বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ছে, উদ্বিগ্ন প্রশাসন
- আরিফ হোসাইন, ববি
- প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:১৪ AM , আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:৪৯ AM
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) একের পর এক ঘটেই চলেছে আত্মহননের ঘটনা। সবশেষ এক বছরে প্রায় ডজনখানেক আত্মহত্যা চেষ্টার ঘটনার সাক্ষী বিশ্ববিদ্যালয়টি। এদের মধ্যে দুজন ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে ত্যাগ করেছেন ইহলোকের মায়া। এভাবে ঘন ঘন আত্মহত্যা চেষ্টার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের এমন প্রবণতা থেকে বের করে আনতে দ্রুত কাউন্সিলের ব্যবস্থা করতে হবে।
সর্বশেষ গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের একটি মেসে নিজ কক্ষে গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী বৃষ্টি সরকার। গত জুলাইয়ে একই কায়দায় মেসের কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিন রিভানা। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা চেষ্টা করেছেন।
শিক্ষার্থীরা যেভাবে ঘন ঘন নিজেদের জীবননাশের মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন; তা শিক্ষক হিসেবে আমাদের রীতিমতো পীড়া দিচ্ছে। প্রশাসন তাদের এমন পদক্ষেপে উদ্বিগ্ন। -প্রক্টর, ববি
এদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলের দুজন, শেরে বাংলা হলের তিনজন, শেখ হাসিনা হলের একজন, রূপাতলী হাউজিং এলাকায় নিজ নিজ মেসে দুই ছাত্র ও এক ছাত্রী, শেখ হাসিনা হলের সামনের একটি বাসায় এক ছাত্র এবং ঝালকাঠিতে নিজ বাসায় এক ছাত্র আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এসব ঘটনার বেশিরভাগই প্রেমঘটিত ব্যাপার থেকে কিংবা নিঃসঙ্গতা থেকে ঘটতে পারে।
একই কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ. ক. ম. রেজাউল করিমও। তিনি বলেন, বর্তমানে শিক্ষার্থীরা প্রেম-ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ছেন। সম্পর্কের কিছুদিনের মাঝেই তাদের মাঝে বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক প্রসারে সেই হার অনেক বেশি হচ্ছে।
তিনি বলেন, একই ব্যক্তি একসঙ্গে একাধিকজনের সঙ্গে সম্পর্ক করছে। আবার অনেক সময় দেখা যায় একটা মেয়ের সঙ্গে একাধিক ছেলে প্রেম করতে চায়। সুতরাং খুব সহজেই সে অন্য একজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে পারছেন। এখানে মেয়েদের জন্য বিষয়টা যেমন সহজ, ছেলেদের ক্ষেত্রে এটা এতো সহজ নয়। আবার ছেলেদের থেকে অনেকে শারীরিক সম্পর্ক করে মেয়েদের ব্লাকমেইল করেন।
একটা সম্পর্কের মাঝে যেকোনো একজন প্রতারণা করেন। তখন অন্যজন সেটা মেনে নিতে পারেন না। তখনই কিন্তু বিপরীত ব্যক্তি অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন। -অধ্যাপক রেজাউল করিম, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাবি
বিশ্ববিদ্যালয়ে গত চার বছর যাবৎ শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দা নাবিলা হোসেন। তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা নানা কারণে মানসিক জটিলতা, সম্পর্কের টানাপোড়েন, উদ্বিগ্নতা ও নিঃসঙ্গতায় সময় কাটান।
তিনি বলেন, পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এসব শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এত বছরেও একজন সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেয়া হয়নি। সাইকোলজিস্ট থাকলে এ ধরনের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হতো। তাই আমি বলবো এখানে একজন হলেও দ্রুত সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ. ক. ম. রেজাউল করিম বলেন, এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কাউন্সিলের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষক ও অভিভাবকের উচিত শিক্ষার্থীদের সাথে আরও বন্ধু-সুলভ সম্পর্ক রাখা। তাদের মোটিভেশন দেওয়া, তাদের সমস্যাগুলো জানা ও সমাধানের চেষ্টা করা।
শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ার কারণ উল্লেখ করে অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একটা সম্পর্কের মাঝে যেকোনো একজন প্রতারণা করেন। তখন অন্যজন সেটা মেনে নিতে পারেন না। তখনই কিন্তু বিপরীত ব্যক্তি অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন। এছাড়াও পারিবারিক অশান্তি, হতাশার কারণেও মানুষ আত্মহত্যা করেন। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রেমঘটিত কারণই বেশি দায়ী।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা চেষ্টা করেছেন। এদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলের দুজন, শেরে বাংলা হলের তিনজন, শেখ হাসিনা হলের একজন ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। -পরিসংখ্যান
এদিকে, সাম্প্রতিক এসব দুর্ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত প্রক্টর ড. মো. আবদুল কাইয়ুম বলেন, শিক্ষার্থীরা যেভাবে ঘন ঘন নিজেদের জীবননাশের মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন; তা শিক্ষক হিসেবে আমাদের রীতিমতো পীড়া দিচ্ছে। প্রশাসন তাদের এমন পদক্ষেপে উদ্বিগ্ন।
আবদুল কাইয়ুম বলেন, শিক্ষার্থীদের এরকম সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিগগিরই আত্মহত্যা প্রবণতারোধে বিভিন্ন কর্মসূচি হতে নেবো আমরা। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে।