বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ধারা না থাকায় আটকে আছে জকসু নির্বাচন
- জুনায়েদ মাসুদ
- প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৪:৩২ PM , আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৫, ০১:১৩ PM
দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা থাকলেও এখনও আলোর মুখ দেখেনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন। নীতিমালার খসড়া প্রস্তুত হলেও তা এখনও চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ হিসেবে এটি অনুমোদিত হলেই কেবল নির্বাচন আয়োজনের পথে এগোতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে খসড়া প্রণয়ন সম্পন্ন হলেও বাস্তব অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। এর মধ্যেই দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা আসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝেও এ দাবির প্রেক্ষাপট আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে জকসুর কোনো ধারা না থাকার কারণেই নির্বাচন আটকে থাকার কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে প্রণীত ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন’-এ ছাত্র সংসদ নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট ধারা না থাকায় প্রতিষ্ঠার পর থেকে একবারও জকসু নির্বাচন হয়নি। তবে চলতি বছর অনুষ্ঠিত ৯৯তম সিন্ডিকেট সভায় প্রথমবারের মতো একটি খসড়া নীতিমালা উপস্থাপন করা হয়। এরপর সিন্ডিকেটের নির্দেশে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়, যারা ইতোমধ্যে খসড়া প্রস্তুত করেছেন।
নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনকে ঘিরে বয়সসীমা নিয়ে বিভিন্ন মত থাকলেও শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ বয়স ২৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। অনার্স ও মাস্টার্সের নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন। যারা দীর্ঘ সময় পরীক্ষায় গ্যাপ দিয়েছেন বা এমফিল, পিএইচডি পর্যায়ে রয়েছেন, তাদের নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচনা করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. তাজাম্মুল হক মনে করেন, জকসু নির্বাচন আয়োজন পুরোপুরি সম্ভব। তিনি বলেন, ‘আইনে নেই তো প্রবিধি করে হবে। প্রশাসনের সার্বিক চেষ্টা আছে। শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট কমিটি তো নীতিমালা তৈরি করে দিয়েছে স্বল্প সময়ে। কিন্তু যে পর্যায়ে গিয়ে স্থবির হয়ে আছে, তাদেরকে প্রশ্ন করা যেতে পারে। প্রবিধি হয়ে আসলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি সময়ে নির্বাচন সম্ভব। এখানে অসম্ভব বলতে কিছু আছে আমার জানা নেই।’
শুধু খসড়া প্রস্তুত নয়, বরং তা ছাত্র সংগঠনগুলোর মতামতের ভিত্তিতে পুনর্গঠন ও দ্রুত আইনে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ইভান তাহসীব। তিনি বলেন, ‘শুধু খসড়া প্রস্তুত করলেই চলবে না। এটি ছাত্র সংগঠনগুলোর মতামত নিয়ে পুনর্গঠন করতে হবে এবং দ্রুত আইনে সংযুক্ত করতে হবে।’
জকসু বাস্তবায়নের জন্য একটি নীতিমালা বিশেষ সিন্ডিকেটে পাস করেছি এবং সেখানে নীতিমালায় শিক্ষার্থীদের মতামত যুক্ত করার একটি পরামর্শ এসেছে বিধায় ইউজিসি সদস্য ও আমাদের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তাদের রিপোর্টের সাপেক্ষে নীতিমালাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে বিধি আকারে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে জকসুর বিষয়টি সংযুক্ত হলেই আমরা নির্বাচন আয়োজনের দিকে যেতে পারব—অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, উপাচার্য জবি
এদিকে নির্বাচন আয়োজনের প্রক্রিয়া দৃশ্যমান না হওয়ায় এবং চূড়ান্ত অনুমোদন বিলম্বিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ। তারা দ্রুত নির্বাচনের রূপরেখা প্রকাশ ও প্রক্রিয়া শুরু করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
জকসু নির্বাচন নিয়ে অগ্রগতি না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে অথর্ব আখ্যা দিয়ে পদত্যাগ চেয়ে ফেইসবুক পোস্ট লিখেছেন জবি শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর সাম্য এবং বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র আন্দোলন, জবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান আকাশ। আকাশ তার এক পোস্টে লিখেন, ‘আমি এই অথর্ব ব্যর্থ জবি প্রশাসনের পদত্যাগ চাই।এই প্রশাসন শিক্ষার্থীদের প্রশাসন না।’
ইসলামি ছাত্রশিবির, জবি শাখার সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম মনে করেন ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি তাই এটা নিয়ে কোন তালবাহানা করা চলবে না। তিনি বলেন, ‘ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। ইসলামী ছাত্রশিবির সব সময় শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের সংগ্রামে আপসহীন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রশিবির শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে দাবি আদায় করবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের নমনীয়তাকে কেউ আমাদের দুর্বলতা ভাবলে এটা তাদের অদূরদর্শিতারই পরিচয় বহন করবে।’
আরও পড়ুন: এসএম হলের তুলনায় ১০ গুণ বেশি ভোটার রোকেয়া হলে, কোন হলে কত জন?
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও জকসু বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সাবরিনা শরমিন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বা এর প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো আইন নেই। যেটার আইন নেই, সেটার জন্য আসলে আইন করতে হয়। কিন্তু আইন তৈরিতেও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। এজন্য সিন্ডিকেট সভায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যেখানে আহ্বায়ক হিসেবে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছিল, জকসু নীতিমালাটি বাংলায় করতে হবে। ইংরেজিতে যেটা ছিল, সেটিকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়। আমার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি কাজটি শেষ করে সিন্ডিকেট সভায় পাস করানোর জন্য ভিসি স্যারের কাছে আবেদন করেছিল। এ বিষয়ে সিন্ডিকেট সভার সদস্যদের কিছু আইনগত পর্যবেক্ষণ ছিল। এরপর জকসু বিষয়ক একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে কাজ শুরু করা হয়।
কত দিনের মধ্যে জকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারছি না। কারণ আগে আইন প্রণয়ন করতে হবে। আইন না থাকলে জকসু নির্বাচন কিংবা প্রক্রিয়ার কিছুই সম্ভব নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে তাদের আইনে ছাত্র সংসদ সংযুক্ত আছে বিধায় তারা এটি ঘোষণা করতে পেরেছে। আমাদেরও যদি আইনে সংযুক্ত থাকত তাহলে আমরা সবার আগেই ছাত্র সংসদের আয়োজন করতে পারতাম বলে মনে করি। আমরা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে জকসুর কোনো ধারা না থাকার কারণেই আটকে আছি।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু দেশে সংসদ কার্যকর নেই, তাই এ মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই। তারপরও আমরা জকসু বাস্তবায়নের জন্য একটি নীতিমালা বিশেষ সিন্ডিকেটে পাস করেছি এবং সেখানে নীতিমালায় শিক্ষার্থীদের মতামত যুক্ত করার একটি পরামর্শ এসেছে বিধায় ইউজিসি সদস্য ও আমাদের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খানকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তাদের রিপোর্টের সাপেক্ষে নীতিমালাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে বিধি আকারে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে জকসুর বিষয়টি সংযুক্ত হলেই আমরা নির্বাচন আয়োজনের দিকে যেতে পারব।’