সরকারি বিএম কলেজ

হোস্টেলের খাবার মানহীন ও অপুষ্টিকর, অভিযোগ নারী শিক্ষার্থীদের 

বিএম কলেজের হোস্টেলের খাবার
বিএম কলেজের হোস্টেলের খাবার  © টিডিসি ফটো

বরিশালের সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের বনমালী গাঙ্গুলি ছাত্রী হোস্টেলের ডাইনিংয়ে শিক্ষার্থীদের মানহীন খাবারের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। তবে সম্প্রতি এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। অপুষ্টিকর খাবার খেয়ে দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে আবাসিক শিক্ষার্থীরা।  এছাড়া ডাইনিংয়ে মানহীন ও অপুষ্টিকর খাবার অতিরিক্ত মূল্যে খাওয়াচ্ছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।   

শিক্ষার্থীরা বলছে, হোস্টেল তত্ত্বাবধয়কেরকের অবহেলা এবং ডাইনিং ম্যানেজাররা নিজের ইচ্ছে মতো অল্প টাকায় বাজার করে ভাওচারে বেশি টাকা দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে নেওয়ার ফলেই মূলত খাবারের মান উন্নয়ন হচ্ছে না। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষার্থীদের টাকায়  ডাইনিংয়ের ম্যানেজার, ঝাড়ুদার, গেট দারোয়ান, নাইট গার্ডসহ ২০ জনের অধিক ডাইনিংয়ে ফ্রিতে খাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী জানান, আমাদের ডাইনিংয়ে ফরমালি কেউ দায়িত্বে নেই। তবে প্রত্যেক মাসের শেষ তারিখে স্যাররা সবাইকে ডেকে তাদের মধ্য থেকে ডাইনিংয়ের ম্যানেজার নির্ধারণ করে দেয় তারাই ডাইনিং চালায়। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে সকল শিক্ষার্থীরা আর্থিকভাবে দুর্বল থাকে তারাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডাইনিং এর দায়িত্ব নেয়। কেননা যারা ডাইনিং এর দায়িত্বে থাকেন তাদের খাওয়াটা ফ্রি থাকে। এছাড়া ওই মাসে তাদের খাওয়ার খরচও বেচেঁ যায় এবং ডাইনিংয়ের বাজারের টাকা থেকে কিছু টাকা ফাঁকি বাজি করেও নিতে পারে। ম্যানেজাররা তাদের ইচ্ছেমত বাজার করে সবকিছুর বেশি বেশি হিসেব লিখে ভাওচার দেখায় স্যারদের। এছাড়াও নাইট গার্ড, পরিষ্কার - পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ হোস্টেলের সকল স্টাফরাও ডাইনিংয়ে ফ্রী তে খাচ্ছে। আমার জানা মতে হোস্টেল থেকে ডাইনিংয়ে কোনো অনুদান আসেনা। সুতরাং বলা যায় আমাদের টাকায় তারাও খাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বনমালী গাঙ্গুলি ছাত্রী হোস্টেলে কুহেলি,কাকলী,করবী ও আমেনা বেগম নামের চারটি ভবনে দুই হাজারের মত শিক্ষার্থী থাকেন। প্রতিটি ভবনে ডাইনিং থাকলেও তা বন্ধ; মাত্র একটিতে ডাইনিং চালু রয়েছে। বাহিরের খাবার নিয়ে ভিতরে প্রবেশের নিষেধ রয়েছে। হোস্টেলের ভিতরে অন্য কোনো ডাইনিং, ক্যান্টিন বা নিজেদের রান্না করে খাওয়ার কোনো ব্যাবস্থা নেই। সুতরাং বলা যায় ডাইনিংয়ে ডাল, ভাত যাই রান্না করা হবে তাই খেতে হয় শিক্ষার্থীদের।

ফারজানা ইসলাম নামে এক ছাত্রী জানান, আমাদের বি এম কলেজে বনমালী গাঙ্গুলি ছাত্রী হোস্টেলের ডাইনিংয়ের মত নিম্ন মানের খাবার সারা বাংলাদেশের অন্য কোন হোস্টেলে দেয় না । সকালে আলু ভর্তা ডাল, দুপুরে ভাত আর এক বাটি ঝোল; তার মধ্যে ৪-৫ পিস কচু তরকারি। এছাড়া মাঝে মাঝে দুপুরে কচু তরকারির ঝোলের সাথে দুই তিন টা দাতের ফাঁকে আটকে থাকে এমন সাইজের ১ টুকরা মাংস দেয়। রাতে ভাতের সাথে এক বাটি ঝোলের মধ্যে ৪-৫ পিস কলার তরকারি বা ডাল দেয়। এগুলো খেয়ে কোনো মতে বেচেঁ আছি আমরা।

রেখা আক্তার নামের এক ছাত্রী জানান, হোস্টেলের দায়িত্বরত স্যার ম্যাডামরা তো কেউ এই ডাইনিংয়ে খায় না যার জন্য খাবারের মান যে এত পরিমাণ বাজে এটা তারা জানেন না। একজন স্যার ম্যাডাম যদি ডাইনিংয়ে খেতো তাহলে আমাদের কষ্ট টা তারা বুঝতো। খাবারের মান উন্নয়ন করার জন্য আমরা বহুবার স্যারদের জানিয়েছি। তারা প্রতিবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি,বাজারে সব কিছুর দাম বৃদ্ধির কথা বলে মিল চার্জ বাড়াতে বলেন। ডাইনিংয়ে মিল চার্জ ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা  করা হইছে কিন্তু খাবারের মান ভালো হয়নি। এ জন্য মেয়েরা এখন আর মিল চার্জ বাড়াতে চায়না।

এ বিষয়ে হোস্টেল তত্বাবধায়ক মোঃ আব্দুল মুহিত বলেন, শিক্ষার্থীরা টাকা যেমন দিবে খাবারও তো ঠিক তেমন পাবে। বর্তমানে ৬০ টাকায় আমরা তিন বেলা খাবার দিচ্ছি। যা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে ৬০ টাকায় তিন বেলা খাবারের আসা করা যায়না। তবে হোস্টেলের ডাইনিং প্রতিমাসে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই কেউ না কেউ পরিচালনা করে। খাবারের মান উন্নয়ন করার জন্য মিল চার্জ বাড়াতে হবে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে বেশ কয়েকবার বসে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা মিল চার্জ বাড়াতে চায়না। তবে মিল চার্জ বাড়িয়ে ডাইনিংয়ে মান সম্মত খাবার খাওয়ানো পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।


সর্বশেষ সংবাদ