৩৩ বছরে পা রাখল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

আজ শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) ৩২ বছর পূর্ণ করে ৩৩ বছরে পদার্পন করলো বধ্যভূমির ওপর গড়ে ওঠা দেশের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি)। ৩৩ বছরে পা রাখল ছাত্র রাজনীতিমুক্ত দেশের একমাত্র এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।  

‘শিখুন, নেতৃত্ব দিন এবং বাঁচুন’ স্লোগানে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। দিবসটি উপলক্ষে একাডেমিক, প্রশাসনিক, হল, উপাচার্যের-সহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ভবনগুলো সাজানো হয়েছে। দিবসটিকে কেন্দ্র করে বর্ণাঢ্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ১০.১৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। এরপর রয়েছে কালজয়ী মুজিব ও শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ। মুক্তমঞ্চে গত বছরের অর্জন ও আগামী বছরের পরিকল্পনা উপস্থাপন কর্মসূচি রয়ছে বিকাল ৪টায়। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বাদ জোহর কেন্দ্রীয় মসজিদসহ সব হল মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া বিকেল ৪টায় মুক্তমঞ্চে বিভাগ/ডিসিপ্লিনগুলোর গত বছরের অর্জন ও আগামী বছরের পরিকল্পনা উপস্থাপন, বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে গত বছরের কৃতিত্ব অর্জনকারী শিক্ষার্থী ও সংগঠনগুলোকে সম্মাননা, বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আরও পড়ুন: আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়নশিপ: নারী বাস্কেটবলে স্বর্ণপদক জিতলো নর্থ সাউথ।

১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারি দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্ত গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৯০ সালের জুলাই মাসে জাতীয় সংসদে ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৯০’ পাস হয়, যা গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ওই বছরের ৩১ জুলাই।

এরপর ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে ৪টি ডিসিপ্লিনে ৮০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। ১৯৯১ সালের ৩০ আগস্ট প্রথম অরিয়েন্টেশন এবং ৩১ আগস্ট ক্লাস শুরুর মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা হয়। একই বছরের ২৫ নভেম্বর শিক্ষা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

ব্যতিক্রমধর্মী এই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেই প্রথম চোখে পড়বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুউচ্চ ম্যুরাল, যার গায়ে উৎকীর্ণ আছে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। এছাড়া রয়েছে শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবন, ড. সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবন, আচার্য জগদীশচন্দ্র একাডেমিক ভবন, কবি জীবনানন্দ দাশ একাডেমিক ভবন।

এমনিভাবে  প্রত্যেকটি আবাসিক হল ও অন্যান্য স্থাপনার প্রবেশ পথেই শুধু দেখতে পাবেন  নাম লেখা। এ যেনো খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নিজস্বতা। বঙ্গমাতা হলে রয়েছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ম্যুরাল। রয়েছে কটকা স্মৃতিস্তম্ভ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহদাকার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারটি স্থপত্যশৈলী চমৎকার। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে নামকরণ করা হয়েছে এ ভবনটির। যার ছাদ দৃষ্টিনন্দন টেনসাইল মেমব্রেনে তৈরি।

প্রতিষ্ঠাকালের দিক থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে খুবির অবস্থান নবম। খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের গল্লামারী নামক স্থানে স্থাপিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। স্থানটি একাত্তরের বধ্যভূমি। আর বধ্যভূমির ওপর গড়ে ওঠা এটিই দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও পড়ুন: অপরিকল্পিত উচ্চশিক্ষা: মেধা আর অর্থ দুটোরই অপচয়।

বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুল বা অনুষদের সংখ্যা ৮টি। ডিসিপ্লিন বা বিভাগের সংখ্যা ২৯টি। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। যার মধ্যে ২১ জন বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষক আছেন পাঁচ শতাধিক, যার এক তৃতীয়াংশই পিএইচডিধারী। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১২, যা বিশ্বমানের। ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাত ৫৪:৪৬, যা দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

কর্মকর্তা তিন শতাধিক এবং কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪০০। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত ৬টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রায় ১৫ হাজার গ্র্যাজুয়েটকে আনুষ্ঠানিক অভিজ্ঞানপত্র প্রদান করা হয়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২২ উপলক্ষে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে আস্থার জায়গা সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে। এটি ধারণ করেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাবে বিশ্বমান অর্জনের পথে। এ বিশ্ববিদ্যালয় শিগগিরই শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিশ্বযাত্রায় স্থান করে নেবে।


সর্বশেষ সংবাদ