আতঙ্কে গণরুম ছাড়ছেন ইবি শিক্ষার্থীরা

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনার পর আতঙ্কে গণরুম ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা। অহেতুক ঝামেলা এড়াতে তাঁরা বাড়ি চলে যাচ্ছেন। তবে ঘটনার পর কতজন শিক্ষার্থী বাড়ি চলে গেছেন, সেই তথ্য কর্তৃপক্ষের কাছে নেই।

বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে দায়িত্বরত সহকারী রেজিস্ট্রার আবদুর রাজ্জাক বলেন, হলে আবাসিক আসনসংখ্যা ৫৬৮টি। গণরুমসহ ৮৭৮ ছাত্রী হলে থাকেন। ছয়টি গণরুমে থাকেন অন্তত ১৩৪ জন। ছয়টি গণরুমের মধ্যে প্রজাপতিতে থাকেন ৩৩ ছাত্রী। প্রজাপতির দুটি কক্ষ। একটি কক্ষে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ওই কক্ষে থাকেন ১৬ জন।

আরও পড়ুন : ‘গণরুম’ বিলুপ্তির দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল

হলের কর্মকর্তা ও আয়াদের সঙ্গে সরেজমিনে দেখা গেছে, হলের ডাইনিং কক্ষে প্রবেশের দুই পাশে প্রজাপতির দুটি কক্ষ। দুপুরে সেখানে তেমন কাউকে পাওয়া যায়নি। দুজন ছাত্রীকে পাওয়া গেলেও তাঁরা কথা বলতে শঙ্কাবোধ করছিলেন। ডাইনিং কক্ষের প্রবেশমুখেই আছে সিসিটিভি ক্যামেরা।

ঘটনার রাতে কী হয়েছে জানতে চাইলে গণরুমের একাধিক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই রাতে প্রজাপতিতে ধমকের সুরে কয়েকজনকে কথা বলতে শোনা যায়। সেখানকার একজন ছাত্রী গণরুমের কাউকে বের হতে দেননি। এমনকি ওয়াশরুমেও যেতে দেননি। এ সময় এক ছাত্রীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নানা কথা বলতে শোনা যায়। একপর্যায়ে ডাইনিংয়ে নিয়ে তাঁকে ময়লাযুক্ত গ্লাস পরিষ্কার করতে দেন।

আরও পড়ুন : নেতা আসে নেতা যায়— খবরের শিরোনাম পাল্টায় না ছাত্রলীগের

তারা আরও বলেন, নির্যাতনের ঘটনার সময় পাশের কক্ষে একজনের পরীক্ষা থাকায় তিনি পড়ছিলেন। ওই ছাত্রী উচ্চ স্বরে কথা বলতে নিষেধ করলেও তাঁরা (নির্যাতনকারী) কিছু শোনেননি। বিষয়টি গণরুমের অনেকেই দেখেছেন এবং জানেন। ভিডিও ধারণের বিষয়টিও সঠিক। কিন্তু কেউ ভয়ে কথা বলছেন না।

সহকারী রেজিস্ট্রার আবদুর রাজ্জাক বলেন, ছাত্রীদের বাড়ি চলে যাওয়ার কোনো তথ্য হলে সংরক্ষণ করা হয় না। কেউ বাইরে গেলে বা ভেতরে প্রবেশ করলে কোনো রেজিস্ট্রিতে লেখা হয় না। কয়েকজন চলে গেছেন। হয়তো তাঁদের ক্লাস-পরীক্ষা নেই, এ জন্য বাড়ি চলে গেছেন।

তবে হলের কয়েকজন ছাত্রী বলেন, ঘটনার পর থেকে হলের শিক্ষার্থীরা শঙ্কিত। ঘটনাটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হওয়ায় তাঁরা জেরার মুখে পড়তে পারেন বলে অনেক ছাত্রী মনে করছেন। এ জন্য অহেতুক ঝামেলা এড়াতে অনেকে বাড়ি চলে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন : ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও: ইবির দুই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ

এদিকে নির্যাতনের শিকার ছাত্রী শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বর্তমানে বাড়িতে থেকে ওষুধ সেবন করছেন। তবে তিনি শারীরিকভাবে বেশি দুর্বল হয়ে পড়ছেন। ভুক্তভোগী ছাত্রী মুঠোফোনে বলেন, ‘ক্যাম্পাস থেকে ছাত্র উপদেষ্টা ফোন করে শনিবার দেখা করতে বলেছেন। কিন্তু আমার নিরাপত্তা কে দেবে? সেখানে গেলে কেউ আমার কিছু করবে না, সেটি নিশ্চিত হব কী করে?’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম বলেন, ক্যাম্পাসসহ আশপাশে অবস্থানকালে ওই ছাত্রীর নিরাপত্তা দিতে প্রক্টরকে বলা হয়েছে। তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, আবাসিক হলগুলোতে খুব দ্রুত সভা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা যাতে অভয় নিয়ে থাকতে পারেন, সে ব্যাপারে সচেতন করা হবে। ক্যাম্পাসে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ