ভিসিবিহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন নিয়ে শঙ্কা

বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা   © সংগৃহীত

সরকারের পট পরিবর্তনের পর দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা (ভিসি) পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করেছেন বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য-কোষাধক্ষ্যরাও। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রশাসনিক অস্থিরতা চলছে। নতুন করে শীর্ষ পদগুলোতে নিয়োগও হয়নি। তাই ভিসিবিহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের বেতনভাতা প্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রশাসনিক কর্মকর্তারা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এমন তথ্য জানিয়েছেন। 

প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মত পুরানো ও ঐতিহ্যবাহী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন সংকট না হলেও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংকট প্রবল। 

আরও পড়ুন : ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না’

গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বেশিরভাগ সরকারি ও সায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদত্যাগ করেছেন। দেশে অনুমোদিত সায়ত্বশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৫টি। এর মধ্যে ৫০টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এগুলোর মধ্যে ৪২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদ শূন্য আছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এগুলোর ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে  ‘কোনো অভিভাবক’ নেই বলেও জানান তিনি। ভিসির পদ শূন্য থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। 

ভিসি পদ শূন্য থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ভাতা নিয়ে শঙ্কা নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার বিপুল কুমার সাহা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, উপাচার্য না থাকলেও আমাদের শিক্ষকদের বেতন ভাতা পরিশোধে কোন অসুবিধা হবে না। আমাদের বেতন ভাতা অ্যাকাউন্টস ডিরেক্টরের মাধ্যমে ছাড় হয়। সেক্ষেত্রে কোন অসুবিধা নেই।

আরও পড়ুন : কাউকে হেনস্তা না করার আহ্বান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের

এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও রেজিস্ট্রার একইসঙ্গে পদত্যাগ করায় কিছু প্রশাসনিক সংকট সৃষ্টি হলেও ত্রাণকর্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডিনস কাউন্সিল। জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) রেজিস্ট্রারের রুটিন দায়িত্বে থাকা ডেপুটি রেজিস্ট্রার ড. এ বি এম আজিজুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার মহোদয় পদত্যাগ করার পর শিক্ষকদের বেতন ভাতা পরিশোধ নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। আমাদের ডিনস কাউন্সিল সভা করে সে জটিলতা দূর করেছে। ডিনস কাউন্সিল এ পরিবর্তিত সময়ে রেজিস্ট্রারের রুটিন দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার স্বাক্ষরে বেতন ভাতা পরিশোধের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। তাই এ নিয়ে জটিলতা হবে না। 

তবে ভিসি পদত্যাগ করায় নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অভিভাবক শূন্য হয়ে গিয়েছে। তাই ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাই প্রশাসনিক কর্মকর্তারা দ্রুত ভিসি নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। 

আরও পড়ুন : উপাচার্যদের পদত্যাগের হিড়িক কেন?

জানতে চাইলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আলমগীর চৌধুরী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনভাতাসহ সব খরচ উপাচার্যের অনুমোদনক্রমে হয়। এখনো মাস শেষ হয়নি তবে মাস ফুরানোর আগে ভিসি নিয়োগ না হলে শিক্ষকদের বেতনভাতা পরিশোধ করা যাবে না। কারণ এক টাকা হোক আর একশ কোটি টাকা হোক। ভিসি মহোদয়ের অনুমোদন ছাড়া তা পরিশোধের এখতিয়ার আমাদের নেই। দ্রুত ভিসি নিয়োগ দেয়া হলে এ সংকট অনেকটাই কাটবে। 

আরও পড়ুন : ঢাবিতে আস্থার কাউকে ভিসি নিয়োগ দিলে তাদের ডাকেও মানুষ এভাবে সাড়া দেবে

জানতে চাইলে নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের ভিসি মহোদয় পদত্যাগ করেছে। আমাদের কোষাধ্যক্ষ মহোদয়ের পদত্যাগের জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। আমাদের অফিসগুলো সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। আমরা অফিসে যেতে পারছি না। খুব সংকটময় পরিস্থিতি। 

তিনি আরও বলেন, উপাচার্য মহোদয়ের অনুমোদন ছাড়া বেতন ছাড় হয়নি। আর এখন তার চেয়ারটি শূন্য আছে। এমন পরিস্থিতিতে মাস শেষে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতনভাতা পরিশোধ করা যাবে না। সরকারের কাছে আবেদন জানাই, দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ নিয়ে এ সংকট থেকে আমাদের রক্ষা করুন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার আলমগীর হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষকদের বেতনভাতা পরিশোধে আমাদের এখানে কিছুটা সমস্য হচ্ছে। উপাচার্য স্যারের অনুমোদনক্রমে বেতন ভাতা হয়। তিনি না থাকলে যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকেন তার অনুমোদনে হয়। কিন্তু এবার কাউকে উপাচার্য পদে রুটিন দায়িত্ব দেয়া হয়নি। তাই মাস শেষ হওয়ার আগে উপাচার্য নিয়োগ না হলে বেতন ভাতা ছাড় নিয়ে অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বেতনভাতা নিয়ে শঙ্কিত। তারা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি-প্রোভিসি, ট্রেজারার একযোগে পদত্যাগ করেছেন। তাই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকট থেকে উত্তরণে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।


সর্বশেষ সংবাদ