সেশনজটে ৪৭তম বিসিএস পাচ্ছেন না অনেক চাকরিপ্রার্থী, সময় বৃদ্ধির ইঙ্গিত
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪ AM , আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৮ PM
বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এনে ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষা নেবে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। এ বিসিএসের মাধ্যমে ৩ হাজার ৬৮৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) থেকে আবেদন করতে পারবেন চাকরিপ্রার্থীরা। তবে আন্দোলনসহ নানান কারণে সেশনজটে পড়ায় কয়েকদিনের জন্য অনেকে এ বিসিএসে আবেদন করতে পারবেন না। এ জন্য তারা আবেদনের সময় বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন।
গত ২৮ নভেম্বর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। অনেকের পরীক্ষা শেষ হবে জানুয়ারির মাঝামাঝি বা ফেব্রুয়ারিতে। ফলে কয়েক দিনের জন্য অনেকে ৪৭তম বিসিএসের আবেদন করতে পারবেন না। এ পরিস্থিতি আবেদনের সময় বাড়ানো হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে পিএসসি।
চাকরিপ্রার্থীদের ভাষ্য, সরকারবিরোধী আন্দোলন, করোনাসহ নানা কারণে তারা ইতিমধ্যে সেশনজটে আছেন। এ সময় তিন মাসের বেশি সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থেকেছে। এখন অল্প কয়েকদিনের জন্য বিসিএসেও অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন তারা। সে কারণে তারা পরীক্ষার আবেদনের সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। অনেকের পরীক্ষা শেষ হবে জানুয়ারির মাঝামাঝি বা ফেব্রুয়ারিতে। ফলে কয়েক দিনের জন্য অনেকে ৪৭তম বিসিএসের আবেদন করতে পারবেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি কলেজের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাদের ফাইনাল পরীক্ষা শেষে প্র্যাকটিক্যাল ও ভাইভা হতে হতে জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখ পার হয়ে যেতে পারে। এরপর বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করতে পারবেন তারা।
জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হবেন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্নাতক (অনার্স) চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল না শেষ না হওয়ায় তারা বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারবেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত অন্তত ১৪টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের এই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবেন। কয়েকটি বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে দ্রুত ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করার আবেদনও করেছেন তারা।
একটি বিভাগের এক শিক্ষার্থীর ভাষ্য, বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি মূলত তৃতীয় বর্ষ থেকে শুরু হয়। ডিসেম্বরের মধ্যে ফাইনাল পরীক্ষা শেষে তারা বিসিএসে অংশ নিতে পারেন। কিন্তু এবার অনেকে সে সুযোগ পাবেন না। কারণ এবার কয়েকটি বিভাগের শেষ হবে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, পিএসসি একটি নির্দিষ্ট নিয়মে চলে। তবে এবার আন্দোলনসহ সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে আবেদনের সময় বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে তারা। এতে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন। আমাদের পক্ষ থেকে পিএসসির কাছে বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ থাকবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা শেষ হবে আগামী ফেব্রুয়ারি। তারাও ৪৭তম বিসিএস পাচ্ছেন না। একই শিক্ষাবর্ষের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিসিএস পরীক্ষায় আংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন না বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ৪৭তম বিসিএসের আবেদনের সময় বাড়ানো হতে পারে। তবে খুব বেশি দিন বাড়ানো হবে না।
এবার ৩ হাজার ৪৮৭ জনকে ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। আর নন-ক্যাডার পদে ২০১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান জানিয়েছেন, এখন থেকে বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরের। আর বিসিএসের আবেদন ফি ২০০ টাকা করা হয়েছে। তবে প্রতিবন্ধীদের জন্য ফ্রি। সরকারি, আধা–সরকারি সব পরীক্ষার ফিও নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা। বেসরকারি, ব্যাংক ও বীমাতেও এর বেশি নিতে পারবে না।
আরো পড়ুন: ৪৭তম বিসিএসের আবেদন শুরু মঙ্গলবার, যেসব পরিবর্তন এলো
একজন চাকরিপ্রার্থীর আবেদনের বয়স থাকা পর্যন্ত বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে চায় পিএসসি। এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব অনুমোদন হলে ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারবেন চাকরিপ্রার্থীরা। যদিও একজন সর্বোচ্চ চারবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আগামী বছরের মে মাসে ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হতে পারে বলে জানিয়েছে পিএসসি। পরীক্ষার সুনির্দিষ্ট তারিখ, সময় ও নির্দেশনা যথাসময়ে কমিশনের ওয়েবসাইটে জানানো হবে। এবার দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে দুই ঘণ্টায় ২০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা হবে।
এ বিসিএসের মাধ্যমে সাধারণ ক্যাডারে ৬২৭, প্রফেশনাল বা টেকনিক্যাল ক্যাডারে ১ হাজার ৮৩৩, সাধারণ শিক্ষায় ৯১৯ জন, সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ ও সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায় ৩৬ জন ও কারিগরি শিক্ষায় ১২ জন সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাবেন। আবেদনের জন্য চলতি বছরের ১ নভেম্বর সব ক্ষেত্রে প্রার্থীর বয়স ২১ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে হতে হবে।