৪৮তম বিশেষ বিসিএস উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগের দাবি

৪৮তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চিকিৎসকদের নিয়োগের দাবি
৪৮তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চিকিৎসকদের নিয়োগের দাবি  © সংগৃহীত

দেশের তীব্র চিকিৎসক সংকট নিরসনে ৪৮তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চিকিৎসকদের দ্রুত নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন নিয়োগপ্রত্যাশী চিকিৎসকরা। সোমবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিতে তারা এই দাবি জানান।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বর্তমান স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১২,৯৮০টি চিকিৎসক পদ শূন্য রয়েছে। ফলে দেশের সাধারণ জনগণ পর্যাপ্ত সরকারি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সমাজের ধনী শ্রেণি বেসরকারি চিকিৎসা বা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারলেও তৃণমূলের জনগোষ্ঠীর একমাত্র ভরসা সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো। এই বিপুল সংখ্যক শূন্যপদে চিকিৎসক না থাকলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

বক্তারা আরও বলেন, বর্তমান সরকার প্রান্তিক পর্যায়ে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা জোরদারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ অন্যতম। ৪৮তম বিশেষ বিসিএস-এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বিসিএসের মাধ্যমে ৩২০০ জনকে সহকারী সার্জন পদে সুপারিশ করেছে।

তারা জানান, ৪৪তম, ৪৫তম, ৪৬তম ও ৪৭তম বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনো অসমাপ্ত। এসব বিসিএসের বিভিন্ন পর্যায়ে অপেক্ষমাণ কিছু প্রার্থী ৪৮তম বিশেষ বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এছাড়া ৪৫তম, ৪৬তম ও ৪৭তম সাধারণ বিসিএসে মোট পদসংখ্যার বিপরীতে খুব অল্প সংখ্যক প্রার্থী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ফলে ৪৪তম থেকে ৪৮তম বিসিএস পর্যন্ত নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ার আগে ৪৮তম বিশেষ বিসিএস থেকে নিয়োগ দিলে প্রায় ১,৫০০ ‘রিপিট প্রার্থী’ তৈরি হবে। তারা সিনিয়রিটি ও অন্যান্য সুবিধার কারণে আগের বিসিএসগুলোতে যোগ দিলে ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের পদগুলো পুনরায় শূন্য হয়ে যাবে। এর ফলে চিকিৎসক সংকট নিরসনের মূল লক্ষ্য ব্যর্থ হবে এবং রাষ্ট্রের মূল্যবান সময়, অর্থ ও শ্রমের অপূরণীয় ক্ষতি হবে বলে বক্তারা সতর্ক করেন।

তারা বলেন, ‌‌‘বিশেষ বিসিএসের উদ্দেশ্য ছিল তৃণমূল পর্যায়ে দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ নিশ্চিত করা। কিন্তু যদি এই নিয়োগ বিলম্বিত হয়, তবে সেই উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে।’

মানববন্ধনে বক্তারা আরও জানান, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দেওয়া তথ্যমতে, অতিরিক্ত আরও ৩,০০০ শূন্যপদে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে স্বাক্ষরিত হয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ৪৮তম বিশেষ বিসিএস বিজ্ঞপ্তির বিশেষ নির্দেশনায় বলা আছে নতুন পদ সৃষ্টি, পদ বিলুপ্তি, পদোন্নতি, অবসর, মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপসারণ ইত্যাদি কারণে বিজ্ঞাপিত শূন্যপদের সংখ্যা পরিবর্তন হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবু জাফর জানিয়েছেন, মেডিকেল শিক্ষকদের ঘাটতি দূর করতে সুপারনিউমারারিতে ৭,০০০ পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২,০০০ চিকিৎসককে ইতোমধ্যে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং বাকিদেরও শিগগিরই পদোন্নতি দেওয়া হবে। এর ফলে নতুন করে আরও শূন্যপদ তৈরি হচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে নিয়োগপ্রত্যাশীরা দাবি জানান, যেহেতু ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান এবং চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের আগেই ৩,০০০ শূন্যপদে নিয়োগের চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়েছে, তাই মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মেধাক্রমের ভিত্তিতে অবিলম্বে নিয়োগের সুপারিশ করা উচিত।

দাবি আদায় না হলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে লংমার্চসহ কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তারা। এ সময় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ডা. তুষার, ডা. হামিদুল ইসলাম, ডা. গোলাম ছামদানী, ডা. সালমান ইসলাম রাফি প্রমুখ। 


সর্বশেষ সংবাদ