প্রোগ্রামে না যাওয়ায় কক্ষ বন্ধ করে বদরুন্নেসা ছাত্রীকে মারধর ছাত্রলীগের

বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ
বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ  © ফাইল ফটো

বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের এক ছাত্রীকে কক্ষের দরজা বন্ধ করে মারধর ও হেনস্তা করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবা আক্তার সাইমন। তিনি প্রায়ই ছাত্রীদের এভাবে  মারধর করেন বলে অভিযোগ ছাত্রীদের। তবে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে প্রতিপক্ষরা ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার জন্য এ ধরনের কথা ছড়ান।

শনিবার (০৪ নভেম্বর) রাতে কলেজের হযরত ফাতেমা (রা.) নতুন হলে এ ঘটনা ঘটে। এ হলেই থাকেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবা আক্তার সাইমন। এর আগে দিন শুক্রবার রাতে সাইমুনের অনুসারীরা হলটির ছাত্রীদের একটা তালিকা নিয়ে যান।

মারধরের শিকার ওই ছাত্রীর নাম হুমায়রা মনি। তিনি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগরে ২০১৮-১৯ সেশনের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী। তার শেষ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। আগামী ২০ নভেম্বর তার পরীক্ষা শেষ হবে।

হুমায়রা অভিযোগ করে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পরীক্ষা ও অসুস্থ থাকার কারণে আমি আমাদের রুম থেকে যেতে পারিনি। তবে যাদের পরীক্ষা নেই তারা প্রোগ্রামে গিয়েছেন। আর আমরা যারা প্রোগ্রামে যাইনি, তাদেরকে তার রুমে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আমাদের সবাইকে কান ধরে দাড়া করিয়ে রাখেন। আমরা তার কক্ষে গিয়ে সেখানে আরও বেশ কয়েকজনকে এভাবে কান ধরে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছি।

তিনি বলেন, সাইমন আমাকে কান ধরতে বললে আমি পরীক্ষা ও অসুস্থতার কথা বলে প্রথমে তা করতে অস্বীকৃতি জানাই। তখন আমাকে সে অকথ্য ভাষায় কথা শোনায়। আমি তাকে আমার সমস্যার কথা বলতে গেলে সে কক্ষের দরজা বন্ধ করে আমাকে ঝাড়ু দিয়ে মারধর শুরু করে। এতে আমার শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। আমি সুস্থ হলেও আর তাদের প্রোগ্রামে যাবো না। আমাকে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

আরও পড়ুন: বদরুন্নেসা কলেজছাত্রীকে মারধর করে কক্ষ দখলের চেষ্টা ছাত্রলীগের

সাইমনের রুমে কান ধরে দাড়িয়ে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বলেন, সাইমুন একাধিক মেয়েদেরকে প্রোগ্রামে না যাওয়া, চাঁদা না দিতে চাওয়ার কারণে প্রায় সময়ই মারধর করেন। ছাত্রীদের মেরে ফেলারও ভয় দেখান। আমরা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত না। তবুও তারা আমাদের জোরপূর্বক গ্রোগ্রামে নেয়, ভয়ভীতি দেখায়।

হুমায়রার সঙ্গে সাইমনের বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তিনি (হুমায়রা) বলেন, উনি আমাকে বলেন তুমি সারাবছর কি করেছো, পড়াশোনা করো নাই, পরীক্ষার আগেই কেন পড়তে হবে? এসব বলে আমাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। তখন আমি উনাকে বলি, আমি কিন্তু আপনার এসব আচরণের কথা সাদ্দাম (ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি) ভাইকে বলে দেব। তখন তিনি আামকে পাল্টা উত্তর দেন ‘তুই তাহলে তোর সাদ্দাম ভাইয়ের হলে গিয়ে থাক’।

এসময় সাইমনের সঙ্গে ওই কক্ষে কলেজের অর্থনীতি বিভাগের (২০১৮-১৯) শ্রাবণী আক্তার তনিমাসহ শাখা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

তবে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইমন ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, গতকাল আমাদের প্রোগ্রাম ছিল। আমাদের সবাই প্রোগ্রামে গিয়ে ক্লান্ত। কাউকে এ ধরনের মারধরের ঘটনা ঘটেনি। মনিকে মারধরের ঘটনার কয়েকটি ছবি সাইমনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, তাকে (হুমায়রা মনি) সরাসরি এসে অভিযোগ দিতে বলবেন। এ ধরনের ছবি গুগল থেকে ডাউনলোড করে দেখানো যায়।

সাইমন বলেন, ‘আমরা কোনো ছাত্রীকে জোরপূর্বক কর্মসূচিতে নিই না। এ ধরনের যারা অভিযোগ দেন তারা আসলে ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে থাকেন।’ সাদ্দামের কক্ষে গিয়ে থাকার বিষয়ে সাইমনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এ কথা বলেননি বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, এগুলো মিথ্যা কথা। আমি তাকে এ ধরনের কথা বলিনি।

জানতে চাইলে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সেলিনা হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে গতকাল প্রোগ্রাম করে ক্লান্ত থাকায় সেভাবে খোঁজ নিতে পারিনি। আর এ বিষয়ে কেউ আমাকে কোন ধরনের তথ্য জানায়নি। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে ছাত্রলীগ তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


সর্বশেষ সংবাদ