গৌরব-ঐতিহ্যের ১৫১ বছরে রাজশাহী কলেজ
- রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৪২ AM , আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৪২ AM
গৌরব ও ঐতিহ্যের ১৫১ বছরে পদার্পণ করেছে রাজশাহী কলেজ। সত্য, সুন্দর, বিশ্বজনীনতা, পবিত্রতা, জ্ঞান, বন্ধুত্ব ও পরমতসহিষ্ণুতায় আলোকিত মানুষ গড়ার প্রদীপ শিখা হয়ে আজ দেশের খ্যাতনামা বিদ্যাপীঠ পরিণত হয়েছে এই রাজশাহী কলেজ। ঢাকা ও চট্টগ্রাম কলেজের পরে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় প্রাচীনতম কলেজ ।
রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রমত্তা পদ্মার পাশ ঘেঁষে অবস্থিত কলেজটি ১৮৭৩ সালের পহেলা এপ্রিলে মাত্র ৬ জন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণে মুখর। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এই দীর্ঘ পথচলায় ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা এরশাদ বিরোধী আন্দোলন বাঙালির সব গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষী হিরণ্ময় ঐতিহ্যের আধার এই বিদ্যাপীঠ।
শুধু এই দেশেই নয় বরং উপ- মহাদেশের বিদ্যারণ্য প্রবীণ এক বটবৃক্ষের নাম রাজশাহী কলেজ। অবিভক্ত বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও আসাম, বিহার ও ওডিশার শিক্ষার্থীরা রাজশাহী কলেজে পড়তে আসতেন।দেশবরেণ্য অসংখ্য লেখক, গবেষক ও সাহিত্যিক শিক্ষকতা করেছেনে এই কলেজে। আবার এই কলেজের শিক্ষার্থীরা লেখক, গবেষক, সাহিত্যিক ও শিক্ষক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
বিখ্যাত রসায়নবিদ ও শিক্ষাবিদ ড. কুদরত- ই খুদা রাজশাহী কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। খ্যাতনামা বাঙালি কবি হেমচন্দ্র বাগচী, শিক্ষাবিদ ও লেখক আব্দুল্লাহ আল মুতী, ইতিহাসবিদ রাধাগোবিন্দ বসাক, গণিতবিদ ভূপতিমোহন সেন, শিক্ষাবিদ আবু হেনা মোস্তফা কামালের মতো বরেণ্য ব্যক্তিরাও ছিলেন এই কলেজের শিক্ষক।
আবার এই কলেজের প্রাক্তন অনেক শিক্ষার্থীই হয়েছেন দেশবরেণ্য। তেমনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসু, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি যদুনাথ সরকার, উপমহাদেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক, ইতিহাস চর্চার পথিকৃৎ ও অন্যতম সাহিত্যিক অক্ষয় কুমার মৈত্র, পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ আলী মিয়া, সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান, শিক্ষানুরাগী মাদার বখশ, জাতীয় চার নেতার অন্যতম এএইচএম কামরুজ্জামানের মতো বরেণ্য ব্যক্তিরা।
এ ছাড়াও অসংখ্য উজ্জ্বল নক্ষত্র এসেছেন জ্ঞানার্জনে, নিজেকে গড়েছেন, আবার কালের পরিক্রমায় আলো বিলিয়ে চলে গেছেন পরপারে । আর সেই আলোতে আজও পথ চলে নতুন প্রজন্ম শিক্ষার্থীরা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩১টি সূচকে রাজশাহী কলেজ শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছে। এর আগে ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে টানা চতুর্থ বারের মতো সেরার মুকুট অর্জন করে দেশের তৃতীয় প্রাচীন এবং সর্বপ্রথম মাস্টার্স ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটি। মডেল কলেজের স্বীকৃতিও রয়েছে রাজশাহী কলেজের ঝুঁলিতে।
বর্তমানে ৩৫ একরের কলেজটিতে চার অনুষদে ২৪ টি বিভাগে স্নাতক সম্মান, স্নাতকোত্তর, ডিগ্রি ওএইচ.এস.সি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করা হয়। শিক্ষার্থীদের পাঠদানে কলেজে কর্মরত রয়েছে ২৪২ জন কর্মঠ শিক্ষক।
আধুনিক প্রযুক্তির যুগে পিছিয়ে নেই রাজশাহী কলেজ। নিরাপত্তার স্বার্থে কলেজের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে স্থাপন করা হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। প্রতিটি বিভাগে চালু করা হয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। শিক্ষকদের জন্য সরবরাহ করা হয়েছে প্রয়োজনীয় ল্যাপটপ।
প্রতিটি বিভাগে রয়েছে সুদৃশ্য কম্পিউটার ল্যাব। ক্লাসের শিক্ষার্থীদের বহির্বিশ্বের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রাখার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে ফ্রি ওয়াই- ফাই সেবা। ছাত্র- ছাত্রীরা যাতে ঘরে বসেও কলেজের যাবতীয় বিজ্ঞপ্তি ও তথ্য সংগ্রহ করতে পারে এজন্য রয়েছে কলেজের নিজস্ব ডাইনামিক ওয়েবসাইট। এছাড়াও রয়েছে কলেজ কর্তৃক পরিচালিত অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ফেসবুক গ্রুপ। প্রত্যেকটি বিভাগের রয়েছে ফেসবুক পেজ।
কলেজে জ্ঞানার্জনের জন্য রয়েছে সুবিশাল গ্রন্থাগার। যেখানে রয়েছে পুরনো দিনের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ছাড়াও নিত্যনতুন প্রয়োজনীয় বইসমূহ। মুক্ত জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রতিদিনই এখানে ভীড় জমান শিক্ষার্থীরা। ক্লাসের বাইরে সহ- শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রয়েছে ৪৫টি সংগঠন। এসকল সহ- সংগঠন শিক্ষার্থীদের মেধা মনন বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে।
এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি, রোভার স্কাউট, মিরর বিতর্ক ক্লাব, ক্যারিয়ার ক্লাব, সংগীত একাডেমী, আবৃত্তি পরিষদ, নৃত্য চর্চা কেন্দ্র, রক্তদানের প্রতিষ্ঠান বাঁধন, রেঞ্জার গাইড, বরেন্দ্র থিয়েটার, অন্বেষণ, বিএনসিসি, ক্যারিয়ার ক্লাব, বিজনেস ক্লাব, এথিক্স ক্লাব, রোটার্যাক্ট ক্লাব প্রেজেন্টেশন ক্লাবসহ বিভিন্ন বিভাগের স্বতন্ত্র একটি করে ক্লাব ।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের শরীর চর্চার জন্যে রয়েছে ব্যায়ামাগার। নামাজের জন্য দ্বিতল মসজিদ। শহরের বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ছাত্রাবাস ও ছাত্রী নিবাস। ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। কলেজের রয়েছে পাঁচশ‘র বেশি কম্পিউটার সংবলিত কম্পিউটার ল্যাব। কম্পিউটার ল্যাবে কলেজের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যতালিকার বাইরেও কলেজর নিজস্ব অর্থায়নে আউটসোর্সিং ও বিভিন্ন প্রোগ্রামিংয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সৌন্দর্য বর্ধনেও পিছিয়ে নেই কলেজ প্রশাসন। কলেজের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নির্মাণ করা হয়েছে বিভিন্ন চত্ত্বর । লাগানো হয়েছে মৌসুমী ও বাহারি ফুলগাছ। মৌসুমে এসব ফুলের সৌরভ শিক্ষার্থীদের মাঝে সজীবতা ছড়ায়