একক ভর্তি পরীক্ষা

অধ্যাদেশে সিদ্ধান্ত আসবে দ্বিতীয়বার ভর্তিসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ শেষে একটি কেন্দ্র থেকে বের হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ শেষে একটি কেন্দ্র থেকে বের হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা  © ফাইল ছবি

সম্প্রতি দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে দ্রুত একটি অধ্যাদেশ জারির সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। ফলে দেশের সব সরকারি উচ্চশিক্ষালয়ে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হতে যাচ্ছে একক ভর্তি পরীক্ষা। আসন্ন ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা থেকে একক ভর্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হবে দেশের সব পাবলিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী গ্রহণ প্রক্রিয়া। এ নিয়ে একটি খসড়া চূড়ান্ত করে দেশের রাষ্ট্রপতি এবং দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠাবে ইউজিসি। এরপর তা গৃহীত হলে জারি হবে অধ্যাদেশ (প্রেসিডেন্ট অর্ডার) আকারে এবং এটি কার্যকর থাকবে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) কার্যক্রম শুরুর আগ পর্যন্ত।

ইউজিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য তারা সম্প্রতি একটি বৈঠক করেছেন। বৈঠকে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের নিয়ে গঠিত কমিটির একই সদস্যদের নিয়ে আরেকটি বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এরপর তাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তাবনা সংযোজন করে তা খসড়া আকারে রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ে পাঠানো হবে। এরপর সেখান থেকে খসড়াটি চূড়ান্ত করে প্রকাশ করা হবে অধ্যাদেশ আকারে। অধ্যাদেশটি কার্যকর থাকবে এনটিএ কার্যক্রম শুরুর আগ পর্যন্ত।

ইউজিসির সভায় একক ভর্তি সংক্রান্ত কমিটির সদস্যরা

নতুন খসড়ায় একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের ক্ষেত্রে নেতৃত্বে থাকবে প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় বিবেচনায় শিক্ষার্থী ভর্তিতে থাকতে পারে ভিন্ন ভিন্ন শর্ত এবং বিধান। এছাড়াও যে-সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ থাকে না—খসড়ায় সিদ্ধান্ত আসবে তাদের বিষয়েও। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বয়সসীমার শর্ত তুলে দেওয়ার পক্ষে; এক্ষেত্রেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে অধ্যাদেশ জারির পর—জানিয়েছে ইউজিসি ও সংশ্লিষ্ট কমিটির একাধিক সদস্য।

একক ভর্তি নীতিমালার ফলে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় উচ্চশিক্ষালয়গুলোও আসবে একক ভর্তি পরীক্ষায়। এর আগে এসব প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও নীতিমালার অধীনে শিক্ষার্থী ভর্তির  জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করার সুযোগ পেত।

দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) জানিয়েছে, এই অধ্যাদেশ জারি হলে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি ভর্তি পরীক্ষায় আসা বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। ফলে দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী নিতে হবে একটি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে। এতে আসবে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় উচ্চশিক্ষালয়গুলো। এর আগে এসব প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও নীতিমালার অধীনে শিক্ষার্থী ভর্তির  জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করার সুযোগ পেত। 

চলতি বছরের এপ্রিলে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কমিশনকে দায়িত্ব দিয়ে রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে একটি আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আগে চলতি বছরের জুলাই মাসে একক ভর্তি পরীক্ষা নিতে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে ১৫ সদস্যের একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়। ইউজিসি আগামী একমাসের মধ্যে খসড়াটি সম্পন্ন করে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠাবো এবং এর মধ্যেই সেখান থেকে এটি অধ্যাদেশ আকারে আসতে পারে।

এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য, স্বায়ত্তশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ভর্তি পরীক্ষা অন্তর্ভুক্তিমূলক করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বার্থে একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বয়সসীমার শর্ত তুলে দেওয়ার পক্ষে; এক্ষেত্রেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে অধ্যাদেশ জারির পর—জানিয়েছে ইউজিসি ও সংশ্লিষ্ট কমিটির একাধিক সদস্য।

উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ওই কমিটির প্রথম সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে একক আওতাভুক্ত করে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের জন্য একটি অধ্যাদেশ জারি করা প্রয়োজন। ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) গঠনের আগ পর্যন্ত এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যাই থাকুক না কেন; এই অধ্যাদেশ তার উপরে প্রাধান্য পাবে। কমিশনের একজন সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটিকে অধ্যাদেশের খসড়া তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 

কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের অভিপ্রায়ের বা আদেশের বাইরে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের কোন সুযোগ নেই জানিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর আলমগীর বলছেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং তাঁর অভিপ্রায় অনুযায়ী জনস্বার্থে একক ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে যে আদেশ জারি করা হয়েছে সেটি বাস্তবায়নে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিক্ষকদের ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।

নতুন খসড়ায় একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের ক্ষেত্রে নেতৃত্বে থাকবে প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয় বিবেচনায় শিক্ষার্থী ভর্তিতে থাকতে পারে ভিন্ন ভিন্ন শর্ত এবং বিধান। এছাড়াও যে-সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ থাকে না—খসড়ায় সিদ্ধান্ত আসবে তাদের বিষয়েও।

একক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম জানান, এতে কোনো সন্দেহ নেই, একক ভর্তির বিষয়টি একটি ভালো সিদ্ধান্ত। শিক্ষার্থীরা একটি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার জন্য আসতে পারলে তা সবার জন্যই ভালো হবে এবং শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাগব হবে। সেজন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়কে একক ভাবে কাজ করতে হবে বলেও মনে করেন এই উপাচার্য।

এ নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ জানিয়েছেন, একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে কমিশনে একটি সভা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আমরা কমিটির সদস্যদের নিয়ে সামনে আরেকটি সভা করবো। এরপর এ নিয়ে খসড়া করে তা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠানো হবে। খসড়ায় আমরা সব বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করবো এবং আমাদের খসড়ার উপর মহামান্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয়েরও একটি পর্যালোচনা থাকবে। পরবর্তীতে তা চূড়ান্ত করে অধ্যাদেশ আকারে প্রকাশ করা হলেই তা সবার জন্য অবশ্য পালনীয় হবে।


সর্বশেষ সংবাদ