নম্বর টেম্পারিং-শিক্ষার্থীকে হয়রানি অভিযোগ ববি শিক্ষকের বিরুদ্ধে

সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়
সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়  © টিডিসি ফটো

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়ের বিরুদ্ধে মুমূর্ষু শিক্ষার্থীর সাথে হয়রানিমূলক আচরণ ও নম্বর টেম্পারিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার (১ আগস্ট) অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘উপাচার্য বরাবর বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী অভিযোগপত্র দিয়েছে। উপাচার্য মহোদয় বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, কাজ চলমান।’

এর আগে রোববার (৩০ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও পরিবহন পুলের ম্যানেজার বরাবর দুটি আলাদা লিখিত অভিযোগপত্র দেন বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (স্নাতক) শিক্ষার্থী মো. লুৎফর রহমান।

অভিযোগ পত্রে বলা হয়, ‘আমি (লুৎফুর) দীর্ঘদিন ধরে গলা ব্যথাসহ অন্যান্য সমস্যায় ভুগছি। গত (শনিবার) শ্বাসকষ্টসহ গলাব্যথা তীব্র হলে অ্যাম্বুলেন্স সেবার জন্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় সরকারের শরণাপন্ন হই। তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালককে ফোন দিয়ে শেরেবাংলা হল থেকে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। এরপর অ্যাম্বুলেন্সের সেবা পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ফেরার পথে অ্যাম্বুলেন্সের নম্বরে পুনরায় ফোন দেই। তখন অ্যাম্বুলেন্স চালক জানান, সঞ্জয় সরকার ফোন না দেওয়া পর্যন্ত তিনি যেতে পারবেন না। 

আরো পড়ুন: অনিয়ম নিয়ে কথা বলায় আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে: রাবির সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা

এরপর সঞ্জয় সরকারকে পুনরায় ফোন দিলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বিভাগীয় চেয়ারম্যান উন্মেষ রায়কে ফোন দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিতে বলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান উন্মেষ রায়কে ফোন দিলে তিনি নানাভাবে আমাদের কটূক্তিমূলক কথা বলেন এবং অ্যাম্বুলেন্স চালককে আসতে নিষেধ করেন। মানসিকভাবে আমি ভেঙে পড়ায় বাংলা বিভাগের অন্য শিক্ষক মোহাম্মাদ সাকিবুল হাসানকে ফোন দিলে তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালককে ফোন দিয়ে বলে দিলে অ্যাম্বুলেন্স চালক আমাকে নেওয়ার জন্য দপদপিয়া টোল পার হন। পথিমধ্যে চেয়ারম্যান উন্মেষ রায় ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে আসতে নিষেধ করেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, উন্মেষ রায় পরীক্ষায় নম্বর টেম্পারিং করে আমাকে নম্বর কম দেন। তার কোর্সে ভালো পরীক্ষা দেওয়ার পরও নম্বর দেন না। তিনি ইচ্ছে করেই ব্যক্তিগত আক্রোশে নম্বর কম দেন।

অভিযোগকারী শিক্ষার্থী লুৎফর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘মার্কশিট তুলে দেখি অন্য কোর্সে ৩.৭৫ বা ৩.৫০ অথচ তার কোর্সে ৩.২৫ এর ওপর উঠেই না। সবচেয়ে ভালো পরীক্ষা দিয়েও তার কোর্সে ভালো নম্বর উঠাতে পারি না। তার রুমে গেলেও আমাকে বের করে দেওয়া হয়। স্যারের সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে এমন আচরণ করছে কেন বুঝতে পারছি না।’

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘অনার্সে আমার সব কোর্সের রেজাল্ট ৩.৫০ উপরে কিন্তু শুধু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়ের কোর্সগুলোতে ৩.৫০ এর নিচে। অনার্সে আমাদের মোট ৭টি কোর্স নিয়েছেন তিনি। আশা করেছিলাম এসব কোর্সে সর্বনিম্ন জিপিএ ৩.৫০ পাব। কিন্তু তার এসব কোর্সগুলো কেনো এমন নম্বর পেলাম তা আমার বোধগম্য নয়। বাংলা ছোটগল্প - ১(কোড-১০৭) পেয়েছি ৩.২৫, বাংলা উপন্যাস -২(কোড-২০৩) পেয়েছি ৩.২৫, বাংলা প্রবন্ধ -১ (কোড- ২০৭) পেয়েছেন ৩.২৫, বাংলা কবিতা -৪ (কোড-৩০১)পেয়েছি ৩.২৫, বাংলা রম্য সাহিত্য (কোড-৩০৮) ৩.০০, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য (কোড- ৪০৪) ৩.২৫ এবং ভ্রমণ ও পত্র সাহিত্য (কোড -৪০৭) পেয়েছি ৩.০০।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ খোরশেদ আলম বলেন,অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করেছে এবং অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টির সমাধান হয়েছে। ভুক্তভোগী লুৎফর রহমান বলেন, অভিযোগ দেওয়ার পর ভিসি স্যার আমাকে ডেকেছিলেন এবং কথা হয়েছে। কিন্তু উন্মেষ রায় স্যার তখন ছিলেন না।তিনি আমার সাথে যোগাযোগ তো দূরের কথা একবার ফোনও দেননি। 

এসব অভিযোগের বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায় বলেন, নম্বর ট্যাম্পারিংয়ের বিষয়ে আমি জানি না, এ রকম কোনো ঘটনা ঘটে নাই। কেউ অভিযোগ দিতেই পারে। আর এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। তবে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ফোন দিয়েছিল ওই শিক্ষার্থী কিন্তু এরকম কোনো কিছু ঘটে নাই। আর আমাদের সাশ্রয়ের বিষয় আছে তো। সাধারণত জরুরি বিষয় হলে অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টা দেখি।

উল্লেখ্য, এর আগে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সাম্প্রদায়িক উস্কানির অভিযোগ উঠেছিল বাংলা বিভাগের ঐ শিক্ষকের বিরূদ্ধে৷ ২০২২ সালের ২৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ ছাদেকুল আরেফিন বরাবর ৩৯ জন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি একটি অভিযোগ পত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোঃ খোরশেদ আলমের কাছে জমা দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট। তবে সে ঘটনায় কোন পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ ছাদেকুল আরেফিনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence