সমস্যায় জর্জরিত জবির ছাত্রী হলে শুধু নেই আর নেই
- সাগর হোসেন, জবি
- প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০২:৩২ PM , আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৫:১৭ PM
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) একমাত্র ছাত্রীহল 'বেগম ফজিলাতুন্নেছা হল'। অব্যবস্থাপনার মধ্যেই হলটিতে অবস্থান করছেন ছাত্রীরা। দিন দিন বেড়েই চলেছে নানা ধরনের সমস্যাগুলো। হলের আবাসিক একাধিক ছাত্রীর সাথে কথা বলে জানা যায়, হলে মাসে এক সাপ্তাহের বেশী সময় ধরে গ্যাস নেই, ক্যান্টিন থেকে মানসম্মত খাবার সরবরাহ করা হয় না, লিফটের সমস্যা, ইন্টারনেটে সমস্যা। এমনকি বিশুদ্ধ খাবার পানিরও সমস্যা রয়েছে।
ছাত্রীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের কাছে এসব সমস্যার কথা জানালে তারা সব শুনে শুধু দরখাস্ত দিতে বলে। দরখাস্ত দিলে দেখি বলেই শেষ। সহসা কোনও উদ্যোগ নেয় না। খাবারের পানির জন্যও বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে এখন। আর তদারকির দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের সমস্যা জানানোর জন্য অনেক সময় পাওয়াই যায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের এক আবাসিক ছাত্রী বলেন, ‘আমাদের হলে ওয়াইফাই এর অবস্থা একদম বাজে। নেট পায় না বললেই চলে। আমাদের প্রতি মঙ্গলবার অনলাইন ক্লাস করতে হয়। এই ইন্টারনেট ব্যবহার করে সঠিকভাবে ক্লাস করতে পারি না। সপ্তাহে অন্তত দুইদিন এই ময়লা'র বিন গুলো পরিষ্কার করা উচিৎ কিন্তু করা হয় না। হলে গ্যাস একদিন থাকে আর একমাস থাকে না। আবার ইলেকট্রিক কিছু ব্যবহার করাও নিষেধ। ফিল্টারে পানি আসে না। এরও কোন ব্যবস্থা নেয় না কর্তৃপক্ষ। এইদিকে প্রভোস্ট ম্যাম হলে খুব কম আসেন। উনার কাছে কোন সমস্যা নিয়ে গেলে উনার কোন সময় নেই।"
হলের আরেক আবাসিক ছাত্রী আনিকা (ছদ্মনাম) বলেন, ফিল্টার প্রয়োজনের বিপরীতে অনেক কম৷ তার ওপর বেশ কিছু নষ্ট হয়ে আছে৷ এখন বাধ্য হয়েই ৩ তলা থেকে ১২ তলায় যেতে হয় পানি আনতে। ভিড় থাকে স্বাভাবিকভাবেই। দুই দিন ডাইনিং এর পানি খেয়েছিলাম৷ এরপর শরীরে অ্যালার্জি বাড়ে। শুধু ফিল্টার ঠিক করলেই হবেনা বরং বাড়াতে হবে৷ তাতে ফিল্টারেও চাপ কম পড়বে, আমাদের জন্যও সুবিধা হবে।
অপর এক আবাসিক ছাত্রী বলেন, রাতের বেলায় বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়৷ ৯,১০তলায় গিয়েও দেখি ওইখানের ফিল্টারের একই অবস্থা। হলে না আছে মানসম্মত খাবার না আছে ভালো পরিবেশ তার ওপর এখন পানি নিয়েও সমস্যা শুরু হয়েছে। এটা দ্রুত সমাধান করা উচিত।
জানা যায়, হলের তিনতলা থেকে ১৬ তলা পর্যন্ত প্রতি ফ্লোরে ছাত্রীদের জন্য ছোট ১টি করে ফিল্টারের ব্যবস্থা রয়েছে। আর প্রতি ফ্লোরের প্রায় অর্ধ শতাধিক ছাত্রীর বিপরীতে একটি এবং অর্থাৎ হলের প্রায় ১৫০০ ছাত্রীর বিপরীতে পানির ফিল্টার আছে মাত্র ১৩টি।ফলে সবসময় ফিল্টারগুলোর ওপরে অত্যাধিক চাপ থাকে।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ষোল তলাবিশিষ্ট এই হলের বেশ কয়েকটি ফ্লোরের পানির ফিল্টার নষ্ট হয়ে আছে। আর যেই ফিল্টারগুলো ভালো আছে অত্যাধিক চাপে সেগুলোও ধীরে পানি ফিল্টারেশন করছে৷ ডাইনিংয়ের পানি খেয়ে অনেকে অ্যালার্জি জনিত সমস্যায় ভুগছেন।
আরও পড়ুন: এইচএসসির পর বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিবেন যেভাবে
বিশেষজ্ঞদের মতে, সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি আয়রনযুক্ত পানি পান করলে কিংবা বিশুদ্ধ পানি পান করতে না পারলে হাড়ে ইনফেকশন, লিভার সিরোসিসসহ মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়। মানবদেহের এই ক্ষতি ধীরে ধীরে হয় বলে সহসাই টের পাওয়া যায় না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামীমা বেগম বলেন, ছাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা এক এক হলের সমস্যাগুলো সমাধান করে যাচ্ছি৷ পানি সমস্যা সমাধানের জন্য অতিরিক্ত ফিল্টারের জন্য আবেদন করেছি। গত সাপ্তাহেও ৮ পানির ফিল্টারের কাজ করিয়েছি। পাশাপাশি নিয়মিত ফিল্টারের রিফিলগুলো পরিবর্তন করানো হচ্ছে। ফিল্টারের মনিটরিংগুলো খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং ক্যাম্পাসে মাত্র একজন টেকনিশিয়ান থাকায় ঠিক করতে দেরি হয়ে যায়।
হলের ওয়াইফাই এর সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, এই সমস্যা শুধু হলের না। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের আই সি টি সেলের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। সেখান থেকে আমাকে জানানো হয়েছে এটা পুরো ক্যাম্পাসেরই সমস্যা। তারপরেও আমি কর্তৃপক্ষকে লিখিত আকারে বিষয়টি জানিয়েছি। ১৬ তলা হলে মাত্র ৩ জন ক্লিনার রয়েছে৷ তারপরে আবার সাপ্তাহে তিনদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকে। এজন্য বিন গুলো কয়েকদিন পর পর পরিষ্কার করা হয়।