জকসু নির্বাচন নিয়ে সংশয়

নভেম্বরে না, ২০ ডিসেম্বরের পরে হওয়ার আভাস!

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচন পূর্বনির্ধারিত রোড ম্যাপ অনুযায়ী ২৭ নভেম্বর হওয়ার ক্ষেত্রে সংশয় তৈরি হয়েছে। রবিবার নির্বাচন কমিশন আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সংগঠন ও সাংবাদিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের প্রস্তাব, বাকবিতণ্ডা, হট্টগোল, নির্বাচন পেছানোসহ নানা দাবির প্রেক্ষিতে এই সংশয় তৈরি হয়েছে। মতবিনিময় সভায় ছাত্রদলের দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনি তফসিল পিছিয়ে পূর্বনির্ধারিত ২৭ নভেম্বরের পরিবর্তে ২০ ডিসেম্বরের পর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হতে পারে বলে জানা গেছে।

এদিন নির্বাচন কমিশনের কাছে মতবিনিময় সভায় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল এবং সদস্য সচিব শামসুল আরেফীন জকসু নির্বাচন পেছানোর প্রস্তাব জানান।

মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে আচরণ বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। এটা একটি মাস্টারপ্ল্যানের অংশ। পরিকল্পিতভাবে ছাত্র সংসদ বিধিমালায় এমফিল ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। পরে আচরণ বিধিতেও অছাত্র ও ভোটার নয়— এমন শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণভাবে মাস্টারপ্ল্যানের অংশ। 

তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, নির্বাচনের সময় আমাদের ১০০টি পাস কার্ড দিতে হবে। আমাদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও আহ্বায়ক সদস্য রয়েছেন, তাদের নির্বাচনি প্রচারণায় সুযোগ দিতে হবে। একটি বিশেষ গোষ্ঠী ওয়েলফেয়ার কর্মসূচি করার সুযোগ পেয়েছে। তারা আগেই হয়তো জেনেছে, কখন নির্বাচন হবে। আমরা জানতাম না। আগামী ২৪ তারিখ পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করা আছে। আমাদের কর্মসূচি পালনের সুযোগ দিতে হবে। 

এ ছাড়া শামসুল আরেফীন বলেন, জকসু নির্বাচনে সাংবাদিকদের প্রবেশের বিষয়ে বিশেষ নিয়ম চালু করতে হবে। ডাকসু নির্বাচনে দেখেছি ছোট ঘটনাকে আচরণবিধি লঙ্ঘন আখ্যা দিয়ে নিউজ করেছে, যদি এ ধরনের কাজ সাংবাদিকদের দ্বারা হয়ে থাকে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে (সাংবাদিককে) কেন্দ্র থেকে বের করে দিতে হবে। সাংবাদিকদের কাকে কাকে পাস কার্ড দেওয়া হবে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে তা দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য ক্যাম্পাসের নির্বাচনে একটা বিষয় আমাদের খুবই দৃষ্টিগোচর হয়েছে—অমোচনীয় কালির ব্যাপারে। কমিশনকে বলব অবশ্যই অমোচনীয় কালির ব্যবস্থা করেই নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। যতদিন না অমোচনীয় কালির ব্যবস্থা করতে পারবে না ততদিন পর্যন্ত নির্বাচন বন্ধ রাখতে হবে।

আরও পড়ুন : ‘‌ছাব্বিশের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন’

এ সময় নির্বাচনের আচরণ বিধি প্রসঙ্গে জবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন,  আমরা চাই পূর্ব নির্ধারিত ২৭ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হোক। ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রশাসন জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছিল, সে অনুযায়ী নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের নৈতিক দায়িত্ব হলো নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা।’ এসময় তিনি নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে দ্বিমত করে বলেন, কোনো ভাবেই নির্বাচন পেছানো যাবে না।’

এদিন আচরণ বিধি নিয়ে আলোচনা শেষ হওয়ার পর নির্বাচনের খসড়া তফসিল নিয়ে আলোচনা ও মতবিনিময় শুরু করতে চায় নির্বাচন কমিশন। এ সময় ছাত্রদলের আহ্বায়ক উত্তেজিত হয়ে বলেন, এটা মাস্টারপ্ল্যানের অংশ। এসব প্রেসক্রিপশন আমরা মেনে নিব না। এ সময় ছাত্রদল আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল টেবিল থাপড়ে উচ্চবাচ্য করতে থাকেন নির্বাচন কমিশনের সাথে। নুর মোহাম্মদ নামে এক শিক্ষার্থী ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দের হট্টগোল ও টেবিল থাপড়ানোর বিষয়টি দেখে বলে, আপনারা কি নির্বাচনটা বানচাল করতে চান নাকি! এসময় ছাত্রদলের আহ্বায়ক, সদস্য সচিবসহ যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর আহমেদ ও শাহরিয়ার হোসেন উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমরা বানচাল কেন করবো! এসব কথা কেন বলা হচ্ছে! আমরা আমাদের দাবির কথা জানাচ্ছি মাত্র। তখন নির্বাচন কমিশন চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যান। একপর্যায়ে উচ্চবাচ্য হলে উপস্থিত সাংবাদিক নেতারা ছাত্রদল নেতাকর্মীদের শান্ত করেন। 

সূত্র জানায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্রিয়াশীল সংগঠন ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিমের সঙ্গে মিটিং করে নির্বাচন কমিশন। এসময় কমিশনার সদস্যরা ছাত্রদলের এই হট্টগোল, টেবিল থাপড়ানো, উগ্র আচরণের বিষয়টি উপাচার্যকে জানান। এসময় কমিশনের দুজন সদস্য পরবর্তীতে এমন আচরণের সম্মুখীন হলে সম্মান রক্ষার্থে কমিশন থেকে পদত্যাগের কথাও উঠান।

সূত্র জানায়, কমিশনের পূর্বপ্রস্তুতি অনুযায়ী আজ সোমবার ৩ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু ছাত্রদল এটার বিরোধিতা করে বিধায় আগামীকাল মঙ্গলবারও তফসিল ঘোষণা করা হবে না। এ ছাড়া জবি ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদের দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচনি প্রচারণার সময় বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ছাত্রদলের দাবির প্রেক্ষিতে ২০ ডিসেম্বরের পরে নির্বাচনের কথা ভাবছে কমিশন।

নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা আমাদের মতো যৌক্তিকভাবে কাজ করব। কেউ অযৌক্তিকভাবে কোনো দাবি জানালেই মেনে নেয়া হবে না। সবার প্রস্তাবনা আলোচনা সাপেক্ষে যৌক্তিকতা বুঝে গ্রহণ করা হবে। আমরা কোনো পক্ষের না। আমরা নিরপেক্ষভাবে একটা সুন্দর নির্বাচন দিতে চাই। তবে গতকাল সভায় যেটা হয়েছে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমন আচরণ প্রত্যাশিত নয়। 

সার্বিক বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন,  গতকালকের সভায় অনেকের আচরণ অকোয়ার্ড লেগেছে আমাদের কাছে। যা শিক্ষার্থীদের থেকে কখনো কাম্য নয়। ডিসেম্বরেই নির্বাচন করব আমরা। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সকলের প্রোগ্রাম করতে দেওয়া হবে। তবে যেটা দাবি করেছে সেটাই মানতে হবে এমন না। 


সর্বশেষ সংবাদ