থিসিস বণ্টনে শর্ত আরোপ, জবি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

জবি
জবি  © লোগো

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের থিসিস বণ্টনে সর্বনিম্ন সিজিপিএ এবং একটি ব্যাচে সর্বোচ্চ থিসিসের সংখ্যা নির্ধারন করে অফিস আদেশ জারি করেছে প্রশাসন। গত রবিবার (১৯ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. গিয়াস উদ্দিন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করেন। এ আদেশের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

অফিস আদেশে বলা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর থিসিস গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সুপারভাইজার বা কো-সুপারভাইজার হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে তাদের অবশ্যই পিএইচডি, এমফিল বা থিসিসসহ মাস্টার্স ডিগ্রি থাকতে হবে। এছাড়া একজন কোয়ালিফাইড শিক্ষক স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে এক শিক্ষাবর্ষের তিনজনের বেশি শিক্ষার্থীর সুপারভাইজার হতে পারবেন না।

অফিস আদেশে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) ও বিবিএ প্রথম বর্ষে ভর্তির সময় যেসব বিভাগ বা ইনস্টিটিউটে আসন সংখ্যা ৮০ বা তার চেয়ে কম সেসব বিভাগে ওই আসন সংখ্যার ২০ শতাংশ এবং যেসব বিভাগে আসন সংখ্যা ৮০-এর অধিক সেসব বিভাগে ওই আসন সংখ্যার ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে থিসিস নিয়ে অধ্যয়ন করতে পারবে। যেসব শিক্ষার্থীর স্নাতক (সম্মান) বা বিবিএ পর্যায়ে ন্যূনতম সিজিপিএ তিন (৩.০০ বা ৪.০০) আছে তারা থিসিস গ্রহণ করতে পারবেন। 

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, পাশাপাশি থিসিস গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সুপারভাইজার লটারির মাধ্যমে অথবা বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের অ্যাকাডেমিক কমিটি কর্তৃক গৃহীত পদ্ধতিতে নির্ধারিত হবে। তবে কোনোভাবেই শিক্ষার্থীর পছন্দ অনুযায়ী সুপারভাইজার নির্ধারণ করা যাবে না। যদি কোনো কোয়ালিফাইড শিক্ষক সুপারভাইজার হতে না চান এবং সেক্ষেত্রে যদি বিকল্প কোনো কোয়ালিফাইড শিক্ষক না থাকে তাহলে ওই কোয়ালিফাইড শিক্ষককে সুপারভাইজার হতে হবে।

গত বছর ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের ৭২তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়, যা এ বছর ২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৯৯তম সভায় অনুমোদিত হয়েছে। এছাড়া স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের থিসিস বণ্টন নীতিমালা প্রণয়নের জন্য গত ৫ ডিসেম্বর একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে এসব নিয়ম অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এ সংক্রান্ত অফিস স্মারক জারির পর থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে সমালোচনা। ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো একাডেমিক পড়াশোনা ও গবেষণার জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং অনেকটা নির্ভর করে গবেষণার উপর। সেই গবেষণার ক্ষেত্রে যদি সুযোগ না দেওয়া হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাংকিংয়ে এগোবে কীভাবে? স্নাতকোত্তর শ্রেণিতেই শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে একটা থিসিস করার সুযোগ পান। কিন্তু সিজিপিএ শর্তসহ অন্যান্য শর্তে যদি এই সুযোগ থেকে শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা হয়, তাহলে এটা কোনোভাবেই শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্নাতকোত্তর শেষে একজন শিক্ষার্থীর আশা থাকে থিসিস করবে। তা বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নিতে গেলে ভালো বিশ্ববিদ্যালয় পেতে সাহায্য করবে। কিন্তু আমাদের থিসিসের শর্ত দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সিজিপিএ কম থাকা মানে তো এই নয় যে একজন ভালো গবেষণা করতে পারে না। আবার বলা হচ্ছে, ২০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীকে থিসিস দেওয়া যাবে না। এটা তো শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত হলো না।’

এদিকে, থিসিসের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ প্রশস্ত রাখার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমরানুল হক বলেন, ‘এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের রিসার্চের সুযোগকে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরবর্তী সময়ে অনেকেই সমালোচনা করছে। এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। আমার মতে এটা আবার পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীর লিমিটেশনটা মডিফাই করা যেতে পারে। কিন্তু সিজিপিএ ৩ এর ক্ষেত্রে আশা করি সমস্যা হওয়ার কথা না।’ 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, এই থিসিসের বিষয়ে আমাদের একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা একটা রিপোর্ট দিবে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী শিগগিরই নতুন সিদ্ধান্ত আসবে। আশা করি ভালো একটা সিদ্ধান্তই আসবে।


সর্বশেষ সংবাদ