৩৪ বছর ধরে রাজশাহী কলেজেই ঈদ কাটছে সোলায়মানের

রাজশাহী কলেজের কর্মচারী সোলায়মান
রাজশাহী কলেজের কর্মচারী সোলায়মান  © সংগৃহীত

রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা সবাই যার যার বাড়িতে ঈদ করতে চলে গেছে। কয়েকদিন আগেও যে ক্যাম্পাস ছিল সরগরম, সেখানে এখন নেমে এসেছে এক নিঃসঙ্গ নীরবতা। মাঠ ফাঁকা, করিডোরে পা ফেললেই যেন প্রতিধ্বনি শোনা যায়।

ঈদের কোলাহল থেকে দূরে এই নীরব ক্যাম্পাসেই আছেন একজন, যিনি কখনো ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরেন না। শিক্ষার্থীরা যখন পরিবারের সঙ্গে ঈদ করছেন, তখনও তিনি রয়ে যান ক্যাম্পাসে। এই কলেজই তার পরিবার, এই গাছপালা, এই প্রকৃতিই যেন তার আপনজন। তার নাম সোলায়মান। কুমিল্লার লাকসামের ছেলে কিন্তু গত ৩৪ বছর ধরে রাজশাহী কলেজই তার ঠিকানা। 

১৯৯০ সালে কর্মচারী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন রাজশাহী কলেজে। শুরুতে হয়ত ভেবেছিলেন, কয়েক বছর কাজ করে অন্য কোথাও চলে যাবেন। কিন্তু ক্যাম্পাসের প্রতি তার টান এত গভীর হয়ে গেল যে আজও এখানেই আছেন।

তিনি বলেন, প্রথম যখন আসি তখন ভাবতাম, ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাব। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কলেজই আমার বাড়ি হয়ে উঠল। এবারও সবাই চলে যাচ্ছে, কিন্তু আমি আছি। কলেজ ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না। রাজশাহী কলেজের পরিবেশ সবুজে ঘেরা, পরিচ্ছন্ন ও মনোরম। এর পেছনে যারা পরিশ্রম করেন, তাদের একজন সোলায়মান। ঈদের দিনেও তার সকাল শুরু হয় ক্যাম্পাসের গাছপালার খোঁজখবর নিয়ে।

সোলায়মান বলেন, এই গাছগুলো ছোট থেকে বড় হতে দেখেছি। মনে হয় আমি না থাকলে ওরা কষ্ট পাবে। তাই ছুটির দিনেও এসে একটু দেখে যাই।

শুধু গাছপালা নয়, ক্যাম্পাসের প্রতিটি ভবন, প্রতিটি করিডরের সঙ্গে তার যেন আত্মার সম্পর্ক। ঈদের দিন সকালে ক্যাম্পাস ফাঁকা থাকলেও, তিনি একাই হাঁটতে বের হন। যেন পুরোনো দেয়ালগুলোর সঙ্গে গল্প করেন, নিঃশব্দ মাঠের সঙ্গে স্মৃতিচারণ করেন।

ঈদের দিনটায় হয়ত একা লাগে, কিন্তু এতে কোনো আফসোস নেই তার। তিনি বলেন, সত্যি বলতে, মাঝে মাঝে ভাবি, পরিবার কাছে গিয়ে থাকলে ভালো লাগত। কিন্তু তারপর মনে হয়, এই ক্যাম্পাসই তো আমার পরিবার। আমি এখানকার মায়া ছাড়তে পারিনি, পারবও না।

রাজশাহী কলেজের কর্মচারীরা নিঃশব্দে কাজ করে যান, কিন্তু তাদের গল্প খুব কমই প্রকাশ্যে আসে। শিক্ষার্থীরা পরিবার নিয়ে ঈদ করেন, কিন্তু তাদের আনন্দময় পরিবেশটাকে সুন্দর রাখার পেছনে এই মানুষগুলোর ভূমিকা অপরিসীম। সোলায়মান শুধু একজন কর্মচারী নন, তিনি এক অনন্য ভালোবাসার প্রতিমূর্তি। কলেজের প্রতি তার টান, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, এবং প্রকৃতির সঙ্গে তার একাত্মতা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।

৬৭টি ঈদ কেটেছে রাজশাহী কলেজের মায়ায় বাঁধা পড়ে। এই ক্যাম্পাসের প্রতিটি ধূলিকণা যেন তার চেনা, প্রতিটি গাছ তার সঙ্গী। এই ভালোবাসার গল্পটি কেবল এক ব্যক্তির নয়, এটি এক আত্মার টান, এক নীরব ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।

রাজশাহী কলেজের দেয়ালে দেয়ালে লেখা আছে তার স্মৃতি। হয়ত একদিন সবাই তাকে ভুলে যাবে, কিন্তু এই ক্যাম্পাসের মায়ায় তিনি চিরকাল থেকে যাবেন একটি নাম হয়ে, একটি ভালোবাসার গল্প হয়ে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence