ভাড়া বাসে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল ইবি শিক্ষার্থীদের, নিজস্ব বাহনে বৈষম্য

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের বহন করা একটি বাস
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের বহন করা একটি বাস  © টিডিসি ফটো

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পরিবহন পুলে ৫২ আসনের নিজস্ব ১৩টি বাস ও পাঁচটি মিনিবাস রয়েছে। এর অধিকাংশই বরাদ্দ রয়েছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আনা-নেওয়ার জন্য। অথচ শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বাসের তীব্র সংকট। ভাড়ায় চালিত ফিটনেসবিহীন বাসে তাদের পরিবহন করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। 

সম্প্রতি ভাড়া করা বাস উল্টে ২০ শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা এসব বিষয় সামনে এনেছেন। তারা অভিযোগ করে বলছেন, নিজস্ব বাস বরাদ্দে বৈষম্য করা হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরদের সেবা দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে শিক্ষার্থীদের পরিবহন সেবা দেয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের নিজস্ব বাস।

অনেক বাসের বডি ভাঙা। সিট কভার না থাকা, গ্লাস ভাঙা, ফ্যান না থাকার পাশাপাশি ছাড়াও রয়েছে অদক্ষ চালক দিয়ে ট্রিপ দেওয়ানোর অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে নিয়মিত লোকাল যাত্রী তোলা হয় বলেও অভিযোগ তাদের। ৫২ সিটের ১৩টি বাসের দুটি নষ্ট থাকলেও বাকি ১১টি এবং মিনিবাস নিয়মিত চলছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে ভাড়া ও নিজস্ব বর্তমানে পরিবহন রয়েছে ৪৬টি। এর মধ্যে এসি বাস একটি, ৩০ সিটের কোস্টার সাতটি, একটি নিজস্ব ডাবল ডেকার, ১৩টি ৫২ সিটের নন-এসি বাস, পাঁচটি করে মিনিবাস ও মাইক্রো এবং দুটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে।  

শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য ভাড়াকৃত ৯টি ডাবল ডেকার বাস এবং ১৯টি বাস রয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া রুটে ১০টি, ঝিনাইদহ রুটে ৯টি এবং শৈলকূপা রুটে চারটি বাস চলাচল করে। ভাড়ায়চালিত এসব বাসের ফিটনেস নিয়ে অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। 

তারা বলছেন, অনেক বাসের বডি ভাঙা। সিট কভার না থাকা, গ্লাস ভাঙা, ফ্যান না থাকার পাশাপাশি ছাড়াও রয়েছে অদক্ষ চালক দিয়ে ট্রিপ দেওয়ানোর অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে নিয়মিত লোকাল যাত্রী তোলা হয় বলেও অভিযোগ তাদের। ৫২ সিটের ১৩টি বাসের দুটি নষ্ট থাকলেও বাকি ১১টি এবং মিনিবাস নিয়মিত চলছে। 

এর মধ্যে বাতায়ন, বিলাস, অমর একুশে ও প্রান্তিক কুষ্টিয়া রুটে ছাত্রীদের বহন করে। এর বাইরে অত্যাধুনিক বাস দুর্বার, বিজয় ৭১, আবাহন, স্পন্দন কুষ্টিয়ার নিশান মোড়, জেলখানা মোড় রুটে এবং মুক্ত বাংলা ঝিনাইদহ রুটে নিয়োজিত আছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহনের কাজে। নিজস্ব পুরোনো বাসের মধ্যে যোগাযোগ, কুহেলিকা, আরণ্যক, ধরনী, বলাকা বাস কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও শৈলকূপা রুটে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবহন করে থাকে। 

শিক্ষার্থী শেখ মামুন বলেন, ‘সিংহভাগ শিক্ষার্থী ক্লাস শেষে বেলা ২টার বাসে শহরে যায়। এতো শিক্ষার্থীর চাপ হয় যে ডাবল ডেকারের দরজা ধরে ঝুলে ঝুলে আমরা বাড়ি যাই। প্রায়ই দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাস অর্ধেক বা ৬০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, দরজায় ঝুলতে থাকা কেও যদি দৌড়ে যেয়ে ওই বাসে ওঠার চেষ্টা করে, তার দিকে এমন চোখে তাকানো হয় যেন অবৈধ কোনো জিনিস সে চেয়ে ফেলেছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা আমাদের বাসে যেতে চাইলে আমরা ঠিকই তাদের সম্মান দেখিয়ে সিট ছেড়ে দিই। কিন্তু আমাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা আমাদের ন্যূনতম সম্মান দেয় না।’

জানা যায়, এসব বাস সকাল ৮ টায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহন করে নিয়ে আসে। এরপর দুপুর ২টার ট্রিপে ভাড়ায়চালিত বাসে জায়গা না হলে শিক্ষার্থীদের সেবা দেয়। এরপর আবার বিকেল ৪টায় অফিস শেষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে যায় নিজ নিজ গন্তব্যে। 

২০১৯ এবং ২০২২ সালে কেনা অত্যাধুনিক বাসগুলো ৫২ সিটের হলেও প্রায় অর্ধেক সিট ফাঁকা রেখে ক্যাম্পাস ছাড়তে দেখা যায় বাসগুলোকে। সিট ফাঁকা থাকলেও শিক্ষার্থীদের উঠতে দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের  জন্য পর্যাপ্ত বাস না থাকায় সিট পাওয়া ত দূরের কথা, পা ফেলার মতোও জায়গা থাকে না বেশিরভাগ দিন। বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গেটে ঝুলে ঝুলে যাতায়াত করতে হয় তাদের। বার বার বাসের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানানোর পরেও সমাধান না হওয়ায় আশা ছেড়ে দিয়েছে তারা।

আরো পড়ুন: ‘তাদের প্রলাপ কেউ সহ্য করতে চায় না, অথচ তারা আমাদেরই আপনজন’

ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হলেও বাসগুলো আসলে শিক্ষার্থীদের জন্য না। সুহাইল, শানে খোদা, সানজানি, আরএম, বিবিএসসহ বিভিন্ন কোম্পানির মেয়াদোক্তীর্ণ বাস রয়েছে। ইউজিসি থেকে বরাদ্দ নিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কিনে বাসগুলো ব্যবহার করছেন কর্মকর্তারা।’

তিনি বলেন, ‘কোনো কারণে শিক্ষার্থীরা নিজস্ব বাসে ওঠার চেষ্টা করলে তখন সংবিধান হাজির করা হয় যে, এই বাস তো শিক্ষার্থীদের না। কোনোভাবে যদি বাসে ওঠে কেও, তাকে রীতিমতো ট্রলের শিকার হয়ে ২৪ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেবা দেওয়ার পরে মাঝেমধ্যে দুপুরে শিক্ষার্থীদের পরিবহন করা হয়।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি এবং পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, ‘আমরা সংস্কারে উদ্যোগী। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন স্টেকহোল্ডার, ভালো বাসগুলো তাদের জন্য থাকবে, আমরা এই নীতিতে আছি। তবে পরিবহন ফি ছাত্ররা যেমন দেয়, শিক্ষক কর্মকর্তারাও ফি দেয়।’

সবাই সমান ফি দিলেও শিক্ষার্থীদের কেন সবসময় ভাড়ায় চালিত বাস দেওয়া হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি থাকতে পারে যে, নিজস্ব ও ভাড়ায় চালিত বাসের সুষ্ঠু বন্টন। আমরা বিষয়টি পরিচালনা কমিটিতে তুলব। একই ভাড়া দিয়ে কেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজস্ব বাসে যায় আর শিক্ষার্থীরা সবসময়ই ভাড়া বাসে যায়। ফ্যাসিস্ট আমলের সিস্টেমগুলোও ছিল ফ্যাসিস্ট কায়দায়। আমরা বিষয়টি নিয়ে দ্রুত কাজ করব।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence