সমস্যায় জর্জরিত তিতুমীর কলেজের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার

তিতুমীর কলেজের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার
তিতুমীর কলেজের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার  © টিডিসি ফটো

রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি তিতুমীর কলেজের গ্রন্থাগার দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত। হাজারো শিক্ষার্থীর জন্য একমাত্র গ্রন্থাগারে নেই পর্যাপ্ত বই ও বসার ব্যবস্থা। বই রাখার জন্য নেই পর্যাপ্ত আলমারি। একাডেমিক বইয়ের সংকট কিছুটা কম হলেও চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় বইয়ের মারাত্মক অভাব রয়েছে। সাহিত্য পাঠের ক্ষেত্রেও রয়েছে সীমাবদ্ধতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বই ছাড়া অন্যান্য সাহিত্যিকদের বই তেমন একটা পাওয়া যায় না। এ ছাড়া গ্রন্থাগারে রয়েছে দক্ষ জনবলের ঘাটতি। সব মিলিয়ে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে চলছে কলেজটির গ্রন্থাগার।

সরেজমিনে গ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা যায়, কলেজের পুরাতন বিজ্ঞান ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে চলছে গ্রন্থাগারের কার্যক্রম। প্রবেশপথে কাঠের তৈরি একটি তাক রাখা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যাগ ও বই রেখে গ্রন্থাগারে প্রবেশ করছেন। সকাল দিকে শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি থাকায় বসার পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে অনেকেই ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্রন্থাগারের চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য ৬ বছর পুরোনো ৪১তম বিসিএসের বই পড়তে দেখা গেছে এক শিক্ষার্থীকে। 

একটু পরে, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট আলমারিতে প্রয়োজনীয় একাডেমিক বই খুঁজে না পেয়ে গ্রন্থাগারের কর্মচারীদের কাছে সাহায্য চান। তবে কর্মচারীরাও বইটি সরবরাহ করতে পারেননি। ফলে বই না পেয়ে হতাশ হয়ে গ্রন্থাগার ত্যাগ করেন ওই শিক্ষার্থী। এছাড়া গ্রন্থাগার ঘুরে দেখা যায়, অনেক আলমারি ভাঙাচোরা, বইগুলো ধুলার স্তরে আচ্ছাদিত হয়ে রয়েছে। গ্রন্থাগারের ফ্যানগুলো পুরোনো ফলে প্রচুর শব্দের সৃষ্টি হয়। 

আমি লাইব্রেরিতে গিয়েছিলাম, সেদিন তারা বিভিন্ন ধরনের কথা বলেছে। শিক্ষার্থীরা সমস্যাগুলো লিখিত আকারে সুশৃঙ্খলভাবে দিলে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবেঅধ্যাপক ড. ছদরুদ্দীন আহমেদ, অধ্যক্ষ, সরকারি তিতুমীর কলেজ।

জানা যায়, কলেজ বিভাগ রয়েছে ২৩টি প্রতিটি বিভাগের একাডেমি বই রয়েছে গ্রন্থাগারে। বর্তমানে গ্রন্থাগারে প্রায় ২০ হাজার বই রয়েছে। দৈনিক চার-পাঁচটি পত্রিকা পাওয়া যায়। গ্রন্থাগারে কর্মরত রয়েছেন মাত্র তিনজন জনবল। এখনো আধুনিক কোনো ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি সনাতনী পদ্ধতিতেই বই সংগ্রহ ও প্রদান চলছে। গ্রন্থাগার খোলা থাকে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ফলে শিক্ষার্থীদের বই গ্রহণ ও পাঠ কার্যক্রমে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজের অন্যতম বড় সমস্যা হলো গ্রন্থাগারের দুরবস্থা। সেখানে পর্যাপ্ত বই ও বসার জায়গা নেই, স্বাভাবিক আলো-বাতাস প্রবেশ করে না এবং পাঠদানের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ অনুপস্থিত। বিভাগভিত্তিক একাডেমিক বইয়ের কিছু ঘাটতি রয়েছে, চাকরির প্রস্তুতির বইগুলোর অবস্থা একেবারে নাজুক। নতুন সংস্করণের পরিবর্তে লাইব্রেরিতে ছয় বছর পুরোনো বই রাখা আছে, যা দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকাই কঠিন।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুহিতুল ইসলাম মুন্না বলেন, বর্তমানে গ্রন্থাগারে বিভাগভিত্তিক পাঠ্যবইসহ প্রয়োজনীয় বইয়ের ঘাটতি রয়েছে। চাকরির প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অতিরিক্ত পাঠ্য চর্চা অপরিহার্য হলেও, অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পক্ষে সব বই ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ সম্ভব নয়। ফলে লাইব্রেরির সীমিত সুবিধা শিক্ষার্থীদের হতাশ করে। এছাড়াও গ্রন্থাগারটি উন্মুক্ত, প্রশস্ত ও আলো-বাতাস সমৃদ্ধ কক্ষে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পাশাপাশি, নতুন চাকরির প্রস্তুতিমূলক বই সংগ্রহ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।

বৈশাখী ঊর্মি নামে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, কলেজের লাইব্রেরিতে দর্শনের মানসম্মত বই নেই। সাহিত্য বিভাগের বই বলতে মূলত রবীন্দ্রনাথ, ছফা, বঙ্কিম ও মানিক ছাড়া তেমন কিছু পাওয়া যায় না। বিশ্বসাহিত্যের ভালো বইও অনুপস্থিত। লাইব্রেরি নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্ধ হয়ে যায়, অনেক সময় তিনটায়ই বন্ধ হয়ে যেতে দেখা যায়।

দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদ সাব্বির বলেন, চাকরির প্রস্তুতির বইগুলোর দুরবস্থা। যেখানে প্রতিনিয়ত নতুন সংস্করণ আসে, সেখানে লাইব্রেরিতে রয়ে গেছে ছয় বছর পুরোনো বই। এই বই দিয়ে আজকের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকা তো দূরের কথা, শুরু করাটাই দুঃসাধ্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রন্থাগারের এক কর্মচারী জানান, গ্রন্থাগারে সংকটের কোনো শেষ নেই। পর্যাপ্ত বই নেই, আলমারি এবং শিক্ষার্থীদের বসার জায়গার সংকট রয়েছে। এছাড়া, গ্রন্থাগারে জনবলও কম।

আরো পড়ুন: পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেলেন ছাত্রলীগ নেতারা

গ্রন্থাগারের সংকটের কথা স্বীকার করে সহ-গ্রন্থাগারিক আম্বিয়া খাতুন বলেন, কলেজের প্রতিটি বিভাগের পক্ষ থেকে যে বইয়ের তালিকা দেওয়া হয়, সেগুলো কেনা হয়। গ্রন্থাগারের উন্নয়নের জন্য আধুনিকীকরণ জরুরি। এছাড়া, গ্রন্থাগারের জন্য আরো জনবল প্রয়োজন।

কলেজের লাইব্রেরি কমিটির প্রধান এবং রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দিলসাদ জেসমিন বলেন, কোনো কলেজ লাইব্রেরি তে চাকরির বই থাকে না, এখানে শুধুমাত্র একাডেমিক বই থাকে। একাডেমিক বইয়ের পরিমাণ কম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি বছর একটি বাজেট নির্ধারণ করা হয় বই কেনার জন্য। বাজেট অনুযায়ী প্রতিটি বিভাগ থেকে বইয়ের চাহিদা নিয়ে বই কেনা হয়। বছরে একবার বাজেট হওয়ার কারণে যখন তখন বই কেনা সম্ভব নয়। গ্রন্থাগারের উন্নয়ন বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এটি ডিজিটালাইজ করতে চাই, কিন্তু এর জন্য যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, তা সাধারণ গ্রন্থাগারের জন্য পাওয়া যায় না। ফলে বারবার পরিকল্পনা করেও পিছিয়ে যেতে হয়। এটাই বাস্তবতা।

এ বিষয়ে তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ছদরুদ্দীন আহমেদ বলেন, আমি লাইব্রেরিতে গিয়েছিলাম, সেদিন তারা বিভিন্ন ধরনের কথা বলেছে। শিক্ষার্থীরা সমস্যাগুলো লিখিত আকারে সুশৃঙ্খলভাবে দিলে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence