প্রতিষ্ঠার ১০ বছরেও ভাড়া বাসায় চলছে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম
- আব্দুল কবীর ফারহান
- প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৫১ PM , আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৫৫ PM
২০১৫ সালে রাজধানীর ধানমণ্ডিস্থ আন্তবোর্ড কম্পিউটার সেন্টারে সরকারের দেয়া কার্যালয়ে কার্যক্রম শুরু করে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। কিছুদিন পরে প্রয়োজন হলে রাজধানী মোহাম্মদপুরের বসিলায় একটি ভাড়া বাসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যালয় স্থানান্তরিত করা হয়। পরবর্তীতে আরও দুটি ভবন ভাড়া নেয় এই বিশ্ববিদ্যালয়। সেই থেকে ভাড়া তিনটি বাসায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার ১০ বছরেও নিজস্ব কোন ভবন নেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। আরও ৪ বছর এই ভাড়া ভবনে থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের শীর্ষস্থানীয় উলামা-মাশায়িখের দাবি অনুযায়ী, ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে পাস করা হয় বহুল প্রতিক্ষিত এফিলিয়েটিং (স্বতন্ত্র) ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। ৩৭ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় মাদ্রাসা শিক্ষাধারার ফাযিল, কামিল ও স্নাতক, স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ডিগ্রি প্রদান করা হয়। মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন, ফাযিল, কামিল ও স্নাতক, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষাক্রম/পাঠ্যপুস্তক অনুমোদন, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষাঙ্গনগুলোর পরিবীক্ষণ ও পরীক্ষা পরিচালনা-সহ সার্বিক তত্ত্বাবধান করে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণসহ উন্নয়ন কাজের জন্য ২০১৭ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (একনেক) ৪১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা পাস হয়। তবে সেসময় শুধু জমি অধিগ্রহণ ছাড়া আর কোন কাজই হয়নি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।
জানা যায়, জমি অধিগ্রহণের জন্য মোট বাজেটের ৩৬ শতাংশ বরাদ্দ থাকলেও এরপ্রায় দ্বিগুণ খরচে জমি কিনা হয়। ২০ একর জমি কিনতে বিশ্ববিদ্যালয়টি ব্যয় করে ২৯৭ কোটি টাকা ব্যয় করে। এতেই বাজেটের ৭১ শতাংশ খরচ হয়ে যায়। ফলে বাকি ৬৪ শতাংশ কাজের জন্য ২৯ শতাংশ অর্থ বাকি থাকাতে উন্নয়ন কাজে আর হাত দেয়া হয়নি। অধিগ্রহণ করা জমিতে দেয়াল নির্মাণ এবং আগাছা পরিস্কারের কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজে হাত দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি।
আরও পড়ুনঃ অন-ক্যাম্পাস অনার্স চালু নিয়ে মুখোমুখি ইউজিসি-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
বাকি পূর্তকাজ করার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিভাইস ডিপিপি পাঠানো হবে। এজন্য ৬০০ কোটির অধিক প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (একনেক) পাস হয়ে আসলে উন্নয়ন কাজ শুরু হবে। সব মিলিয়ে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবনে যেতে ২০২৬ সাল নাগাদ সময় লাগতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, এরমধ্যে জমি অধিগ্রহণ আইন সংশোধন হওয়াতে এই টাকায় প্রকল্প কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির সময় জমি অধিগ্রহণে দেড়গুণ ক্ষতিপূরণ দেয়ার আইন থাকলেও এই আইন সংশোধনের পর তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দেয়ার নিয়ম করা হয়। প্রস্তাবে ১৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি অধিগ্রহণের কথা থাকলেও বাজেট পাস হওয়ার পর নতুন নিয়ম অনুযায়ী ঢাকা জেলা প্রশাসন ২৯৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে জমি কেনা হলেও আর ভবনের কাজ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আগের প্রকল্প পাস হওয়ার পর শুধুমাত্র জমি অধিগ্রহণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগের পাস হওয়া প্রকল্পে কাজ শুরু করা যায়নি। ফলে রিভাইস উন্নয়ন প্রকল্পের (ডিপিপি) খসড়া তৈরির কাজ চলছে। প্রয়োজনীয় সকল কাজ সম্পন্ন করে একনেকে পাঠানো হবে। সেখান থেকে পাস হয়ে আসলে কাজ শুরু হয়ে যাবে।
এই বিষয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিচালক প্রফেসর ড. রফিক আল মামুন বলেন, প্রকল্প বাজেট তৈরি করার সময় আগের ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী জমি ক্রয়ে দেড়গুণ ক্ষতিপূরণ দেয়া হত। ২০১৭ সালের নতুন আইন অনুযায়ী তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দেয়া লাগে। আগের তৈরি করা প্রকল্প ব্যয় অনুযায়ী, ১৫২ কোটি টাকায় জমি অধিগ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু নতুন আইনে অধিগ্রহণেই ব্যয় আসে ২৯৭ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা। এক্ষেত্রে ১৪৭ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় আসাতে পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক মন্ত্রীকে দেয়া ক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে আন্তখাত সমন্বয় করে অন্য খাতের টাকা থেকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় করে জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এতে বাকি পূর্তকাজ করার মত টাকা না থাকায় রিভাইস ডিপিপি তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের সংশোধন প্রস্তুতির কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রিভাইস ডিপিপির কাজ সম্পন্ন হলে তা পরিকল্পনা কমিশনের নিকট পাঠিয়ে দেয়া হবে। প্ল্যানিং কমিটি প্রস্তাব মূল্যয়ন করে সেটির উপর সুপারিশ করবে। সেই আলোকে আমাদের পক্ষ থেকে কারেকশন করে পাঠানো হবে।
আরও পড়ুনঃ রাবির জিয়া হলের অবৈধ শিক্ষার্থীদের সিট ছাড়ার নির্দেশ
রিভাইস প্রকল্পে ৬১৩ কোটি টাকার মত একটা পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হচ্ছে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর। এতে ১০ তলা একটি ভবন করা হবে, যার প্রতিটি ফ্লোরে থাকবে প্রায় ৩৭ হাজার স্কয়ারফিট। এতে গবেষণা, লাইব্রেরি, প্রশিক্ষণ কক্ষ, পরীক্ষা দপ্তর, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার কার্যালয়সহ সকল কিছু এই ভবনে করা হবে।
ধানমণ্ডি আন্তবোর্ড কম্পিউটার সেন্টারে সরকারের দেয়া অফিসে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানিয়েছেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ। তিনি বলেন, এর কিছুদিন পরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জরুরি কাগজপত্র আনার দরকার হলে বসিলায় একটি বাসা ভাড়া করা হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী ভাড়া বাসার সংখ্যা বাড়ানো হয়। বার্ষিক চুক্তিতে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়েরে এসব বাসা ভাড়া নেয়া হয়েছে, মাসিক নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করা হয়। আরবি বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের আয় থেকে এসব ব্যয় বহন করছে, এখানে সরকারের কোন টাকা দিতে হয় না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ইতিমধ্যে ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩ একর জমিতে সৌদি আরবের দূতাবাসের খরচে আরবি ইনস্টিটিউট নির্মিত হবে। জমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জমি নেওয়াতে ভবনের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এখন নতুন করে আমাদের ফিজিক্যাল মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ চলমান রয়েছে।
উপাচার্য বলেন, আপাতত ছোট পরিসরে জমিতে দেয়াল নির্মাণ ও আগাছা পরিস্কারের কাজ চলছে। রিভাইস ডিপিপি পাস হয়ে গেলে ভবনের কাজ শুরু হয়ে যাবে। এই কাজটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশল বিভাগ দেখবে। আশা করি ২০২৬ সালের মধ্যে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ভবনে কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।