প্লাস্টিকের বোতলের বিনিময়ে গাছ দিয়ে শুরু, এখন সফল উদ্যোক্তা ববির সিমা

৩০০ নানান রকমের প্লান্টার বা পাত্রের কালেকশন নিয়ে রঙ, তুলি, মাটির পাত্র, পাটের সুতা, বাঁশের ঝুড়ি ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের মতো শৈল্পিক রূপ দিতেন সিমা।
৩০০ নানান রকমের প্লান্টার বা পাত্রের কালেকশন নিয়ে রঙ, তুলি, মাটির পাত্র, পাটের সুতা, বাঁশের ঝুড়ি ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের মতো শৈল্পিক রূপ দিতেন সিমা।  © ফাইল ছবি

শুরুতে দশটি প্লাস্টিকের বোতলের বিনিময়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের একটি গাছ উপহার দেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান সিমা। গত বছর বরিশালের বেলস পার্ক, আমতলা লেক পাড়, দপদপিয়া ব্রিজের নিচের বস্তিগুলো, কর্ণকাঠীর ভোলা রোডের পাশে স্কুল শিক্ষার্থীদের প্লাস্টিকের বোতলের বিনিময়ে গাছ দিয়ে শুরু করেন তিনি। তারপর প্লান্টার বা পাত্রের কালেকশন নিয়ে রঙ, তুলি, মাটির পাত্র, পাটের সুতা, বাঁশের ঝুড়ি ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের মতো শৈল্পিক রূপ দিতেন সিমা। করোনাকালে পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস বাবার বেতন বন্ধ হলে সেই শৈল্পিক হাতই হাল ধরেছে পরিবারের। গড়ে তুলেছেন ‘ইনডোর প্লান্ট শপ’ নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পেয়েছেন সাফল্য। বরিশালে এই কাজ সর্বপ্রথম (Indoor Plant Shop) ইনডোর প্লান্ট শপ থেকে শুরু হলেও এখন তার দেখাদেখি অনেকেই শুরু করছেন।

সিমা জানান, গতবছর মার্চে করোনায় বন্ধ হয়ে যায় ক্লাস, টিউশনসহ সব ধরনের আয়ের উৎস। বাবা ডিপিডিসি একজন কনট্রাকটর। কোভিডের কারণে তার সব কাজের পাওনা বিল আটকে যায়। হঠাৎ করেই সব অন্ধকার হয়ে আসে।

বাবার কাজ না থাকায় পারিবারিক জমা থেকে এক মাসের মতো আমরা বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে সব খরচ বহন করতে পেরেছিলাম। পরিবারে হতাশার ছাপ শুরু হয়ে যায়। আমি নিজেও হতাশার বাইরে ছিলাম না। হতাশা থেকে বের হতে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে শুরু করলাম সেই বাগান করার শখটাকে জাগ্রত করে। 

রঙ, তুলি, মাটির পাত্র, পাটের সুতা, বাঁশের ঝুড়ি সব নিয়ে কাজ করেছি রাত-দিন। গাছ লাগানো, রোদ-বৃষ্টিতে দেয়া, ছবি তোলা, লোগো বসানো, আপলোড করা, কাস্টমারদের হাজার প্রশ্নের উত্তর দেয়া সব করেছি একা হাতেই আর মাথার উপর বট গাছের মতো ছাঁয়া হয়ে মা সাহায্য করেছেন। আমার হাতে কাদা মাখানো আর মা ভাত খাইয়ে দিতো, এটা ওটা দরকারি জিনিস কাছে এনে দিতো। কখনো দেরিতে ঘুম থেকে উঠলে আগেই গাছগুলোতে পানি দেয়া। অর্থাৎ মাকে ছাড়া আমি একচুলও আগাতে পারতাম না। করোনাকালীন সময়ে বিক্রি না কমে অবিশ্বাস্যভাবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে  বিক্রি বাড়ে দ্বিগুণ। 

স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্লাস্টিকের বোতলের বিনিময়ে একটি গাছ উপহার দিয়ে সবুজ বিপ্লবের শুরু হলেও এরজন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা পাননি। তবে স্কুলের ছোটো ছোটো বাচ্চারা নাছোড়বান্দা। যারা কোন প্লাস্টিকের বোতল দিতে পারেনি তারা কথা দিয়েছে এ বছর সবাই বেশি করে বোতল জমিয়ে গাছ নিবেই-নিবে। সিমা নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান থেকেও সংগ্রহ করেছেন অসংখ্য অব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল। ক্যাম্পাসে ছেলেদের কটুক্তির স্বীকার হলে থেমে যায়নি সিমার বোতল সংগ্রহের কাজ। অনেক বন্ধুরাও বাড়িয়েছে সহায়তার হাত। যে বোতল গুলো সংগ্রহ করা হয় সেগুলোই রঙ করে বিভিন্ন কার্টুন শেইপ দিয়ে কেটে ত গাছ লাগিয়ে বাচ্চাদের উপহার দেন তিনি। যাতে বাচ্চাদের মাঝে গাছ লাগানোর আগ্রহ বাড়ে আর সাথে সাথে দূষণ না করে রিসাইকেলিং এর ব্যপারে সচেতনতা তৈরি হয়। নদী ভাঙন রোধে নিজ গ্রামের নদীরে পাড়ে স্ব উদ্যোগে বাবার সহায়তায় লাগিয়েছেন শতাধিক গাছ।

করোনাকালে হতাশার কালো মেঘ কাটিয়ে  পরিবারের কাছে আশার আলো নিয়ে ফিরেছেন ইসরাত জাহান সিমা। নারী হয়েও বিপদে শক্ত হাতে হাল ধরেছেন পরিবারের। হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা। প্লাস্টিকের দূষণ রোধ ও পরিবেশ বান্ধব সমাজ বিনির্মাণে ব্যতিক্রমী এই সবুজের অভিযান চালিয়ে নিতে চান বহুদূর।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence