নিজ নামের বিশ্ববিদ্যালয়ে অবহেলিত বেগম রোকেয়া

  © টিডিসি ফটো

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামে করা হলেও নিজ নামের বিশ্ববিদ্যালয়ে অবহেলিত বেগম রোকেয়া। বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের কারিগর বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে স্মরণীয়-বরণীয় করে রাখার জন্য তার নামে রংপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১যুগ পেরিয়ে ১৫ বছরে পদার্পণ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নেই বেগম রোকেয়ার কোনো স্মৃতিচিহ্ন বা ম্যুরাল, এমনকি নেই রোকেয়া বিষয়ক চর্চার কোনো সুব্যবস্থা।

জানা যায়, প্রথমে ২০০৮ সালে এটি রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তীতে ২০০৯ সালে বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামানুসারে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করা হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়টির উদ্বোধন করেন। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সারা বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষায় এই বিশ্ববিদ্যালয় অসামান্য অবদান রাখছে। তবে প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই নানান কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কদর নেই’ বেগম রোকেয়ার। অনেকটা শুধু নামেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ৯ ডিসেম্বর ‘রোকেয়া দিবস’ এলে নামমাত্র র‌্যালি ও আলোচনা সভাতেই সীমাবদ্ধ থাকে সব কার্যক্রম। তার আদর্শ চর্চার বিষয়ে তেমন গুরুত্ব ও ব্যবস্থা নেই এখানে।

আরও পড়ুন: ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ পাহাড়ি সড়কে চলছে রাবিপ্রবির বাস

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্যমতে, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল জলিল মিয়ার মেয়াদকালে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ ও ‘রোকেয়া স্টাডিজ’ নামে ১০০ নম্বরের দুটি কোর্স প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের পড়ার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়। যা সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত হয়। কিন্তু তৎকালীন উপাচার্য দুর্নীতির দায়ে অপসারিত হওয়ার পর ওই দুটি বিষয় আর চালুর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম নূর-উন-নবীর চার বছরের মেয়াদকালেও ‘রোকেয়া স্টাডিজ’ কোর্সটি চালুর বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। 

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ যোগ দেন। তার এক বছরের মাথায় উপাচার্যের সভাপতিত্বে ডিনস কমিটির সভা হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি বিভাগের সব শিক্ষার্থীর জন্য এবং ২০১৭-১৮ সেশনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় সেমিস্টার থেকে ‘রোকেয়া স্টাডিজ’ কোর্সটি ননক্রেডিট হিসেবে বাধ্যতামূলক করা হয়। 

৯ ডিসেম্বর ২০২১ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে রোকেয়া দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য ড. হাসিবুর রশীদ বলেছিলেন,বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিদ্রুত রোকেয়া স্থায়ী ম্যুরাল স্থাপন করা হবে ।

তিনি আরও বলেছিলেন, 'আগামী বছর থেকে বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। স্মরণিকায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত লেখক-গবেষকসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেগম রোকেয়া সম্পর্কিত প্রবন্ধ থাকবে। ঊনবিংশ শতাব্দীর কুসংস্কারাচ্ছন্ন রক্ষণশীল সমাজের শৃঙ্খল ভেঙে বেগম রোকেয়া নারী জাতির মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন। তার জীবনাদর্শ ও কর্ম আমাদের নারী সমাজের অগ্রযাত্রায় পথপ্রদর্শক।' কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।

বেগম রোকেয়ার নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কোনো স্মৃতিচিহ্ন, ম্যুরাল বা প্রতিকৃতি না থাকা এবং রোকেয়াবিষয়ক চর্চার সুব্যবস্থা না থাকায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জিহাদ ইসলাম বলেন, ‘নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের নামে বিশ্ববিদ্যালয় হলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পরিচয় বহনকারী এমন কোনো স্মৃতিস্তম্ভ না থাকায় প্রায়শই এ বিশ্ববিদ্যালয় কে নানা রকম ট্রলের শিকার হতে হয়। যা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে মেনে নেওয়া কষ্টকর। বিভিন্ন দিবসে অস্থায়ী প্রতিকৃতি বানিয়ে আর কতদিন দায়সারা কাজ চলবে। অতিদ্রুত মূল ফটকসহ ক্যাম্পাসে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হোক, এটাই আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি।'

বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওয়াদুদুর রহমান বলেন, রোকেয়া স্টাডিজ কোর্সটা অনেকদিন আগে অনুমোদন হয়েছে । এটা বাস্তবায়নের কথা আমরা বলে আসছি। রোকেয়া স্টাডিজ শিক্ষার্থীদের দুটি কারণে জানা দরকার। প্রথমত রোকেয়ার নামে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কারণে এবং দ্বিতীয়ত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রে যখন বাইরে যাবে তখন রোকেয়া সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা দরকার। তাই রোকেয়া বিষয়ে লেখাপড়া করা, রোকেয়ার চিন্তা, দর্শন আমাদের জানা জরুরি। আর রোকেয়ার নামে ম্যুরাল স্থাপনের অগ্রগতি সম্পর্কে আমার জানা নেই।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ারুল আজিম বলেন, আমাদের উপাচার্য বেশ শিক্ষার্থীবান্ধব। তিনি সেশনজট নিরসন করাকে মেজর বিষয় হিসেবে দেখছেন। ডিসেম্বরের মধ্যে সেশনজট মুক্ত  বিশ্ববিদ্যালয় হবে বেরোবি। এরপর তিনি ক্রমানুসারে বাকি উন্নয়ন মূলক কাজ করবেন আশা করা যায়।

বেগম রোকেয়ার নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে তার কোনো ম্যুরাল বা প্রতিকৃতি না থাকা এবং রোকেয়া বিষয়ক চর্চার সুব্যবস্থা না থাকার কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আলাদা ভাবে রোকেয়া স্টাডিজ নামক কোর্সটি থাকবে না, বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে বাংলাদেশ স্টাডিজ নামক কোর্সের মাধ্যমে রোকেয়ার জীবনকর্ম, রোকেয়া চর্চা,দর্শন প্রধান্য থাকবে। 

তিনি বলেন, রোকেয়ার ম্যুরাল নির্মাণের বিষয়ে আমাদের আন্তরিকতা আছে। সরকারের আর্থিক কৃচ্ছতা সাধন নীতির কারণে এবছর বাজেট সংকুলান হয়নি। এবছর আমরা মূল ফটক নির্মাণ করছি। পরবর্তীতে যতদ্রুত সম্ভব বেগম রোকেয়ার ম্যুরাল নির্মাণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন,বেগম রোকেয়ার নামেই এই বিশ্ববিদ্যালয়। সুতরাং এখানে বেগম রোকেয়ার জীবন, কর্ম ও দর্শন পঠন, পাঠন ও চর্চার জন্য এবছর একটি বই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। বিভিন্ন বিভাগে রোকেয়ার জীবন, কর্ম ও দর্শন জানার জন্য যতটুকু প্রয়োজন তার সর্বোচ্চটা রাখা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence