সমন্বয়কদের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলে জবির মাসুদ রানার পদত্যাগ

মাসুদ রানা
মাসুদ রানা  © সম্পাদিত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অন্যতম সমন্বয়ক মাসুদ রানা এবার পদত্যাগ করেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারে ‘জবি সংস্কার আন্দোলন’ নামে যে আন্দোলন শুরু হচ্ছে সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে সর্বদা পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন তিনি। শনিবার (১৭ আগস্ট) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে একটি পোস্টের মাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। 

মাসুদ রানা সেই পোস্টে লেখেন, ‘আমি মাসুদ রানা। ২০২৪-এর কোটা সংস্কার আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসেবে শুরু থেকেই সকল আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এসেছি। সরকারি চাকরিতে কোটা নামক বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূত্রপাত হয় এ বছরের জুন মাসে এবং এই আন্দোলন জুলাইয়ের শুরু থেকে ক্রমান্বয়ে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় জবির লাইব্রেরিয়ানদের হাত ধরে এই আন্দোলনের সূচনা হয়। আমিও এতে সরাসরি অংশগ্রহণ করি। সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে অবস্থান করে সিনিয়র জুনিয়র সবার সাথে আলোচনা করে আন্দোলন যেন গতি পায় সেই কাজ করেছি।’

‘তারপর থেকে একটা প্রোগ্রামও আমি মিস দেইনি। এমনকি সকলকে সাথে নিয়ে প্রোগ্রামগুলোতে উপস্থিতি বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। যারা নিয়মিত আন্দোলনে ছিলেন তারাই জানেন আমি কী অবদান রেখেছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৯ জুলাই কারফিউ চলাকালীন সময়ে আমি আর নুর নবী দুজন মিলে ক্যাম্পাসের গেটের সামনে থেকে পুলিশকে সরিয়ে প্রোগ্রাম করতে চাইলে পুলিশ নুর নবীকে গ্রেপ্তার করে। আমরা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লেও আবার কবি নজরুল সরকারি কলেজের গেটের সামনে একত্রিত হয়ে স্লোগান দিতে থাকি। শুরু হয় পুলিশের গুলিবর্ষণ। আবারও সবাই ছড়িয়ে পড়ি। লক্ষ্মীবাজারে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সেদিন পুলিশকে রুখে দিতে হাজারো মানুষ লড়াই করি।’ 

‘আসরের পর পুলিশ সরাসরি গুলি করে। সেখানে আমাদের কয়েকজন ভাই শাহাদাতবরণ করেন। সেদিন শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার চেষ্টা করেছি। শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা দেশে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয় ছাত্রসমাজসহ জনসাধারণকে। পরবর্তীতে খুনি হাসিনাকে ছাত্রসমাজ নয় দফা দাবি উত্থাপন করে। কিন্তু সেটা না মানলে শুরু হয় এক দফা। মানুষ দলে দলে রাজপথে বেরিয়ে আসে। কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা ৫ আগস্ট ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি দিলে হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। শুরু হয় নতুন বাংলাদেশের সূচনা। গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যারা এখনো ছাত্র-জনতার সহযোগিতায় বেশ সফলতার সাথে দেশ পরিচালনা করছে।’

মাসুদ রানা আরও লেখেন, ‘বর্তমানে আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যকারিতা দেখছি না। সমন্বয়ক নাম ভাঙিয়ে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে হল দখলদারিত্বের অভিযোগ উঠছে, চাঁদাবাজির অভিযোগও উঠছে এদের বিরুদ্ধে। সবকিছু বিবেচনা করে আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বয়ক পদ থেকে পদত্যাগ করছি। কিন্তু আমি সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকব এটা কথা দিচ্ছি। জবির সংস্কারে জবি সংস্কার আন্দোলন নামে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে এখানে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে সর্বদা পাশে থাকব। প্রিয় জবিকে সংস্কার করেই ঘরে ফিরতে চাই। জবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস, জবি থেকে ভিসি নিয়োগসহ সকল দাবি পূরণে আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করব। সবাই দোয়ায় রাখবেন।’ 

পদ থেকে সরে দাড়াঁনোর বিষয়ে মাসুদ রানা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যেহেতু এখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আর কার্যকারিতা দেখছি না, দাবি-দাওয়াগুলোও পূরণ হয়ে গিয়েছে সে জন্য আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্ল্যাটফর্ম জবি সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে কাজ করে যাব।’

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ইউনিটকে নেতৃত্ব প্রদান করা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নূর নবী সমন্বয়ক পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তবে সমন্বয়ক থেকে সরে গেলেও যেকোনো আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। শনিবার (১৭ আগস্ট) সকালে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দেওয়া এক পোস্টে এ কথা জানিয়েছেন নূর নবী।


সর্বশেষ সংবাদ