চবির বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে তালা দিল শিক্ষার্থীরা
- এ এইচ আজহার, চবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০১৯, ০৪:৪৮ PM , আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০১৯, ০৫:০২ PM
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিভাগটিতে ৪৬৭জন শিক্ষার্থী ও ২৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। বিভাগের শিক্ষার্থীদের স্নাতক সম্মানে ৮টি সেমিস্টারে সর্বমোট ৫৮টি কোর্স করতে হয়। রয়েছে ১৯২ ক্রেডিট। যার পুরো ক্রেডিটই অর্জন করতে হয় শিক্ষার্থীদের। অন্যথায় ফলাফল না নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতে হয় তাদের। এছাড়া কোনো একটি কোর্সে দুইবার ফেল করলে ছাত্রত্ব বাতিল হয় ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীদের।
এদিকে একাধিক শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়া ও ক্রেডিট লস সিস্টেম চালুসহ ৬ দাবিতে আন্দোলন করেছে ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২৬ আগস্ট) সকাল ১০ টায় ইন্সটিটিউটের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান নেন তারা। এসময় তারা ইন্সটিটিউটের পরিচালক বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপিতে ৬টি দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
দাবিগুলো হলো:
১. বর্তমানে ছাত্রত্ব বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে। এবং সকল শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. প্রহসনের অর্ডিন্যান্স পরিবর্তন করে ক্রেডিট লস সিস্টেম চালু করতে হবে।
৩. ৯০ দিনের মধ্যে পরীক্ষার রেজাল্ট ঘোষণা করতে হবে।
৪. সেমিস্টার ফাইনাল শুরু হওয়ার পূর্বে সকল প্রকার টিউটোরিয়াল এবং প্র্যাকটিক্যাল সম্পন্ন করতে হবে।
৫. শিক্ষকদের ক্লাস রুটিন অনুসরণ করে যথাসময়ে ক্লাস নিতে হবে।
৬. রানিং মাস্টার্স চালু করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরেষ্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ইন্সটিটিউটের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী আসিফ মঈনুদ্দীন বলেন, আমাদের সর্বমোট ৫৮ টি কোর্স রয়েছে। এরমধ্যে কেউ যদি একটি কোর্সে ২বার ফেল করে তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়। এমন পাঁচজন শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। তবে অর্ডিন্যান্সের নিয়ম ভেঙ্গে তিনজনের ছাত্রত্ব ফিরিয়েও দেওয়া হয়েছে। তাই একটি বিষয় স্পষ্ট যে শিক্ষকরা অর্ডিন্যান্সের নিয়ম মানেন না।
তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থীর একই কোর্সে দ্বিতীয়বার ফেল করার কারণ হলো, পরীক্ষার রেজাল্টে বিলম্ব করা। এক্ষেত্রে ৯০ দিনের মধ্যে রেজাল্ট দেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ সময় রেজাল্ট দেওয়া হয় পরের সেমিস্টারের আগমুহূর্তে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা কোনো কোর্সে খারাপ করে থাকলে সেই কোর্সের পুনঃ প্রস্তুতি নিতে পারেন না।
তাছাড়া ক্রেডিট লস সিস্টেম না থাকাতে একজন শিক্ষার্থীকে ১৯২ ক্রেডিটের পুরোটাই অর্জন করতে হয়। কিন্তু কেউ যদি দু'এক ক্রেডিট কোনোভাবে কম পান তাহলে তার রেজাল্ট আসে না। অর্থাৎ কোনো একটি কোর্সে একবার খারাপ করলে পরের সেমিস্টারে সেটা আবার তুলে নেওয়ার সুযোগ থাকে না আমাদের। অথচ এমন অনেক বিভাগ আছে যেখানে ক্রেডিট লস সিস্টেম থাকাতে তাদের দু'এক ক্রেডিট লস হলেও তারা রেজাল্ট পেয়ে যান।
একইভাবে রানিং মাস্টার্সের সিস্টেমও চালু নেই ইন্সটিটিউটে। তাই অনার্স শেষে মাস্টার্সে ভর্তি হওয়া যায় না। দীর্ঘদিন রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয় আমাদের। অথচ শেষ সেমিস্টারে এসে ফেল করার নজির নেই বললেই চলে। আর কেউ যদি ফেল করে প্রয়োজনে তার মাস্টার্সের ভর্তি বাতিল করা হোক।
এছাড়া টিউটোরিয়াল পরীক্ষা এবং প্র্যাকটিক্যাল গুলো সেমিস্টার পরীক্ষা চলাকালীন নেওয়া এবং শিক্ষকদের রুটিন অনুযায়ী ক্লাস না নেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ তুলেন শিক্ষার্থীরা। তাই নিজেদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. দানেশ মিয়া বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া গুলো শুনেছি। আমরা তাদের কথা দিয়েছি যে এই বিষয়গুলো পরিবর্তনের চেষ্টা করবো। তবে অধ্যাদেশের নিয়মগুলো দিনে দিনে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তাই আমরা একটা কমিটি করবো। এবং সকলের পরামর্শক্রমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাছাড়া অধ্যাদেশ যদি পরিবর্তন করা হয়। তাহলে সেটা যখন পরিবর্তন করা হবে সেই সেশন থেকেই কার্যকর হবে। তাই এর আগের কোনো শিক্ষার্থী সেই সুবিধা পাবে না।
এছাড়াও তিনজন শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্রত্ব বাতিল হওয়ার পর শিক্ষার্থীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা সর্বশেষ তিনজন শিক্ষার্থীকে স্পেশাল ভাবে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিয়েছি। তবে তাদেরকে উপাচার্য বরাবর পাঠানো হয়েছে। তারপর উপাচার্যই তাদের সার্বিক বিষয়ে জেনে পরীক্ষা দিবে কি দিবে না, সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তাই এখানে আমাদের এখানে কোনো হাত নেই।
তাছাড়া দুইজন শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। তারা অনেকবার ফেল করেছে। তাই তাদের বিষয়ে একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আর যাদের কে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে তাদের সকল বিষয়গুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে তারপরেই তাদের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
রানিং মাস্টার্সের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আগামী সেশন থেকেই এটা চালু করবো। এই বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।