জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

পরিবারের বাইরেও তৈরি হয় আরেকটি পারিবারিক বন্ধন

দল বেঁধে ক্যাম্পাসে  ইফতার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের
দল বেঁধে ক্যাম্পাসে ইফতার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের  © টিডিসি ফটো

সূর্য যখন পশ্চিম আকাশের দিকে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করে ঠিক তখনই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় জমায়েত হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে কেউ বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে, কেউবা ক্যাফেটেরিয়া, কেউবা মসজিদ প্রাঙ্গনে, এর পাশাপাশি কাঠাল তলা, শান্ত চত্বর, বিজ্ঞান ভবনসহ পুরো ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কোণে কোণে। আবার বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা বসেন তাদের কক্ষে। সবার একটাই উদ্দেশ্য, একসাথে বসে ইফতার করা।

বাইরে থেকে ইফতারের যাবতীয় সামগ্রী যেমন ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, শরবত, তরমুজ, আনারস,পেয়ারা, কমলা, আঙ্গুর সহ বাহারি খাবার সংগ্রহ এক একজন ভাগ করে নেন এক একটা দায়িত্ব। কেউ শরবত বানাতে লেগে পড়েন, কেউ দায়িত্ব নেন ছোলা-মুড়ি মাখানোর। আবার কেউ পুরো আয়োজনের মধ্যেই আড্ডা জমিয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখেন।

ইফতারগুলোতে যে শুধু মুসলিমরা অংশগ্রহণ করছেন তা নয়। অনেক হিন্দু শিক্ষার্থী ও অংশগ্রহণ করছেন ইফতারে। আর বন্ধু বড় ভাই সকলে তাদের গ্রহন করে নিচ্ছেন স্বাচ্ছন্দে যা রূপ নিচ্ছে এক সম্প্রীতির বন্ধনে। এই ইফতারের সময় কে কোন বিভাগ, কে কোন বর্ষ, সেসবের ভেদাভেদ থাকে না। 

ইফতারে অংশগ্রহণ করা নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাকিবুল আহসান নিশাদ বলেন, রোজা প্রতি বছর আমাদের মধ্যে এক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন নিয়ে হাজির হয়। সে বন্ধনে পরিবার থেকে শত কিলোমিটার দূর থেকে আমরা কাছের মানুষ খুঁজি। এই কাছে মানুষরা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু অথবা সিনিয়র-জুনিয়র। যাদের সাথে একত্রে ক্যাম্পাসে বসে ইফতারি করার মাধ্যমে নিজের পরিবারের বাইরেও অন্য একটি পারিবারিক বন্ধন তৈরি হয়। ক্যাম্পাসের মাঠে বসে একত্রে ইফতারি করার মাধ্যমে সকল ভেদাভেদ ভুলে আমরা এক নতুন ভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলি। 

আরও পড়ুন: রমজানে জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর রহমান বলেন, সারা দিন রোজা রাখার পর ক্যাম্পাসের বন্ধু, বড়-ছোট ভাইবোনদের সঙ্গে ইফতার করার অনুভূতি অন্য রকম। বাড়িতে থাকলে হয়তো পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতাম, সেটা মিস করি। ইফতারের আগের সময়টুকু সবচেয়ে ভাল লাগার। সবাই মিলে ইফতার কিনতে যাওয়া, শরবত বানানো, প্রস্তুত করা, এসব খুবই আনন্দদায়ক। এই ইফতার আসলে সবার সঙ্গে সবার দেখা হওয়ার একটা উপলক্ষও বটে। 

এ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী শ্রাবণ শরীফ বলেন, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ইফতারি করার এই দৃশ্য খুবই মনোমুগ্ধকর এবং সবাই মিলে ভাগাভাগি করে ইফতার করার যে আনন্দ তা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। বিভিন্ন সংগঠন, বন্ধুরা অথবা একই বিভাগের ছোট, বড় ভাই বোন মিলে এই ইফতারের আয়োজন করে থাকে।  আত্মশুদ্ধির এই মাসে যেন এক অন্য রকম অনুভূতি। ইফতারের এই আয়োজনে প্রতিটি শিক্ষার্থীর ভাতৃত্ব সম্পর্ক অটুট থাকুক এই প্রত্যাশা করি।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় সরবরাহ করা হচ্ছে ৫০ টাকায় ৮ আইটেমের ইফতার। সেখানেও অনেক শিক্ষার্থীকে ইফতার করতে দেখা যায়। রমজানের এই ভ্রাতৃত্বপূর্ণ দৃশ্য বছরের অন্যকোনও সময় দেখা যায় না। 


সর্বশেষ সংবাদ