নিয়োগের পর জানা গেলো মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নয়!

ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

মুক্তিযোদ্ধার সনদ জালিয়াতি করে চাকরি নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সেকশন অফিসারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে তিনি সরকারবিরোধী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

অভিযোগ ওঠা ওই কর্মকর্তার নাম মো. ফয়সাল আহমেদ। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তর শাখায় কর্মরত আছেন।

আরবি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ পেতে মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করেছেন ফয়সাল। নিয়োগের সময় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সার্টিফিকেট জমা দেন। ফলে ৩২ বছর হলেও তার চাকরি নিশ্চিত হয়। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে সমস্যা হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে আরও অর্থ খরচ করে বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরি করে সাধারণ কোটায় নিয়োগ স্থায়ী করেন তিনি। এছাড়া তার পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদন সন্তোষজনক ছিল না।

সূত্র জানায়, সেকশন অফিসার পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় মাত্র ২৪ পেয়েছিলেন ফয়সাল। আর মৌখিক পরীক্ষায় পান ২৫ নম্বর। সেসময় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অধিক যোগ্য প্রার্থী থাকলেও টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পান তিনি। তার এই নিয়োগ সরকারি কোনো প্রতিনিধির উপস্থিতিতে হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফয়সালের বাড়ি সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায়। ওই এলাকার সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের এক নেতা জানান, সিরাজগঞ্জের এক বিএনপি নেতার ভাই তিনি।

আরও পড়ুন: মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ নিয়ে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নয়-ছয়’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বির্তকিত নিয়োগে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সেকশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। নিয়োগ পরবর্তীতে জানা যায় তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ ভুয়া। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে নিয়োগ পাওয়ায় পরবর্তীতে সমস্যা হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে আরও টাকা খরচ করে কিছু কাগজপত্র পরিবর্তন ও ৩২ বছর বয়স গোপন করে সাধারণ কোটায় নিয়োগ পাঁকা করেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ফয়সাল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার মুক্তিযোদ্ধার সনদটিও সঠিক। আপনি যাচাই করে দেখতে পারেন। আমি কোনো ঘুষের বিনিময়ে নিয়োগ পাইনি। সাত বছর ধরে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করছি।

নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় ২৪ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি জানান, লিখিত পরীক্ষায় আমি ২৪ পেয়েছিলাম। আর মৌখিক পরীক্ষা ২৫। কোটা থাকায় আমার নিয়োগ হয়েছে। পরবর্তীতে বাড়তি টাকা খরচ করে সাধারণ কোটায় নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা অপবাদ। আমি কোনো টাকা খরচ করিনি। নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি।

আরও পড়ুন: পিরোজপুরে বঙ্গবন্ধুর নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিল পাস

এমন দুর্নীতির বিষয়ে কিছুই জানেন না দাবি করে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আহসান উল্যাহ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সনদ দিয়ে আমাদের এখানে কেউ নিয়োগ পেয়েছে এমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই।

অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সচিব ফেরদৌস জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮ সালের একটি নিয়োগ নিয়ে আমাদের তদন্ত চলছে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে চাকরি নেয়া অপরাধ। যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ