প্রধান উপদেষ্টা বরাবর ৭ কলেজের খসড়া অধ্যাদেশ বাতিলের আবেদন

সাত কলেজের লোগো
সাত কলেজের লোগো  © টিডিসি সম্পাদিত

ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজসহ রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সাত কলেজ বিলুপ্ত করে প্রস্তাবিত স্কুলিং মডেলে (হাইব্রিড) একক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের খসড়া অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বরাবর আবেদন জানিয়েছেন সাত কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং সচেতন অভিভাবকবৃন্দ।

রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) দেশের দৈনিক পত্রিকায় এই আবেদন প্রচারিত হয়।

আবেদনে বলা হয়, কোনো সমীক্ষা ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ছাড়াই ২০১৭ সালে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। কিন্তু এ সময়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন না হয়ে বরং সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি চরম অবহেলা ও বৈষম্য করা হয়েছে। পরীক্ষার ফল প্রকাশে দীর্ঘ বিলম্বে তীব্র সেশনজট তৈরি হয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গ্রুপিং ও দলাদলিতে শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে নতুন একটি অ্যাফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে।

আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি নির্ধারিত কার্যপরিধির বাইরে গিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজ (১৮৪১), ইডেন কলেজ (১৮৭৩), কবি নজরুল কলেজ (১৮৭৪), বদরুন্নেসা কলেজ (১৯৪৮), সোহরাওয়ার্দী কলেজ (১৯৪৯), মিরপুর বাঙলা কলেজ (১৯৬২) ও তিতুমীর কলেজ (১৯৬৮) বিলুপ্ত করার সুপারিশ করে। একই সঙ্গে সাত কলেজের সব সম্পত্তি স্কুলিং মডেলে একটি একক হাইব্রিড বিশ্ববিদ্যালয় ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’-এর নামে হস্তান্তরের প্রস্তাব দেওয়া হয়। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখের চিঠির ২ ও ৪ নম্বর কার্যপরিধিতে কলেজগুলোর স্বতন্ত্র সত্তা বজায় রাখার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।

আবেদনে অভিযোগ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি কার্যপরিধির বাইরে গিয়ে সাত কলেজ বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি বিধিবদ্ধভাবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ছাড়াই নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করেছে।

আবেদনকারীরা বলেন, ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ ও ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক আন্দোলনে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগ ও গৌরবময় ভূমিকা রয়েছে। দেশের প্রথম কলেজ ঢাকা কলেজ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ বছর আগে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও ৮০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় ঢাকা কলেজ কার্জন হল, শহীদুল্লাহ হলসহ অবকাঠামো ও ২৫ হাজার দুষ্প্রাপ্য বই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ছেড়ে দেয় এবং শিক্ষকরা দীর্ঘদিন লিয়েনে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ভূমিকা রাখেন। ইডেন কলেজ বাংলাদেশের নারীশিক্ষার পথিকৃৎ ও বাতিঘর হিসেবেও পরিচিত।

প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশ নিয়ে আবেদনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আশঙ্কা তুলে ধরা হয়। এগুলো হল- ৭ কলেজ বিলুপ্ত হলে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা হুমকির মুখে পড়বে; একই ক্যাম্পাসে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পৃথক প্রশাসনের অধীনে পরিচালনা বাস্তবসম্মত নয়; নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহশিক্ষা চালুর প্রস্তাব শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য উদ্বেগজনক; শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষার জন্য রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতে হওয়ায় দুর্ভোগ বাড়বে; এবং প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ সংকুচিত হয়ে পড়বে।

আবেদনে আরও বলা হয়, সাত কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থী সাধারণ পরিবারের সন্তান, যারা স্বল্প বেতনে পড়াশোনা করে এবং টিউশনি বা পার্টটাইম কাজের মাধ্যমে নিজেদের ও পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করে। কলেজগুলো বিলুপ্ত হলে অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বাধ্য হবে, যা নারীশিক্ষার অগ্রগতিও ব্যাহত করবে।

এসব বিবেচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যপরিধি উপেক্ষা করে প্রণীত শিক্ষা সংকোচনমূলক স্কুলিং মডেল (হাইব্রিড) বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি সাত কলেজের বিদ্যমান কাঠামো, স্বতন্ত্র সত্তা ও স্বকীয়তা বজায় রেখে পূর্বের মতো কলেজিয়েট মডেলে একটি নতুন অ্যাফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি, পর্যাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ এবং আবাসন, পরিবহন, ল্যাব, লাইব্রেরি ও শিক্ষাবৃত্তির সুযোগ বৃদ্ধিতে প্রধান উপদেষ্টার সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence