ছাত্রদল নেতার মামলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা আসামি, উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা ১৩০ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তার নামে মামলা করেছেন। তবে তার মামলায় আসামি হিসেবে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে নানা কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকা শিক্ষার্থীরা। এতে মামলার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এসব শিক্ষার্থী।

এর আগে রোববার (৪ মে) বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রথম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান বাদী হয়ে ময়মনসিংহ দ্রুত বিচার আদালতে এই মামলা করেন।

মামলার এজাহারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার জাকিবুল হাসান রনিকে প্রধান আসামি করে ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৭০ থেকে ৮০ জনকে এই মামলায় আসামি করা হয়।

বাদীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট ‘হাসিনায় আস্থা’ ব্যানারে ছাত্রলীগ ও সরকারপন্থী শিক্ষক-কর্মকর্তারা অস্ত্র প্রদর্শন করে সমাবেশ করেন। ৪ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির প্রস্তুতিকালে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়, যাতে অন্তত ১২ শিক্ষার্থী আহত হন। এ ছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে।

তবে ১৩০ জন আসামির মধ্যে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং ছাত্রলীগ নেতাদের নামের পাশাপাশি রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী শিক্ষার্থীদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে, যা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা, প্রশ্ন উঠেছে মামলার উদ্দেশ্য নিয়েও।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মামলার বাদী নিজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কোনো কর্মসূচিতেই উপস্থিত ছিলেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হওয়ায় মামলায় উল্লেখ করা অধিকাংশ আসামিকেও চেনেন না তিনি। শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল এবং ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতেই মামলায় ইচ্ছেমতো আসামির তালিকায় নাম যুক্ত করা হয়েছে।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (৬ মে) সংবাদ সম্মেলন করেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আজিজুল ইসলাম, আইন ও বিচার বিভাগের শরিফুল ইসলাম সংগ্রাম এবং নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লিমন আহমেদ রিক্ত।

আজিজুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনিয়ম সমস্যা নিয়ে আমি প্রতিবাদ করে আসছি। আন্দোলনে হুমকির শিকার হয়েছি, ৪ আগস্ট ঢাকা যাওয়ার পথে সহযোদ্ধাদের নিয়ে আহত হয়েছি। এসব কিছুর পরও আমার নামে মামলা হয়েছে। যে সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। এটি ব্যক্তি আক্রোশ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা দোষীদের শাস্তি চাই, এমন কর্মকাণ্ড আমাদের ব্যথিত করেছে।

শিক্ষার্থী লিমন আহমেদ রিক্ত বলেন, জুলাই আন্দোলন করেছি, এ নিয়ে প্রমাণ দেওয়া লাগবে কখনো ভাবিনি। যখন আন্দোলনে মানুষ খুঁজে পাওয়া যেত না ছাত্রলীগের ভয়ে, তখন ১৪ জুলাই একটা পোস্ট দেওয়ার পর ১৫ মিনিটে ৫টা থ্রেট কল আসে আমার কাছে। আজ আমার নামে ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের যেই ছাত্রদল নেতা মামলা করল, আমাদের তার চেনার কথা না। নিশ্চয় তার আশপাশে থাকা মানুষই এই নাম সংযুক্ত করেছে।

আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম সংগ্রাম বলেন, ক্যাম্পাসে কে করেনি ছাত্রলীগ? কিন্তু আমি ছাত্রলীগ করেই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। ছাত্রলীগ করাকালীন কারোর বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি করেছি, সেই প্রমাণও কেউ দেখাতে পারবে না, আর জুলাই আন্দোলন তো নিজেই করেছি। অধিকার আদায়ের এই আন্দোলন করার পরও, অভ্যুত্থানে সক্রিয় থাকার পরও যখন সেই আন্দোলনেই হামলার অভিযোগে মামলার আসামি হয়েছি। মামলা হয়েছে, এখন পিবিআই তদন্ত করবে, তদন্তের পরও যদি চার্জশিটে আমাদের নাম আসে, তবে আমাদের কিছু বলার নাই এই রাষ্ট্রের কাছে।

শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে মামলার বাদী মো. আশিকুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কারা ছিল, ছাত্রলীগ করেও আন্দোলন কারা করেছে, নির্দিষ্টভাবে বোঝার উপায় নেই। যারা দাবি করছে নিরপরাধ, তাদের অন্য কারও সঙ্গে লেনদেন বা সুপারিশের দরকার নেই। অযথা হয়রানি করার উদ্দেশ্য আমার নেই। তারা আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলেই হবে। তাদের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হবে। সঠিক তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও সহযোগিতা চাই।

আপনি কোথায় আন্দোলন করেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আশিকুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমি নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট, ভালুকা এবং ময়মনসিংহে আন্দোলন করেছি। নিজেও মামলার চিহ্নিত আসামি হওয়ায় আন্দোলনের সম্মুখে এবং এক জায়গায় থাকতে পারিনি। এ ছাড়া অনলাইনে সক্রিয় ছিলাম।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence