১৯ বছরে একবার সমাবর্তন, আনুষ্ঠানিকভাবে সনদ পান না জবির গ্র্যাজুয়েটরা

টিডিসি সম্পাদিত
টিডিসি সম্পাদিত

২০০৫ সালে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। কিন্তু ১৯ বছরের দীর্ঘ যাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মাত্র একবার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ হলে আনুষ্ঠানিকভাবে সনদ দিতে আয়োজন করা হয় সমাবর্তনের। কিন্তু নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়ায় এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া গ্র্যাজুয়েটরা আনুষ্ঠানিকভাবে সনদ নিতে পাচ্ছেন না। গ্র্যাজুয়েটরা দ্রুত সমাবর্তন আয়োজন করার দাবি জানিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, সমাবর্তন শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি তাদের পরিশ্রম ও অর্জনের স্বীকৃতি। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবর্তনের তারিখ ঘোষণা করা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সমাবর্তনে ২০০১-০২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ১২টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। পুরান ঢাকার ধূপখোলা (পরবর্তী সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তরিত) মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা কালো গাউনে সমাবর্তন উদযাপন করেন।

আরও পড়ুন: শেষ হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা

তৎকালীন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে প্রশাসন প্রথম সমাবর্তনের আয়োজন করতে বাধ্য হয়। তবে পরবর্তী সমাবর্তন নিয়েও একই ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। প্রথম সমাবর্তনের তিন বছর পর ২০২৩ সালের শুরুর দিকে দ্বিতীয় সমাবর্তনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করার ঘোষণা দেয় প্রশাসন। সে অনুযায়ী, মার্চ ২০২৩-এ প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থীকে নিয়ে দ্বিতীয় সমাবর্তন আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, কিন্তু ওই বছরের এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সমাবর্তন স্থগিত করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের আংশিক শিক্ষার্থী প্রথম সমাবর্তনে অংশ নেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। অর্থাৎ ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারী প্রায় ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী সমাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছেন।

দীর্ঘদিন সমাবর্তন না হওয়ায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, ‘সমাবর্তন শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও ব্যক্তিগত পরিশ্রমের স্বীকৃতি। এটি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, পরিবার ও শিক্ষকদের গর্বিত করে এবং ভবিষ্যতের পথে অনুপ্রেরণা জোগায়। সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের প্রতীক এবং এটিকে জাতীয়ভাবে উপস্থাপন করে। তাই, আমরা দ্রুত সমাবর্তনের আয়োজনের দাবি জানাই।’

আরও পড়ুন: হকারের দখলে ঢাকা কলেজের ফটক, ফুটপাতে হয়রানির শিকার পথচারী

২০১৯-২০ সেশনের সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থী ফারহান তানভীর সাকিব দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রতিটি শিক্ষার্থী সমাবর্তনের স্বপ্ন দেখে। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শেষ করেও সেই স্বপ্ন অধরা থেকে যাচ্ছে। আমি যখন ২০২০ সালে ভর্তি হয়েছিলাম, তখন প্রথম সমাবর্তন হয়েছিল। অথচ আজ আমার স্নাতক শেষ হলেও দ্বিতীয় সমাবর্তনের কোনো আয়োজন হয়নি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনের সুযোগ পেলেও আমরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাই প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, দেরি না করে দ্রুত সমাবর্তনের আয়োজন করুন।’

১৭-১৮ সেশনে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নওশীন নাওয়ার জয়া বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে সমাবর্তন হয়, সেভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় না। তার ওপর লম্বা একটা গ্যাপ। বর্তমান পরিবর্তিত সময়ে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। জবি শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু থেলে বঞ্চিত। সমাবর্তনে মতো একটি বড় বিষয় থেকেও যদি তাদের বঞ্চিত করা হয় তাহলে, সেটা দুঃখজনক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সমাবর্তন আমার অধিকার। চার বছরের স্নাতক শেষে স্বীকৃতি হিসেবে একদিন গাউন আর টুপি পরব, বন্ধুদের সঙ্গে কিছু ভালো মুহূর্ত কাটাব—এমন স্বপ্ন অনেক দিন ধরে দেখে আসছি। কিন্তু আমার সে স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেছে। বিগত সময়ে প্রশাসন অনেক গড়িমসি করেছে, আর চলবে না। দ্রুত সমাবর্তন চাই।’

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি’ ইউনিটের প্রশ্ন দেখুন এখানে

আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সমাবর্তন হওয়া উচিত। এটি শিক্ষার্থীদের একটি আকাঙ্ক্ষার জায়গা। তবে আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে, যার মধ্যে অবকাঠামোগত সমস্যা অন্যতম। সর্বশেষ আমরা ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সমাবর্তন আয়োজন করেছিলাম। পাঁচ বছর কেটে গেছে, এখন আবার সমাবর্তন আয়োজন করা উচিত। তবে সামনের জাতীয় নির্বাচন বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিগত পাঁচ বছরে এত দাপটের লোক থাকা সত্ত্বেও যেটা সম্ভব হয়নি, পাঁচ মাসে সেটা আমাদের জন্য সহজ নয়। কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা রয়েছে। একটি সমাবর্তনে বাইরের অনেক মানুষ আসেন, বড় পর্যায়ের অতিথিরা থাকেন—বিষয়গুলো সহজ নয়। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে ভেবেছি এবং অনেকের সঙ্গে শেয়ার করেছি যে আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে একটি টার্গেট নেওয়া হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ