এ বিষয়ে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এ কী বলা আছে?

এই আইনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তবে প্রশাসনের বিভিন্ন কমিটি গঠনের কথা বলা আছে।  আইনের ৬(১০) ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রস্তাবিত বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থ ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর বিবেচিত হইতে পারে এমন কোন কার্যকলাপে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করিবে না বা সন্ত্রাসী বা জঙ্গি তৎপরতা বা এই জাতীয় কোন কার্যকলাপে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কোনভাবেই কোন পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করিবে না।’

৩৫(৭) ধারায় বলা হয়েছে, ‘(৭) কোন কারণে কোন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা দেখা দিলে কিংবা উহার স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে, উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখিবার স্বার্থে, চ্যান্সেলর কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে, প্রয়োজনীয় আদেশ ও নির্দেশ দিতে পারিবেন এবং এতদ্বিষয়ে চ্যান্সেলরের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।’

সম্প্রতি সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হোসেন পারভেজ ও সাধারণ সম্পাদক মো. আজিজুল হাকিম সম্রাট স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে কয়েকটি কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয়। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আজিজুল হাকিম সম্রাট দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, তারা অন্তত ৩৭টি ইউনিটে কমিটি দিয়েছেন। সামনে আরও কমিটির ঘোষণা আসতে পারে।

বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে মো. জাহিদুল হাসান শোভনকে সভাপতি ও মোহাম্মদ রাহাতকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৯ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সোহান খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতির সুযোগ না হলে অপরাজনীতি হওয়ার সুযোগ থাকবে। বুয়েট তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। ছাত্রলীগ স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি হিসেবে সব স্থানে রাজনীতি করার অধিকার রাখে। ছাত্র রাজনীতির অনুমতি দেবেন না, এমন কথা তারা বলতে পারেন না। নৈতিকভাবে এটা ঠিক নয়।

সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১০৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে ১০৩টির কার্যক্রম চলছে। এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, রাজনীতি ছাড়াই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো চলছে। সেশনজট নেই, পরিবেশও ভালো আছে। কিন্তু ছোট্ট এসব ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যকলাপ শুরু হলে হানাহানি হবে, পরিবেশ নষ্ট হবে।

আরো পড়ুন: আইনে নিষিদ্ধ না হলেও শিক্ষার্থীদের রাজনীতি করতে দেই না: এপিইউবি

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেখাপড়ার উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদও। সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এই দাবি জানানো হয়। এতে স্বাক্ষর করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন। 

চিঠিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি এবং রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিষয়টি আমরা বিশেষভাবে অবগত। ট্রাষ্টের অধীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ মূলতঃ একটি সেশনজট মুক্ত অলাভজনক, অরাজনৈতিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পলিসি, শৃঙ্খলা ও নিয়ম-কানুন নুযায়ী পরিচালিত হয়ে আসছে।

আরও বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ শিক্ষার্থীদের রাজনীতি সচেতনতা ও সম্পৃক্তটাকে নিরুৎসাহিত করে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতর দলীয় রাজনৈতিক কর্মকান্ড চলবে কিনা তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম দ্বারা নির্ধারিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে উপাচার্যগণ শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিয়ম-কানুন বজায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সহমত ও সন্তুষ্ট। ক্যাম্পাসের বাইরে ইতিবাচকতা রাজনীতির ধারায় অংশগ্রহণ করার বিষয় একান্তই শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকবৃন্দ ঠিক করবেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ তাদের পলিসি, শৃঙ্খলা ও নিয়ম-কানুন অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

বেসরকারি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি করার সুযোগ নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপে পৃষ্ঠপোষকতা না করা ও তাঁদের নিরাপত্তা বিধানের কথা বলা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম কোনও বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, রাজনীতি করা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। আইনেও এমন কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার নোটিশ দিল, তা খতিয়ে দেখতে হবে। ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে দলীয় ছাত্র রাজনীতির সুযোগ নেই এখানে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় জায়গা, সেখানে পরিবেশ এক রকম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিসর ছোট। এর মধ্যে রাজনীতি শুরু হলে স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হবে।

এ বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেছেন, আমরা শিক্ষার্থীদের রাজনীতি করতে বারণ করি এবং করতে দেই না। সেটা কোন আইনের মাধ্যমে না। আমরা ছাত্র ভর্তি হওয়ার সময় তাদেরকে বলি যে এটা অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং ছাত্র রাজনীতি এখানে করা যাবে না।

সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কখনো রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে না। কারণ, রাজনীতি করা মানুষের অধিকার। কিন্তু দলীয় রাজনীতি কীভাবে হবে, সেখানে রাজনীতি যারা করবেন, সেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের বোঝাপড়া, সৌহার্দ থাকা উচিত। তবে আমরা চাই, দলীয় রাজনীতির নামে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা না হয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence