ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন

গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সুবিধায় শীর্ষে পবিপ্রবি, তলানিতে জবি

গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়
গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়  © লোগো

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটের বিষয়টি অনকে পুরানো। একদিকে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়তে আসা অধিকাংশ শিক্ষার্থীই আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে হল জীবনের স্বাদ না পেয়েই অনেককেই শেষ করতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। 

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে সমন্বিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থাও একই। বর্তমানে গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র একটিতে শতভাগ আবাসন সুবিধা রয়েছে। বাকিগুলোতে অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী আবাসান সুবিধার বাহিরে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পুরান ঢাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি)। ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের জন্য আবাসন সুবিধা শূন্যের কোটায়। আর মেয়েদের জন্য রয়েছে মাত্র একটি আবাসিক হল। তাছাড়া অস্থায়ী ক্যাম্পাসে নতুন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কার্যক্রম শুরু করায় তাদেরও আবাসন সুবিধা শূন্যের কোটায়।  

আরও পড়ুন: ‘আশ্বাসে আটকে আছে’ বাকৃবি ছাত্রী হলে আবাসন সংকটের সমাধান

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন ঘেটে দেখা যায়, গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শতভাগ আবাসন সুবিধা রয়েছে শুধুমাত্র পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি)। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্রদের জন্য ৫টি এবং ছাত্রীদের জন্য ৩টি হল রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত ভর্তির পরেই শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা প্রদান করা হয়।

আবাসন সুবিধায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৪৬% শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্রদের একটি এবং ছাত্রীদের একটি হলে মোট ৯০টি আসন রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নতুন হল নির্মাণ সাপেক্ষে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা হলে আসন পেতে পারেন।

শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়রে পরেই রয়েছে খুলনা বিশ্বাবদ্যালয় এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় দুটিতে বর্তমানে ৪১% শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন। এদের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য ৩টি এবং ছাত্রদের জন্য ২টি হল রয়েছে। নোয়াখালী বিশ্ববিদ্য়ালয়ে ছাত্রদের জন্য ২টি এবং ছাত্রীদের জন্য় ৩টি হল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটিতে সাধারণত সিনিয়রিটির ভিত্তিতে সিট প্রদান করায় প্রথম বর্ষে অতি স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পেয়ে থাকেন বলে জানা গেছে। 

আরও পড়ুন: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সুবিধা নেই ৬৬ ভাগ শিক্ষার্থীর

বর্তমানে ৩০% এর বেশি আবাসন সুবিধা রয়েছে বঙ্গমাতা শেখ ফাজলাতুন্নেসা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসব বিশ্ববদ্যিালয়ে যথাক্রমে ৩৩%, ৩২% এবং ৩১% শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন। আসন সংকটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিনয়রিটি এবং ভালো ফলাফল বিচেনায় সিট প্রদান করা হয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ প্রয়োজন বিবেচনায় প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গণরুমে আবাসন সুবিধা পেয়ে থাকেন।

২০% এর উপরে আবাসন সুবিধা রয়েছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি), রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি), এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এদের মধ্যে মাভাবিপ্রবিতে ২৮%, রাবিপ্রবিতে ২৬%, ইবিতে ২৪%, শাবিপ্রবিতে ২২% এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০% শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮%, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩%, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১%, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯% এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭% আবাসন সুবিধা রয়েছে।

আরও পড়ুন: ইবিতে আবাসন ব্যবস্থা নেই ৭৬% শিক্ষার্থীর

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হলে আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত দ্বিতীয় বর্ষ থেকে আবাসন সুবিধা প্রদান করে। তবে আর্থিক সংকট এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেক সময় প্রথম বর্ষের স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীকে আবাসন সুবিধা প্রদান করা হয়।

গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আবাসন সুবিধায় তলানিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের জন্য কোনো আবাসন সুবিধা নেই। ছাত্রীদের একটি হলে সিনয়িরিটি এবং ভালো ফলাফলের ভিত্তিতে আবাসন সুবিধা প্রদান করা হয়। এছাড়া, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ এখনও কোনো শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে পারেনি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতক সম্পন্নকারী শিক্ষার্থী আরিফ হাসান বলেন, আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন সন্তান। হল না থাকার কারনে স্নাতক সম্পন্ন করতে গিয়ে শুধুমাত্র আবাসনেই আমার প্রায় লক্ষাধিক টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে। যেই সময়ে আমার পড়ালেখায় ব্যস্ত থাকার কথা সেই সময়ে বাসা ভাড়ার টাকা উপার্জন কেরতে আমাকে সময় ব্যয় করতে হয়েছে টিউশনে। আর এতে কষ্ট করে যেসব মেসে থাকতাম সেখানে না ছিল ভালো পড়ালেখার পরিবেশ, না ছিল পর্যাপ্ত নিররাপত্তা।

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শুধুমাত্র একটি থাকার জায়গা নয় বরং সংস্কৃতি বিনিময়ের জায়গা, জীবনবোধ শেখার জায়গা। একজন শিক্ষার্থী আবাসিক হলে থাকার সুযোগ না পাওয়ার অর্থ হলো এসব থেকে বঞ্চিত হওয়া। আমার মতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী হলে থাকার সুযোগ না পেলে তার শিক্ষাজীবনই অপূর্ণ থেকে যায়।

গুচ্ছভুক্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই অভিযোগ, আবাসন সংকটের কারণে তাদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হচ্ছে। এমনকি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২ সালে এক নারী শিক্ষার্থী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালেয়টির শিক্ষার্থীরা শতভাগ আবাসন নিশ্চিতের জোর দাবিও তুলেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইলে থাকায় আমাদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। বড়িওয়ালারা ইচ্ছেমত যখন খুশি ভাড়া বৃদ্ধি করে আবার পর্যাপ্ত নিরাপত্তাও নিশ্চিত করে না। প্রায়ই বখাটে যুবকদের দ্বারা ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে, জায়গা সংকট, বরাদ্দ সংকটসহ বিভিন্ন কারনেই শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পরবর্তী এক সাক্ষাৎকারে বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, আবাসন সংকট নিরসনে তার নতুন একটি ছাত্র হল এবং একটি ছাত্রী হল নির্মানের পরিকল্পনা রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ