কোটি টাকার গেস্ট হাউসের দখল ছাড়লেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য

অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈন
অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈন  © ফাইল ছবি

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে কোটি টাকার গেস্ট হাউস ‘কুক্ষিগত’ করে রাখার অভিযোগ ছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈনের বিরুদ্ধে। শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, তার এমন বিরূপ আচরণে ঢাকায় অবস্থিত ওই গেস্ট হাউস তিনি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট অন্য কেউ ব্যবহারের সুযোগ পেতেন না।

গেল বছর থেকে উপাচার্যের এমন আচরণ নিয়ে ক্ষোভ ছিল শিক্ষকদের মাঝে। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমেও শিরোনাম হয়েছে এ গেস্ট হাউস। বিষয়টি নিয়ে এমন আলোচনা-সমালোনার মাঝে এবার গেস্ট হাউসের দখল ছেড়েছেন তিনি। গত ২৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আমিরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পুনরায় ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয় ওই গেস্ট হাউস।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সালে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজধানীর কমলাপুরে অবস্থিত এ গেস্ট হাউজ ক্রয় করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। ব্যবস্থা আছে জরুরি সভার আয়োজনেরও। তবে দীর্ঘদিন ব্যক্তিগতভাবে ‘কুক্ষিগত’ করে রাখার কারণে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আব্দুল মঈন ছাড়া কেউই সেখানে যেতে পারতেন না। চাবিও রেখেছিলেন নিজের নিয়ন্ত্রণে।

ওই সময়ে গেস্ট হাউজে নিয়োজিত একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট দপ্তরে বদলি করে সেখানে তৈরি করে রাখা হয়েছিল শূন্যতা। পরে ওই পদে গত ১৯ মার্চ মো. রতন মিয়া নামের একজনকে নিয়োগ দেন উপাচার্য। এছাড়া দীর্ঘ ৮ মাস গেস্ট হাউস নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখলেও এটি ব্যবহারে আয়-ব্যয় সংক্রান্ত কোনো তথ্য তিনি দেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার পরিচালক ও সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মিজানুর রহমান বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী গেস্ট হাউজে থাকতে হলে সবাইকে ১০০ টাকা করে প্রতিদিন দিতে হয়। ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার থেকে শুরু করে সবার জন্য একই নিয়ম। টাকা না দিয়ে গেস্ট হাউস ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া সেখানে যারা যান সবাইকে খাতায় এন্ট্রি করে ঢুকতে হয়, বের হতে হয়।

আরও পড়ুন: ঢাকায় কোটি টাকার গেস্ট হাউজ একাই ব্যবহার করেন কুবি ভিসি

এদিকে, নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে উপাচার্যের গেস্ট হাউস ব্যবহারের বিষয়ে কোনো তথ্য জানা না গেলেও উল্টো এটি ব্যবহারের ফি বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। আগে দিনে ১০০ টাকা দিয়ে গেস্ট হাউস ব্যবহার করা গেলেও সেটি এখন বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০০ টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, ওনার অনিয়ম দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, আত্মসাৎ এবং ভোগবিলাস এমন পর্যায়ে চলে গেছে যেটা আসলে শিক্ষক এবং উপাচার্য পদের মত মর্যাদা কোনোটাতেই রাখেননি। তিনি এতোদিন শিক্ষকদের গেস্ট হাউস ব্যবহার করতে না দিয়ে শিক্ষকদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করেছেন।

ফি বাড়ানো নিয়ে শিক্ষক নেতা মেহেদী হাসান বলেন, উপাচার্য কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে, অর্থ কমিটির সুপারিশ ও সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়াই নিজের স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ১০০ টাকার ফি ৩০০ টাকা করে দিয়েছেন। অথচ তিনি নিজেই সে অর্থ পরিশোধ না করে গেস্ট হাউসে অবস্থান করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. আইনুল হক বলেন, গেস্ট হাউজের জন্য আলাদা একটা নীতিমালা আছে। সেখানে বলা আছে শিক্ষক-কর্মকর্তারা যদি অবস্থান করে তাহলে নির্দিষ্ট একটা টাকা দিতে হবে। যদি ওনি (ভিসি) এতোদিন টাকা না দেন তাহলে এটা কোনোভাবে ন্যায় সংগত হবে না। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈনকে একাধিকবার কল দিলেও তার কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ