মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের অভিযোগ

‘রাজাকারের পক্ষ নিয়েছে ঢাবি প্রশাসন’

  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ১৬তম ভিসি প্রফেসর ফজলুল হালিম চৌধুরীর স্মরণসভা অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাজাকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বুধবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ধরণের কর্মকান্ডের নিন্দা জানিয়ে সংগঠনের নেতারা এ অভিযোগ করেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার বিকেলে ঢাবির ১৬তম ভিসি প্রফেসর ফজলুল হালিম চৌধুরীর স্মরণসভার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ফজলুল হালিম চৌধুরীর কন্যা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. সাদেকা হালিম এই স্মরণ সভার সভাপতিত্ব করেন। এসময় ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান, এমিরিটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান, প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান চলাকালীন অডিটোরিয়ামের পেছনে ‘ফজলুল হালিম চৌধুরী রাজাকার ছিলেন, তার স্মরণ সভা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে দেওয়া হবে না’ লেখা সংবলিত প্লাকার্ড বহন করে উর্দু বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আমিনুল ইসলাম এবং শক্তি ইনস্টিটিউটের ছাত্র নাজমুল হাসান। তারা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ব্যানারে এই প্রতিবাদ করে। পরে তাদের আটক করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে মুচলেখা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানা যায়।

মঙ্গলবারের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন বলেন, প্রথম থেকেই এই স্মরণ সভা নিয়ে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছিল। কেননা প্রফেসর ফজলুল হালিম চৌধুরী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফলিত রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী কর্তৃক রাবিতে গণহত্যা ও বধ্যভূমি পরিচালনায় সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।

তৎকালীন রাবির জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রয়াত নাজিম মাহমুদ রচিত: ‘যখন ক্রীতদাস: স্মৃতি- ১৯৭১’ প্রন্থে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণ রয়েছে। অবৈধ সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তিনি ঢাবির ভিসি হয়ে ১৯৮৩ সালে পদত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী চক্রের সাথে জড়িত ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত ঢাবির এই পূণ্যভূমিতে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার ও পাক বাহিনীর দোসর ফজলুল হালিম চৌধুরী স্মরণসভা হচ্ছে জেনে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কর্মীরা সকাল থেকেই ভিসি বরাবর বিভিন্নভাবে এই স্মরণসভা বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেছিল। কিন্তু ভিসিসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্তাব্যক্তিরা এই স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের স্মরণসভায় উপস্থিত হন এবং বক্তব্য দেন। যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানীর শামিল। তিনি বলেন, এই ঘটনার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জন্য প্লাকার্ড বুকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতা সেখানে অবস্থান করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা তাদের আটক করে এবং বিভিন্নভাবে হেনস্থা করে। এ ঘটনায় প্রমাণিত হয়, ঢাবি কর্তৃপক্ষ রাজাকারদের পক্ষে অবস্থান করেছে। যা জাতির জন্য অশনি সংকেত।

এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে কর্মসূচী দিয়েছে মঞ্চের নেতারা। তাদের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- ১৬ এপ্রিল সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি, ২১ এপ্রিল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি, ২৩ এপ্রিল ১১টায় শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি এবং ২৫ এপ্রিল সকাল ১১টায় স্মরণসভা , প্রতিবাদ, বিচার ও রাজাকারদের তালিকা প্রকাশের দাবিতে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান।


সর্বশেষ সংবাদ