মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ঐশীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
- রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১১:০০ AM , আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১১:২৫ AM

রমজান এলেই ইফতারির বিশেষ আয়োজন শুরু হয় শহরজুড়ে। রাজশাহীর কলেজ পাড়ায় এবার সেই তালিকায় যোগ হয়েছে নতুন এক নাম ‘কবির’স বিরিয়ানি। রাজশাহী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ঐশী, যিনি আগে মুক্তমঞ্চের পাশে মোমো বিক্রি করতেন, এখন কলেজ গেটের সামনে গড়ে তুলেছেন তার নতুন উদ্যোগ।
স্বপ্ন দেখার সাহস এবং স্বপ্নকে বাস্তবায়নের দৃঢ়তা—এই দুইয়ের সমন্বয়েই এগিয়ে চলেছেন ঐশী। তার এই উদ্যোগ কেবল ব্যবসার জন্য নয়; বরং এটি স্বাবলম্বী হওয়ার, আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার এক অনন্য গল্প।
ঐশীর শৈশব কেটেছে নওগাঁ জেলায়। অনার্স শেষ করার পর বুঝতে পারেন, পরিবার থেকে টাকা নেওয়া তার জন্য আর স্বস্তিদায়ক নয়। বিশেষ করে, তার বাবা ২০২১ সালে মৃত্যুবরণ করার পর পুরো পরিবারের দায়িত্ব চলে যায় তার মায়ের ওপর, যিনি একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ঐশী চান মায়ের কষ্ট কমাতে, আর তাই নিজের খরচ নিজেই চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
আরো পড়ুন: ফরম পূরণে ‘অতিরিক্ত ফি’ নেওয়ার অভিযোগ রাজশাহী কলেজের বিরুদ্ধে
শুরুতে তিনি রাজশাহী মুক্তমঞ্চের পাশে মোমো বিক্রি করতেন। তবে রমজান মাস সামনে আসায়, তিনি খাবারের আইটেম পরিবর্তন করে বিরিয়ানি বিক্রি শুরু করেন। এর ফলে শিক্ষার্থীরা কম খরচে মানসম্মত ইফতার করতে পারছে।
ঐশী তার স্টলে মূলত বিরিয়ানি বিক্রি করেন, যা রুচিসম্মত ও পকেট-ফ্রেন্ডলি। শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখেই তিনি খাবারের দাম রাখছেন সাশ্রয়ী, যাতে সবাই অনায়াসে কিনতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা স্টুডেন্ট, তাই বড় বড় রেস্টুরেন্টে অনেক দাম দিয়ে খাওয়া সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। আমি চাই, কম দামে সবাই যেন ভালো খাবার পায়। সামনে গরমকাল, তাই আরও নতুন আইটেম যুক্ত করার পরিকল্পনা করছি।
শুরুর দিকে কিছু বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল ঐশীকে। ব্যবসার জায়গা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়, তবে বর্তমানে সেসব সমস্যার সমাধান হয়েছে। কলেজের শিক্ষার্থীরা তাকে যথেষ্ট সাপোর্ট দিচ্ছেন।
আরো পড়ুন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে চূড়ান্ত যত আবেদন পড়ল
তিনি জানান, এই ব্যবসা করার পর অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এমনও হয়েছে, দোকান বন্ধ থাকলে অনেকে ফোন বা মেসেজ দিয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, কেন দোকান খোলা হয়নি। এটা সত্যিই খুব আনন্দের যে মানুষ আমার খাবার ভালোবাসে।
রাজশাহী কলেজ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বিশ্ব শিক্ষার্থী খালিদ বলেন, ঐশীর মতো শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ নেওয়া সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক। তার আত্মবিশ্বাস রয়েছে, কঠোর পরিশ্রম করছে, এবং মানুষও ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে।
ঐশী ভবিষ্যতে নিজেকে একজন আইনজীবী হিসেবে দেখতে চান। তবে তার ব্যবসাকেও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে চান। তিনি বলেন, আমি চাই, ‘কবির’স বিরিয়ানি’কে একটা বড় রেস্টুরেন্টে পরিণত করতে। যাতে আমার কাস্টমাররা আরও স্বাচ্ছন্দ্যে খেতে পারে।
একজন শিক্ষার্থীর ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম, এবং উদ্যোক্তা মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে ‘কবির’স বিরিয়ানি’তে। রাজশাহীর তরুণদের জন্য এটি শুধু একটি খাবারের দোকান নয়, বরং স্বাবলম্বী হওয়ার অনুপ্রেরণার গল্প।