ভিসিবিহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের শঙ্কা কাটল, তবে...

বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা   © সংগৃহীত

ভিসিবিহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন পাওয়া নিয়ে শঙ্কা আপাতত কেটেছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষদের অনুপস্থিতিতে ডিন কাউন্সিল ও বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনা করে একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের মাধ্যমে জরুরি আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে, বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধে অর্থ ছাড় নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা কেটেছে। তবে, নতুন যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অধ্যাপক নেই সে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ নিয়ে শঙ্কা এখনো রয়েই গেছে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়কদের পাঠানো এক চিঠিতে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে দিয়ে সাময়িকভাবে আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানোর বিষয়টি জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

ওই চিঠিতে জানানো হয়, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ করছেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ অন্যান্য কর্মকর্তা পদত্যাগ না করা সত্ত্বেও কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের পদত্যাগ ও অনুপস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। নিয়মিত উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিল, ক্ষেত্রবিশেষে বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনা করে একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে দিয়ে সাময়িকভাবে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।

আরও পড়ুন : ভিসিবিহীন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যক্রম পরিচালনার নতুন পরামর্শ সরকারের

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মাঝে সস্তি ফিরে এসেছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে দিয়ে সাময়িকভাবে আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো নির্দেশনা আসায় সে দুশ্চিন্তা কেটেছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কর্মকর্তারা। 

জানতে চাইলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আলমগীর চৌধুরী শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সকালে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা ডিন ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে বসবো। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কোন জ্যেষ্ঠ প্রভাষককে আর্থিক ও প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব দেয়া হলে বেতনভাতা পরিশোধ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা কাটবে। আশা করি এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট কাটবে।

আরও পড়ুন : ভিসিবিহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন নিয়ে শঙ্কা

তবে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত অপেক্ষাকৃত নতুন যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনও অধ্যাপক নেই সে প্রতিষ্ঠানগুলোর জটিলতা এখনও কাটেনি। জানতে চাইলে নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সকালে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আসলে মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনায় বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট কাটলেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তা কাটেনি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন অধ্যাপক পদে কর্মরত কোন শিক্ষক নেই। এমন কী ডিনও নেই। আমাদের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম কবীর স্যার ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. পি এম সফিকুল ইসলাম স্যার ডিন ছিলেন। উপাচার্য স্যার শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা কোষাধ্যক্ষ স্যারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। কোষাধ্যক্ষ স্যার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি পদত্যাগ করবেন না। সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবেন তাই তিনি মেনে নেবেন। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারছেন না।

তিনি আরও বলেন,  এমন পরিস্থিতিতে আমাদের নিজস্ব শিক্ষকদের মধ্যে সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষক আছেন। তাই অধ্যাপক না থাকায় মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের উপকারিতা আমরা পাবো না। আমাদের জটিলতা এখনও রয়েই গেছে। 

আরও পড়ুন : এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম চালু হবে: ঢাবি উপাচার্য

গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বেশিরভাগ সরকারি ও সায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদত্যাগ করেন। দেশে অনুমোদিত সায়ত্বশাসিত ও সরকারি ৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৫০টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। সরকারের পট পরিবর্তনের পর ৪২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদ শূন্য হয়ে যায়। ভিসির পদ শূন্য থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মত পুরানো ও ঐতিহ্যবাহী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ধরনের সংকট না হলেও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বেতনভাতা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তা সৃষ্টি হয়েছিল। তবে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের মাধ্যমে জরুরি আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের সে শঙ্কা কেটেছে।


সর্বশেষ সংবাদ