উদ্বোধনের চার বছরেও চালু হয়নি ফেনী কলেজের ছাত্রী হোস্টেল

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেসা মুজিব ছাত্রী হোস্টেল
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেসা মুজিব ছাত্রী হোস্টেল  © টিডিসি ফটো

উদ্বোধনের চার বছর পার হলেও এখনো চালু হয়নি ফেনী সরকারি কলেজের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেসা মুজিব ছাত্রী হোস্টেল। বিদ্যুৎ সংযোগ, গ্যাস সংযোগ না থাকা, করোনা মহামারীর অযুহাত দেখিয়ে পার করা হচ্ছে সময়। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্রীরা। অতিদ্রুত হলের সিট বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

ফেনী সরকারি কলেজ ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। ফেনী জেলা ছাড়াও চৌদ্দগ্রাম, বসুরহাট, কোম্পানিগঞ্জ, সোনাইমুড়ি, মিরসরাই, রামগড়, খাগড়াছড়িসহ আশে পাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসেন।

কলেজটিতে ছাত্রদের জন্য একটি হোস্টেল থাকলেও ছাত্রীদের জন্য কোন হোস্টেল ছিল না। ছাত্রীদের কথা বিবেচনা করে নির্মাণ করা হয় পাঁচতলা এ হোস্টেল ভবন। হোস্টেলটির নামকরণ করা হয় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেসা মুজিব ছাত্রী হোস্টেল।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: ঢাবির ‘খ’ ও ‘ঘ’ ইউনিটের জনপ্রিয় বিভাগগুলো

২২ হাজার শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১১ হাজার ছাত্রী অধ্যয়ন করছেন। দূরের ছাত্রীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে কলেজের নবনির্মিত প্রশাসনিক ভবনের পাশে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর ভবনটি নির্মাণ করে। ২০১৮ সালে নির্মাণ কাজ শেষে ভবনটি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেসা মুজিব ছাত্রী হোস্টেল নামকরণের পর ওই বছরের ১২ অক্টোবর ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী হোস্টেল উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনের ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও হোস্টেলটি চালু হয়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, উদ্বোধনের ২ বছরের মধ্যও গ্যাস সংযোগ না আসার কারণে ছাত্রী উঠানো যায়নি। এরমধ্য ২০২০ সালে একবার সিট বরাদ্দের নোটিশ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু করোনা মহামারী শুরু হলে এ কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।

তবে ২০২১ সালে আবার করোনা মহামারী স্বাভাবিক হলেও সিট বরাদ্দের কোন উদ্যোগ নেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেসা মুজিব ছাত্রী হোস্টেল

এদিকে উদ্বোধেনের এত বছর পরেও হোস্টেলে উঠতে না পেরে ক্ষোভ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ডিগ্রিতে (পাস) অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী মৌসুমী আক্তার বলেন, যখন কলেজে ভর্তি হয়েছি তখন শুনেছি হোস্টেল চালু হবে আর এখন চলে প্রায় যাওয়ার সময় হয়ে গেছে এখনও চালু হয়নি। যদিও এখন আর থাকা হবে না। তবুও চাই দ্রুত হোস্টেল চালু হোক।

চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে আসা স্নাতকের শিক্ষার্থী সাবিনা বলেন, কলেজ থেকে আমাদের বাড়ি অনেক দূর। নিয়মিত যাতায়াত করা সম্ভব না। আবার পরিবার মেসেও থাকতে দিবে না। তাই একমাত্র ভরসা কলেজের হোস্টেল। কিন্তু সেটি এখনও চালু হওয়ার নাম নেই। এটি চালু হলে আমার মত শত শত শিক্ষার্থী উপকৃত হবে। দ্রুত সিট বরাদ্দ দিয়ে হোস্টেল চালু করার দাবি জানাই।

আরও পড়ুন:প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ভুল চাহিদায় এমপিওভুক্তিতে জটিলতা

নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ থেকে আসা আরেক শিক্ষার্থী মারুফা বলেন, বাড়ি থেকে কলেজ অনেক দূরে হওয়াতে ফেনীতে একটি মেসে থাকতে হচ্ছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় মেসে থাকাটা খুব একটা নিরাপদ না। পরিবারও চিন্তায় থাকে। যদি কলেজে ছাত্রী হোস্টেল চালু হতো তাহলে হয়তো এই সমস্যা তৈরী হতো না। অধক্ষ্য মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন জানাই যেন অল্প সময়ের মধ্য হোস্টেলটি চালু করেন।

হোস্টেল চালুর বিষয়ে ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিয়া সুলতানা রাত্রী বলেন, আমি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি বেশিদিন হয়নি। আমার প্রথম উদ্যোগ হবে ছাত্রী হোস্টেল চালুর বিষয়ে কাজ করা। ইতিমধ্যে আমরা কলেজ প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি। আশা করি খুব এটি চালু করার উদ্যোগ নেবে।

হোস্টেল পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া উদ্ভিববিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক হারুনুর রশিদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাকে এই বছর এ দায়িত্বটা দেয়া হয়েছে। আমি এখনও ঠিকমত দায়িত্ব বুঝে পাইনি। তবে ইতিমধ্যে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। অধ্যক্ষ মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে এ ব্যাপারে। যতদ্রুত সম্ভব সিট বরাদ্দের নোটিশ করা হবে।

ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বিমল কান্তি পাল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গ্যাস সংযোগের না থাকার কারণে আমরা এতদিন হোস্টেলটি চালু করতে পারিনি। মাঝে একবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম; কিন্তু করোনার জন্য সম্ভব হয়নি। তবে ইতিমধ্য হোস্টেল পরিচালনার জন্য কমিটিও করা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্য সিট বরাদ্দ দিয়ে এ বছরের মধ্য হোস্টেলের কার্যক্রম চালু করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ