সেশনজটের শঙ্কায় বেরোবি শিক্ষার্থীরা

সেশনজটের শঙ্কায় বেরোবি শিক্ষার্থীরা
সেশনজটের শঙ্কায় বেরোবি শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

শিক্ষকদের কর্মবিরতি এবং শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন শেষে উপাচার্যের পদত্যাগ এবং সাঈদ হত্যার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে চতুর্মুখী আন্দোলনের ফলে দীর্ঘ দুই মাস ধরে পাঠদানে ফিরতে পারেনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলেও হচ্ছে না কোনো ক্লাস পরীক্ষা। এ নিয়ে সেশনজটের শঙ্কায় চিন্তিত বেরোবি শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে সেশনজট মুক্ত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি বিভাগ। কিন্তু দীর্ঘ দুই মাস শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের চতুর্মুখী আন্দোলনে স্থবির হয়ে পরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর, ট্রেজারারসহ ৪০ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পদত্যাগে বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অভিভাবকহীনতার কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কবে ফিরে পাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তা নিয়েও প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

এ বিষয়ে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী কানিজ ফারহানা মুভা বলেন, কোটা আন্দোলন শুরুতে সবার আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে গড়ে উঠলেও ধীরে ধীরে তা রূপ নিয়েছে এক উৎকণ্ঠায়। দীর্ঘসময় ধরে চলমান উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে সেশনজট রাতের ঘুম গ্রাস করে নিচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

তিনি আরও বলেন, সেমিস্টার ফাইনাল শেষ করে দীর্ঘ এক মাসের ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলাম। কিন্তু ছুটি শেষ করে ও আজ পর্যন্ত ফিরতে পারিনি ক্লাসে এমনকি দীর্ঘ তিন মাসেও শুরু করতে পারিনি পরবর্তী সেমিস্টারের একটা ক্লাসও। কবে ক্লাসে ফিরতে পারবো সেটাও জানি না। যার ফলে ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা পড়ে যাচ্ছি সেশনজটের মতো ভয়ংকর পরিস্থিতির যাঁতাকলে। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার এবং সকলের চাওয়া এখন শুধু ক্লাসে ফিরে যাওয়া এবং সেশনজটের জাঁতাকল থেকে মুক্তি পাওয়া।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী জিহাদ ইসলাম বলেন, চব্বিশের বিপ্লবের পর দেশ আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হওয়া শুরু করলেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা শুরু না হওয়ায় মাথাভর্তি দুশ্চিন্তা নিয়ে চলতে হচ্ছে আমাদের শিক্ষার্থীদের। কোটা আন্দোলন করলাম ভবিষ্যতে ভালো একটা চাকরি যাতে পাই, কিন্তু এখন যে সেশনজটে পড়তেছি তাতে আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য তো অর্জিত হচ্ছে না।এতদিন পড়াশোনা থেকে দুরে থেকে এমনিতেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, অতিদ্রুত আমি আমার শ্রেণিকক্ষে ফিরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই।

আমরা চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সৈকত বলেন,  বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে অনেকদিন হলো।কিন্তু এখনও কোনো ক্লাস বা পরীক্ষার শুরু হয়নি।শেষ বর্ষে এমন জটে খুবই চিন্তিত আমরা। বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষাগুলোতে  পিছিয়ে যাচ্ছি।

শিক্ষার্থী সোনিয়া আক্তার বলেন, আজ সেপ্টেম্বর ৩, আমাদের লাস্ট পরীক্ষা হয়েছে জুন ২৫, গত ৭০ দিন যাবত আমরা ডিপার্টমেন্টের কোন পরীক্ষা বা ক্লাস পাচ্ছি না, এতে অবশ্যই সেশনজট নিশ্চিত। আমাদের ব্যাচে যারা সেকেন্ড টাইমার আছে তারা ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করে ২০২৪ সালে এসে এখনো অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষের অর্ধেক শেষ করতে পারে নাই। এতে সেশনজটের হতাশায় পড়াশোনা থেকে অনেকে ঝরে পড়বে।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নুর আলম বলেন, সেশনজট যেন পিছু ছাড়ছে না। করোনাকালীন জট কাটিয়ে না উঠতেই কোটা আন্দোলন এবং শিক্ষকদের পেনশন স্কিম সুবিধার দাবি। ফলে ইদ-উল-আযহার পর থেকেই ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় পুরো পুরো দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়৷ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)ও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি শূন্য, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বডি নেই৷  ছাত্রগণ অভ্যুত্থানের পর নতুন দেশে দ্রুত ক্যাম্পাস না খুললে সেশনজটের কড়ালগ্রাসে পড়তে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা৷ বেরোবি ক্যাম্পাসে বিজ্ঞান অনুষদ এবং প্রকৌশল অনুষদের কিছু বিভাগে এখনও এক থেকে দেড় বছরের করোনাকালীন জট লেগে আছে। এবার যদি এই জট যুক্ত হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের অনার্স শেষ করতে ছয় থেকে সাত বছর সময় লেগে যাবে। ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ শঙ্কায় থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য বড় দুশ্চিন্তা। 

শিক্ষার্থী হেলাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও ক্লাস পরীক্ষা না হওয়ার কারণে দীর্ঘমেয়াদি একটি সেশনজট তৈরি হবে।এদিকে করোনা মহামারির কারণে এক বছর পড়াশোনা থেকে দুরে থাকায় জীবন থেকে একটি বছর নষ্ট হয়েছে এখন আবার সেশনজট তৈরি হওয়ার কারণে জীবন থেকে আরও সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে  আমাদের বয়স বাড়ছে কিন্তু চাকরির জন্য বয়সসীমা নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি হচ্ছে এবং দীর্ঘদিন ধরে পড়াশোনায় না থাকার মানসিকভাবে হীনম্মন্যতা দেখা দিচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে বহাল থাকা একমাত্র ব্যক্তি রেজিস্টার আলমগির চৌধুরী বলেন, এ দায়িত্ব অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোরশেদ হোসেনকে দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি দায়িত্ব নেওয়ার এক দিনের মাথায় পদত্যাগ করেছেন। নতুন উপাচার্য না আসা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। আর নতুন উপাচার্য মন্ত্রণালয় থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে দেয়া হবে। এ বিষয়ে আমাদের কোনো হাত নেই।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence