আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৪

৪ দিন পর কুবি শিক্ষক সমিতির আলোচনা সভা, অনুষ্ঠান না করায় প্রশাসনের সমালোচনা

মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে কুবি শিক্ষক সমিতির আলোচনা সভা
মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে কুবি শিক্ষক সমিতির আলোচনা সভা  © সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহিদ দিবস উপলক্ষ্যে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তনে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সংক্ষিপ্ত আলোচনার কথা বলা হলেও তা করা হয়নি। এজন্য মাতৃভাষা দিবসের চারদিন পর শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে এই আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভায় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলা ও মানবিক অনুষদের সাবেক ডিন ড. জি. এম. মনিরুজ্জামান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহেরসহ শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।

শুরুতে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, আমাদের মনে যখন কোনো কিছু চিন্তা করি তখন আমরা আঞ্চলিক ভাষায় চিন্তা করি। তারপর সেটাকে প্রমিত বাংলা ভাষায় রুপান্তর করি। এরপর ইংরেজি করি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসি থেকে তিন বার চিঠি এসেছে প্রত্যেক বিভাগে যেন বাংলা পড়ানো হয়। কিন্তু সেটা এখনো কেন কার্যকর হচ্ছে না জানি না।

আলোচনা সভায় মাতৃভাষা দিবসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আলোচনা সভা না করায় প্রশাসনের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন উপস্থিত আলোচকবৃন্দ। এরমধ্যে পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামিমুল ইসলাম, ড. কাজী কামাল উদ্দিন বলেন, পৃথিবীর একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন। কিন্তু এই মহান দিনেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো আলোচনা সভার আয়োজন করে নি। প্রথমে একটি চিঠি দিলেও পরে সেটা সংশোধন করেন—যা খুবই লজ্জাজনক।

তাঁরা আরও বলেন, বর্তমানে প্রশাসন শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি বিরোধ সৃষ্টি করে যাচ্ছেন; সবজায়গায় স্বৈরাচারী মনোভাব চাপিয়ে দিচ্ছেন যা সবার জন্য দুঃখজনক।

অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক ড. জি এম মনিরুজ্জামান ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, প্রথমেই আমি মধ্যযুগের কবি আব্দুল হাকিম এর বঙ্গবাণী কবিতার দুইটি চরণ উল্লেখ করবো “যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী, সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।” কথাটির অর্থ হল বঙ্গদেশে জন্মগ্রহণ করে, বাংলা ভাষাকে যারা ঘৃণা করে তার জন্ম নিয়ে সন্দেহ আছে। এবং আরো একটি লাইন আছে “নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়।” অর্থাৎ বাংলার আলো বাতাসে থেকে যদি বাংলা ভাষাকে ঘৃণা করে তাঁর এ দেশে থাকার কোনো অধিকার নেই।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে আমাদের অবস্থান এমন হয়েছে যেনতেনভাবে আমরা ইংলিশ বলতে পারলেই নিজেদের স্মার্ট মনে করি। ইংরেজি মিডিয়ামে মায়ের বাচ্চাদের ভর্তি করাতে পারলেই নিজেকে স্ট্যাটাস পূর্ণ মনে করি। অথচ ভারতীয় ভূখণ্ডে তিনশত বছর ধরে বাংলা ভাষার ব্যবহার সর্বজনীন ছিল। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন আমাদের হাতে ক্ষমতা আসলে বাংলা ভাষা সার্বজনীন করা হবে। পরবর্তীতে তিনি কথাও রেখেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে আমরা ভাষা চর্চার থেকে অনেকটাই সরে এসেছি।

আলোচনা সভার শেষে তিনি নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণা পেপারের পাশাপাশি যদি একটি বাংলায় প্রবন্ধ লিখতে বলা হত তাহলে বাংলা ভাষার চর্চা আরো বেশি হত।

আলোচনা সভার সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. মো. আবু তাহের বলেন, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাংলা ভাষা স্বীকৃতি লাভ করেছে। অমর একুশে আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা শেখায়। বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়কে হীরক রাজার দেশে পরিণত করছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর জন্য কোন বরাদ্দ না এনে ভিসি বাংলোর জন্য দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। যার মধ্যে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা বরাদ্দও এনেছে। অথচ আমাদের নতুন ক্যাম্পাসে একটি আধুনিক বাংলোর কাজ প্রায় সম্পন্ন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence