বেরোবিতে আমরণ অনশনে সাবেক শিক্ষার্থী-ছাত্রলীগকর্মী, বর্তমানদের অনাগ্রহ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০২:১৬ AM , আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৩:৪৮ PM
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) গঠনের দাবিতে টানা দুই দিন ধরে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী। তারা বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ব্রাকসুর অন্তর্ভুক্তি এবং দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছেন। অনশনকারীদের মধ্যে ছাত্রলীগের কর্মী, সাবেক শিক্ষার্থীও রয়েছেন। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে চলছে সমালোচনা।
তবে অনশনকারীরা তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন, যার ফলে আন্দোলনের ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অপরদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, যেখানে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সমর্থন দেয়, সেখানে রাজনৈতিক কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। বিশৃঙ্খলার কারণে সেশনজটের যে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে এর জন্য অনশনকারীদের দায় নিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের তামিম খান বলেন, ‘আজ যারা অনশন করছেন, তারা রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়েছিল। অথচ আজ ছাত্রদল ও শিবির সমর্থন দিলো তারা কিছুই বলল না। শিবির ও ছাত্রদলের সমর্থন নিয়ে আমরা ছাত্রসংসদ চাই না, কোন রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করা কাউকে চাই না।’
একটি গ্রুপ পরিচালনা করছেন সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী ও পরবর্তীতে সমন্বয়ক রহমত আলী ও আশিক। আরেকটি অংশে রয়েছেন সাবেক সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন, আরমান, হাজিমুল হক, রুবায়েত, জাহিদ হাসান জয় ও রুম্মানুল ইসলাম রাজ। তৃতীয় গ্রুপে রয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা, যাদের মধ্যে অন্যতম শিবলি সাদিক, কায়সার ও আতিকুর। এদের মধ্যে শিবলি ও আরেকজন ইতোমধ্যে অনশন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
অনশনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। অথচ নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্রাকসু ফি আদায় করা হচ্ছে। তারা দ্রুত নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সংশোধন এবং রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
অনশনে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, শিবিরসহ আরও কয়েকটি সংগঠন সংহতি প্রকাশ করলেও এতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে চলছে আলোচনা।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেননি। শুরুতে নয়জন শিক্ষার্থী অনশনে বসলেও প্রশাসনের আশ্বাসে ইতোমধ্যে কয়েকজন অনশন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অনাগ্রহের কারণে অনেকেই এ আন্দোলনকে 'কৃত্রিম' বলেও মন্তব্য করছেন।
ইংরেজি বিভাগের এক নবীন শিক্ষার্থী কামাল উদ্দিন মেসবাহ বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ক্লাস শুরু হয়েছে। আর তাতেই শুনছি ক্লাস নাকি আর হবেনা, সিনিয়র ভাইয়েরা বর্জন করার জন্য আমাদের সিআর কে জানিয়েছে। আমরা কি করব বুঝতেছিনা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে আলোচনার উদ্যোগ নিলেও, অনশনকারীদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি।
কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রনি ইসলাম বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন আমরা সব সাধারণ শিক্ষার্থীই চাই। কিন্তু যারা এখন অনশন করছে, তাদের মধ্যে একজনও সাধারণ শিক্ষার্থী নেই। সবই আগের সমন্বয়কারীদের স্বার্থের খেলা। নিজেদের ফায়দা লুটতেই তারা অনশন করছে। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই নাটককে মোটেও ভালোভাবে নেয়নি।
এ বিষয়ে প্রক্টর ড. ফেরদৌস রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের যে কোন দাবি সাংবিধানিক অধিকার। সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে মতামত প্রকাশ করুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ছাত্র সংসদের বিষয়ে উপাচার্য ১০ কর্ম দিবস সময় চেয়েছেন শিক্ষার্থীদের উপাচার্যের এই কমিটমেন্টকে সম্মান জানানো উচিত।
উল্লেখ্য, রবিবার (১৭ আগস্ট) বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের উত্তর গেটে নয়জন শিক্ষার্থী অনশনে বসেন। তারা হলেন- ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান আশিক (পূর্বে ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন), সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান জয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহিদ ইসলাম, ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী কায়সার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নয়ন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থ রাজ, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর, গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আরমান ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিবলি সাদিক।