বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় তিন পত্রিকায় বক্তব্য প্রচার কুবি উপাচার্যের

অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন
অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন  © ফাইল ছবি

‘দুর্নীতি হচ্ছে তাই বাংলাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে’ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের দেওয়া এমন বক্তব্যের ব্যাখ্যা স্পষ্টকরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় দৈনিক পত্রিকায় প্রচারের অভিযোগ উঠেছে। ইউজিসি বলছে, ব্যক্তিগত কোনো বক্তব্যের প্রচারণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পয়সা ব্যবহারের সুযোগ নেই। তবে উপাচার্যের দাবি, শুরুতে তার মন্তব্য খণ্ডিতভাবে প্রচার করে বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিজের সুনাম ক্ষুণ্নের যে অপচেষ্টা হয়েছে—সেটি পুনরুদ্ধারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ খরচে বাঁধা থাকার কথা নয়।

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই একটি সংবাদপত্রের অনলাইন পোর্টালে ‘দুর্নীতি হচ্ছে তাই বাংলাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে: কুবি উপাচার্য’ শিরোনামে সংবাদ প্রচারিত হয়। সেদিন দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের কনফারেন্স কক্ষে মার্কেটিং বিভাগের একটি ব্যাচের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন। পরে নিজের এ মন্তব্য ভুলভাবে প্রচারিত হয়েছে দাবি করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন আকারে নিজের ব্যাখ্যা প্রচার করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া আমার বক্তব্যকে বিকৃত, খণ্ডিত ও মিসলিডিং করে যে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে—মানুষকে সে সম্পর্কে সঠিক বক্তব্য জানানোর জন্য আমাদের বিকল্প পথ অনুসরণ করতে হয়েছে। -উপাচার্য

২০২৩ সালের ১৩ আগস্ট দেশের একটি জাতীয় দৈনিক এবং কুমিল্লার একটি আঞ্চলিক দৈনিকে উপাচার্যের দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা প্রচার করা হয়েছে। পরদিন ১৪ আগস্ট আরও একটি জাতীয় দৈনিকে উপাচার্যের ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা প্রচারিত হয়।

বিষয়টি পুরোনো হলেও এতদিন উপাচার্যের মন্তব্যের ব্যাখ্যা প্রচারের অর্থ তার ব্যক্তিগত ছিল নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগার থেকে ব্যবহার করা হয়েছে—সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে গণমাধ্যমে উপাচার্যের ব্যাখ্যা প্রচারের জন্য খরচের হিসাবের একাধিক কপি সম্প্রতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে। যেখানে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল মঈনের নামে বিল করা হয়েছে। আর এতে জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হকের সিল-স্বাক্ষরও দেখা গেছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তিনটি জাতীয় দৈনিকে উপাচার্যের মন্তব্যের ব্যাখ্যা প্রচারের ব্যয় বাবদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা (ভ্যাট ট্যাক্সসহ) ব্যয় করা হয়েছে।

এমন প্রচারণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞাপন প্রচারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা কিংবা বিধিমালা অনুসরণ করা হয় কিনা জানতে চাইলে (ভারপ্রাপ্ত) জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, সুনির্দিষ্ট কোন বিধিমালা নেই। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি কাজটি করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, শিক্ষার্থীদের এক অনুষ্ঠানে ক্রিটিক্যাল থিংকিং বিষয়ে বোঝাতে গিয়ে আমি একটি বক্তব্য দিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে আমি শিক্ষার্থীদের বলেছিলাম তারা যেন মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে তাদের ক্রিটিক্যাল থিংকিং গড়ার প্রতি জোর দেয়। সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আমার বক্তব্য অনুধাবন করলেও কতিপয় হলুদ সাংবাদিক—যারা বিভিন্ন সময়ে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক উন্নয়নের পথে বাধা দিয়েছে। তারা আমার বক্তব্যকে বিকৃত ও খণ্ডিতভাবে প্রচার করেছে। যে কথা আমি বলিনি, সে ধরনের একটি বক্তব্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানের এই বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ নষ্ট করেছে।

তিনটি জাতীয় দৈনিকে উপাচার্যের মন্তব্যের ব্যাখ্যা প্রচারের ব্যয় বাবদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা (ভ্যাট ট্যাক্সসহ) ব্যয় করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘‘সরকারি অর্থ খরচ করে ব্যক্তিগত বক্তব্যের ব্যাখ্যা প্রচারের কোন সুযোগ নেই। এমনকি ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রচারের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম ব্যবহারেও সুযোগ নেই। উপাচার্য কোন পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন সেটি তিনি সঠিক বলতে পারবেন।’’

এ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিবিরুদ্ধ উল্লেখ করেন শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, উপাচার্য একজন মুখোশধারী শিক্ষাবিদ। মুখে আদর্শের কথা বললেও কার্যক্রমে দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের যত বিধিমালা আছে, কোনটিকে তিনি মানেন না। আবার যখন দুর্নীতির পক্ষে সাফাই গেয়ে দেয়া বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়, তখন ব্যাখ্যা প্রচার করে ব্যক্তিগত দুর্নাম গোছানোর জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ খরচ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ৩৯ এর উপধারা ১(গ) অনুসারে ‘আর্থিক নীতিমালা ও হিসাব ম্যানুয়াল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রণীত প্রবিধানে উল্লিখিত ৫.৪(২) অনুচ্ছেদে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে যথার্থতা এবং জবাবদিহিতার কথা বলা হয়েছে।

পাবলিক প্রোগ্রামে উপাচার্যের মন্তব্যের ব্যাখ্যা প্রচারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতি বলে উল্লেখ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, বক্তব্য প্রচারের জন্য তিনি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিতে পারতেন। এ ধরনের ব্যক্তিগত অভিমত প্রচারের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যয়ের কোনো সুযোগ নেই। এটি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং তিনি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। তাকে যে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে,   কোনোভাবেই সেটির অপব্যবহার করতে পারেন না। কাজেই এখানে দুর্নীতি হয়েছে। একজন উপাচার্যের কাছ থেকে এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সরকারি অর্থ খরচ করে ব্যক্তিগত বক্তব্যের ব্যাখ্যা প্রচারের কোন সুযোগ নেই। এমনকি ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রচারের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম ব্যবহারেও সুযোগ নেই। -ইউজিসি

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মঈন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাকে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে জড়িয়ে এমন প্রচারণায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও প্রতিবাদ করেছেন। পরে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিবাদলিপি দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের প্রতিবাদ প্রকাশ করেনি।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া আমার বক্তব্যকে বিকৃত, খণ্ডিত ও মিসলিডিং করে যে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে—মানুষকে সে সম্পর্কে সঠিক বক্তব্য জানানোর জন্য আমাদের বিকল্প পথ অনুসরণ করতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয় এমন কোন অপপ্রচার সম্পর্কে দেশের নাগরিকদের সঠিক তথ্য অবগত করার ক্ষেত্রে কোনও বাঁধা থাকার কথা নয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence