ডিগ্রি শিক্ষার শেষ নয় বরং শুরু : ইউজিসি চেয়ারম্যান

স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কথা বলছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান এস এম এ ফায়েজ
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কথা বলছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান এস এম এ ফায়েজ  © টিডিসি ফটো

ডিগ্রি শিক্ষার শেষ নয় বরং শুরু বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ বিশ্বিবদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান এস এম এ ফায়েজ। তিনি বলেন, একটি জাতির প্রকৃত শক্তি তার সম্পদ বা অবকাঠামো নয়, বরং শিক্ষিত, নৈতিক ও আত্মবিশ্বাসী তরুণ প্রজন্ম। আজকের স্নাতকরাই সেই শক্তির প্রমাণ। তবে এই পৃথিবী যেমন সম্ভাবনাময়, তেমনি দায়িত্ব, সংবেদনশীলতা ও সততার প্রত্যাশাও করে। ডিগ্রি শিক্ষার শেষ নয়, বরং শুরু। পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ আসবে, আর সেগুলোই সুযোগ।

আজ রবিবার (২১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় পূর্বাচল নতুন শহরে অবস্থিত স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশর স্থায়ী ক্যাম্পাসে সপ্তম সমাবর্তন বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

বক্তব্যের শুরুতে শহীদ শরিফ ওসমান হাদির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে তিনি বলেন, গতকাল থেকে আমাদের অত্যন্ত প্রিয়, সবার প্রিয় শহীদ ওসমান হাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত। শহীদ ওসমান হাদি তার হৃদয়ে বহু মূল্যবান অনুভূতি ও আদর্শ রোপণ করে গেছেন, বিশেষ করে ইনকিলাব, আজাদি এই শব্দগুলো আমার মনে চিরস্থায়ীভাবে গেঁথে আছে।

আরও পড়ুন : মেধার স্বীকৃতি এবার সোনায়, সমাবর্তনের আলোয় উদ্ভাসিত মারুফা-রিতু-জাহিন

বক্তব্যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, প্রায় ২৪–২৫ বছর আগে চারটি পরিবারের সদস্যরা ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে বসে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরবর্তীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই উদ্যোগ থেকেই স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজ এত বছর পর সেই বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবে রূপ নিয়েছে এবং প্রাণবন্ত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের চোখে আত্মবিশ্বাস, ভঙ্গিতে উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং ভবিষ্যতের আশা আমি দেখতে পাচ্ছি। তোমাদের পথচলা সহজ ছিল না; দীর্ঘ পড়াশোনা, পরীক্ষা, সময়সীমা এবং নানা সংশয়ের মধ্য দিয়ে তোমাদের এগোতে হয়েছে। আজ তোমরা নতুন এক অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আরও পরিণত ও প্রস্তুত।

নিজের ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তার সময়ে পৃথিবী ছিল সীমিত, কিন্তু আজকের শিক্ষার্থীদের সামনে বিশ্ব উন্মুক্ত। তারা আরও সাহসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং নিবেদিতপ্রাণ। তিনি বলেন, এই প্রজন্ম একটি নতুন বাংলাদেশের নির্মাণে নিজেদের শক্তি ও দৃঢ়তা দেখিয়েছে।

প্রকৃতির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, যেমন শুঁয়োপোকা থেকে প্রজাপতি হয়ে ওঠে, তেমনি শিক্ষার্থীরাও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মুক্তভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের চিন্তা-চেতনা গড়ে তুলেছে এবং প্রত্যাশা পূরণে প্রস্তুত করেছে।

আরও পড়ুন : এত বড় জানাজা আগে কখনো দেখিনি: আসিফ নজরুল 

তিনি বলেন, প্রতিটি নাগরিকেরই ভালো-মন্দ বিচারের অধিকার রয়েছে, তবে শিক্ষিত ও আলোকিত মানুষের দায়িত্ব আরও বেশি। শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত শুধু তাদের নিজেদের নয়, পরিবার, বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের ওপরও প্রভাব ফেলবে। তাই তাদের দায়িত্বশীল হতে হবে।

নিজের দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্য, নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকতা, প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রতিটি ধাপে তিনি একটি বিষয় উপলব্ধি করেছেন—শিক্ষা মানুষকে গভীর ও স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করে। শিক্ষা শুধু পেশা নয়, চরিত্র, দৃষ্টিভঙ্গি ও সংকটে এগিয়ে যাওয়ার সাহস গড়ে তোলে।

তিনি বলেন, একটি জাতির প্রকৃত শক্তি তার সম্পদ বা অবকাঠামো নয়, বরং শিক্ষিত, নৈতিক ও আত্মবিশ্বাসী তরুণ প্রজন্ম। আজকের স্নাতকরাই সেই শক্তির প্রমাণ। তবে এই পৃথিবী যেমন সম্ভাবনাময়, তেমনি দায়িত্ব, সংবেদনশীলতা ও সততার প্রত্যাশাও করে। তিনি শিক্ষার্থীদের মনে করিয়ে দেন, ডিগ্রি শিক্ষার শেষ নয়, বরং শিক্ষার শুরু। পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ আসবে, আর সেগুলোই সুযোগ।

অভিভাবক ও শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই অর্জনের অংশীদার তারাও। অভিভাবকদের ত্যাগ ও ভালোবাসা এবং শিক্ষকদের ধৈর্য ও নিষ্ঠার জন্য জাতি কৃতজ্ঞ। একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখানোই শিক্ষাদানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আরও পড়ুন : ওসমান হাদিকে উৎসর্গ করা হলো স্টেট ইউনিভার্সিটির ৭ম সমাবর্তন

তিনি স্নাতকদের উদ্দেশে বলেন, জীবনের পথ সবসময় মসৃণ নাও হতে পারে, কিন্তু তোমরা সক্ষম ও প্রস্তুত। তোমরা বাংলাদেশের চেতনা ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যবোধ বহন করছে। তাদের সাফল্য যেন পরিবারে গর্ব, বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান এবং জাতির অগ্রগতির কারণ হয়।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর, ট্রাস্টি বোর্ড, শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান এবং কনভোকেশন আয়োজনকে গৌরবের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেন। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, এই কনভোকেশন উদযাপনে উপস্থিত থাকতে পারা তার জন্য সম্মানের এবং আনন্দের অনুভূতি।

আয়োজিত সমাবর্তনে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি বিভাগের মোট ৬৭২ জনকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে তিনজন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর’স গোল্ড মেডেল, চারজন শিক্ষার্থীকে ভাইস-চ্যান্সেলর সিলভার মেডেল এবং ২০ জন শিক্ষার্থীকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। 

সমাবর্তনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন খান। 

সমাবর্তন উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সভাপতি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। 

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন স্টেট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ডা. এ এম শামীম, ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নওজিয়া ইয়াসমীনসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অ্যালামনাই, রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।

২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এসইউবি) এখন দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে ছয়টি সমাবর্তনে ১৫ হাজারেরও অধিক গ্রাজুয়েট স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালে।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!